প্রতিনিয়ত সে আমাকে ঠকিয়ে গেছে: অপু বিশ্বাস

প্রকাশ | ১০ এপ্রিল ২০১৭, ২১:২৮ | আপডেট: ১০ এপ্রিল ২০১৭, ২২:০২

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

হঠাৎ করে আলোচনার কেন্দ্রে চিত্র নায়িকা অপু বিশ্বাস ও নায়ক শাকিব খান। বেসরকাটি টেলিভিশন নিউজ টোয়েন্টিফোরে এক লাইভ অনুষ্ঠানে হাজির হয়ে অপু তুললেন ঝড়। জানালেন, তার সঙ্গে ২০০৮ সালের ১৮ এপ্রিল বিয়ে হয়েছিল শাকিবের। আর তাদের সন্তানের জন্ম হয়েছে গত সেপ্টেম্বরে, ভারতের কলকাতার একটি হাসপাতালে

অপুর এই সাক্ষাৎকার প্রচারের পর পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচনা-সমালোচনার ঝড়। কী হয়েছিল, অপুর কথা কতটা ঠিক, শাকিবের পিতৃত্বের স্বীকারোক্তি আর অপুর দায় নিতে না চাওয়ার কারণ নিয়ে চলছে বিস্তর আলোচনা। অপু তার সাক্ষাৎকারে কী কী বলেছিলেন, সেটা তুলে ধরা হলো পাঠকদের জন্য।

শুরুতেই উপস্থাপক অপুকে পরিচয় করিয়ে দিয়ে তার কথা বলতে অনুরোধ করেন। আর অপু শুরু করেন তার কাহিনি।

অপু বিশ্বাস: দশ মাসের কষ্টের ফল। আমি কারো কাছে ছোট হয়ে যাব। আমাকে ছোট করা হবে। এটা আমার কাম্য ছিল না। আজকে আমার সব কিছু আমার জীবন দিয়ে আগলায়ে রাখছি। তার বিনিময়ে ছোট্ট একটা সন্মান চাইছি, আর কিছু চাইনি।

উপস্থাপক: সবাই তাই চায়।

অপু বিশ্বাস: আপনার আর কিছু বলার আছে?

উপস্থাপক: আপু আপনিই বলুন। দর্শক আসলে আপনার কথা শুনতে চাচ্ছে। আপনে কেন এতটা ভেঙে পড়েছেন। আসলে কি হয়েছে?

অপু বিশ্বাস: আমার ছেলে আছে। সাকিব আর আমাদের একটা সন্তান আছে। সেই বাচ্চাটাকে আমি অনেক স্ট্রাগল করে জন্ম দিছি। সাকিব আমার পাশে ছিল না। আমাকে টাকা দিয়েছে, কোন মানুষ যদি অসুস্থ থাকে তাকে, টাকা দিয়ে কখনও যাওয়া যায় না। আমার ও হওয়ার সময় আমি চাইছিলাম, একবারের জন্য হ্যালো বলি। আমি কি অন্যায় করছিলাম? আমিতো সাকিবের ভালো চাই। এখনও চাই, আমি ছেড়ে আসছি। আমি নিজেকে অনেক সাফারার করছি। ওর মা আছে, তারওতো বোন আছে, তারাও তো মেয়ে মানুষ। তাদেরকে একবার জিজ্ঞাস করুক। আমার মতো এ রকম কষ্ট করে কি না? আমার কি অন্যায়, আমি নায়িকা। আমার অন্যায় আমি সাকিবকে অনেক সাপোর্ট করেছি। এটাই কি আমার অন্যায়? আমি অনেক সাপোর্ট করেছি। আমি ১০ মাস আড়ালে গেছি। আমাকে নিয়ে অনেক বিদ্রুপ মন্তব্য হয়েছে, আমি গায়ে লাগাই নাই। আমি জানি, আমার সাকিবকে ঠিক রাখতে হবে।

উপস্থাপক: আপনার কোন অন্যায় নাই আপু। আপনি সাকিব খানকে ভালোবেসেছিলেন। আমরা সবাই সেটা জানি এবং আপনার ভালোবাসার মর্যাদা দেয় নাই, সেই দোষটা আপনার নয়।

অপু বিশ্বাস: প্রতিনিয়ত সে আমাকে ঠকায়ে গেছে। আমিতো তাকে ঠকাইনি। আমার সাথে বিয়ে করেছে। আমাকে বলেছে ওকে লুকায়ে রাখো। আমি প্রত্যেকটা মুহূর্ত লুকায়ে রাখছি। আমার প্রেগনেন্সি, আমাকে বলছে লুকায়ে রাখ, আমি এক মিনিটে আমার প্রাণের ছবি ‘বসগিরি’ সেই ছবিটা ছেড়ে দিয়ে গেছি এক মিনিটে। আমি একটুও শব্দ করিনি। আমি ঢাকায় আসছি আজকে পাঁচ মাস হয়েছে। কেউ বলতে পারবে না আমি কারো সাথে এইভাবে কথা বলছি। কিন্তু কেন সাকিব আমাকে ছোট করল। আমাকে কেন ছোট করবে, আমিতো ওকে কোনদিন ছোট করিনি, আমি ছোট করার চেষ্টাও করিনি। আমি সাকিব খানকে সাপোর্ট করে গেছি, আমাকে কেন সে ছোট করবে? আমি কি অন্যায় করেছি তার কাছে, আমিতো সাপোর্ট দিয়ে গেছি।

উপস্থাপক: আপনি কোন অন্যায় করেননি। এটা কেন গোপন করেছ, আপনার কি মনে হয়?

অপু বিশ্বাস: আমি চেয়েছি যে, সাকিবের ক্যারিয়ার ভালো হোক। কিন্তু আমাকে ছোট করে না।

উপস্থাপক: আপনার ক্যারিয়ার?

অপু বিশ্বাস: আমি আমাকে নিয়ে চিন্তা করিনি। আমি চেয়েছি ও ভালো থাকলে আমি ভালো থাকব। কিন্তু যে মানুষ আমি তার ভালো চাচ্ছি, সে আমাকে ছোট করে দিয়েছে। আজকে একটা নিউজ আসছে, সেই নিউজে... আমিতো আশিটা ছবি করেছি, আমাকে কেন ছোট করা হবে, আমাকেও তো জানে, আমি কেন ছোট হবো? আমি কেন ছোট হবো এ কথাটা আমাকে উত্তর দিক। এখন যদি সে বলে যে তুমি ছোট হওনি। কিছুদিন আগে কত নিউজ হয়েছে, তার মধ্যে কি এ বিষয়টা ছোট হওয়ার মধ্যে পড়ে না?

আমার ওর প্রতি কোন অভিযোগ নেই। যেহেতু সন্তান, তাকে নিয়ে সুখে শান্তিতে থাকতে চাই। আমি অন্যায়কারী, সন্তান তো অন্যায়কারী না। তার জন্য আমি তার মর্যাদা মা হয়ে দিতে চাই।

উপস্থাপক: আপু আপনি বলেছেন আপনার সন্তান যখন হয় তখন সাবিক আপনার পাশে ছিল না, ওনি কোথায় ছিলেন, আপন জানেন কেন ছিলেন না আপনার পাশে।

অপু বিশ্বাস: উনি স্যুটিং করছিলেন। আমার বাচ্চা হয়েছে দেশের বাহিরে, ইন্ডিয়াতে হয়েছে। সে তখন বাংলাদেশে ছিলো।

উপস্থাপক: উনি দেখতে যাননি?

অপু বিশ্বাস: সে দেখতে যায়নি। বাংলাদেশে আসার পর সন্তানকে দেখতে গিয়েছে। কিন্তু আমাকে মানসিকভাবে সাপোর্ট করে নাই। আমি পাঁচমাস হলো দেশে এসেছি। যখন সে দেখতে গেছে তখন বাচ্চার বয়স ছিল তিন মাস।

উপস্থাপক: বাচ্চা দেখে কি বলেছিলেন উনি?

অপু বিশ্বাস: হ্যাপি সে, কিন্তু সেটা ঘরের মধ্যে, ঘরের বাহিরে না।

উপস্থাপক: এই ব্যাপারটাকে আপনি কীভাবে দেখেন?

অপু বিশ্বাস: আমি অনেক সহ্য করেছি, আমার কথা শুনে আর দশটা মেয়ের সাথে মিলায়ে দেখেন, আমি আর কত সহ্য করব? ওর বোন আছে, ওর বোনও বিবাহিত, ওর বোন করবে? একবার ওর বোনের কাছে উত্তর নিয়ে এসে আমাকে বলুক। ওর বোন করবে? বিন্দু পরিমাণ করবে? আমি তো মানুষ, আমি মেয়ে মানুষ। আমার ভিতরেও ভালো মন্দ আছে। আমি কত সহ্য করব?

উপস্থাপক: সাকিব খানের ভাই বোন জানেন বিষয়টা যে, আপনি বিয়ে করেছেন, আপনার বাচ্চা আছে?

অপু বিশ্বাস: হ্যাঁ, ওর ফ্যামিলির সবাই জানেন। আমি তো ওর বাসাতেই থাকতাম। বাচ্চা আছে, ওর ফ্যামিলি থেকে এসে দেখে গেছে।

উপস্থাপক: এই ব্যাপারে উনাদের কোন বক্তব্য নেই?

অপু বিশ্বাস: আমি জানি না উনাদের কি বক্তব্য।

উপস্থাপক: আচ্ছা আপনার সন্তান কি এসেছে আপনার সাথে?

অপু বিশ্বাস: হ্যাঁ, আমার সাথে ও এসেছে।

উপস্থাপক: আমরা কি তাকে দর্শকদের সামনে উপস্থাপন করতে পারি?

অপু বিশ্বাস: হ্যাঁ, অবশ্যই করতে পারেন।

উপস্থাপক: দর্শক আমরা অপু বিশ্বাসের সন্তান.....

অপু বিশ্বাস: (উপস্থাপককে থামিয়ে) বলেন, অপু বিশ্বাস আর সাকিব খানের সন্তান।

উপস্থাপক: আপু আপনি বলেছেন আপনার এবং শাকিব খানের বাচ্চা। নাম কি ওর?

অপু বিশ্বাস: আব্রাহাম খান জয়।

উপস্থাপক: আপনি বলছেন আপনাদের এই শিশুকে শাকিব খান দেখতে আসেনি?

অপু বিশ্বাস: সে আসে বাসায়। এসে দেখে যায়। তাকে আদর করে। তাকে নিয়ে ঘুরে ফিরে। সব কিছু করে। কিন্তু আমার সঙ্গে কথা বলে না।

উপস্থাপক: কিন্তু আপনার সঙ্গে কেন কথা বলেন না? আপনি বলছেন আপনি গোপনে বিয়ে করেছেন, শাকিব খান আপনার বিয়ে গোপন রাখতে বলেছে।

অপু বিশ্বাস: এটা আসলে আমি চাচ্ছিলাম না যে ও ঝামেলায় পড়ুক। ও রিসেন্টলি একটি বিতর্ক আমাকে নিয়ে সৃষ্টি হয়েছিল ওর এক হিরোইনকে নিয়ে।  সেই বিতর্কে আমি তাকে বলেছিলাম একটা জুনিয়র আর্টিস্ট কিছু বলবে সে ব্যাপারটি উচিত ছিল তার খেয়াল রাখা। কিন্তু সে তা করেনি। তার মানে সে আমাকে সম্মান করেনি। আমার ছোট ছেলে কোথায় বড় হচ্ছে, কি করছে সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়ার অধিকার তার নেই।

উপস্থাপক: কোন নায়িকার সঙ্গে?

অপু বিশ্বাস: আমি সেই নায়িকার নাম উল্লেখ করতে চাচ্ছি না।

উপস্থাপক: আপু, আপনি নাম মেনশন না করলেও আমরা অনেক গুঞ্জব শুনেছি। অনেক গুঞ্জন শুনেছি। আমরা শুনেছি নায়িকা বুবলির সঙ্গে তার বাকবিতণ্ডা ছিল। আপনি এ বিষয়ে কিছু বলতে চান?

অপু বিশ্বাস: না আমি এ বিষয়ে কথা বাড়াতে চাই না।

উপস্থাপক: আপু আপনি বিয়ে কখন করেছেন। আমরা দেখি চলচ্চিত্র তারকারা অনেক সময় বিয়ে গোপন রাখে। তারা মনে করে এটা তাদের ক্যারিয়ারে প্রভাব ফেলবে। সেজন্য বিয়ের ব্যাপারটা গোপন রাখে। আপনার বাচ্চা হওয়ার পরেও সে ব্যাপারটা কেন গোপন রাখলেন?

অপু বিশ্বাস: শুধু ওর কারণে। ওর ভালোর জন্য। ওর ভালোটা আমি চেয়েছি। কিন্তু ও আমাকে ছোট করে দিয়েছে।

উপস্থাপক: বিয়ের কথা গোপন রাখতে উনি না করেছেন আপনাকে?

অপু বিশ্বাস: ও না করার চেয়ে বড় কথা হলো আমি চাইনি ওর প্রবলেম হোক। আমি এখনও চাই না ওর প্রবলেম হোক। কিন্তু আমি যখন ছোট হয়ে যাই, তখন তো তার কিছু করতে হবে। আজকে আমার ছোট হওয়ার পেছনে এই বাচ্চাটাও আছে। ও কি দোষ করেছে? ওর অন্যায়টা কি? একদিন তো শাকিবও ছোট ছিল। ওর মা-বাবার কোলে ছিল। সামাজিক মর্যাদা পেয়েছে। তবে ওর অন্যায়টা কোথায়? আমি দর্শকদের শুধু একটা কথাই বলতে চাই যে, ১০টা মাস আমি ছিলাম না, সেই ১০ মাসের কারণে আমাকে অপরাধী করবেন না, আমি আবারও কাজ করতে চাই। আপনারা অবশ্যই আমার সন্তানের জন্য দোয়া করবেন। ও যেনো অনেক ভালো থাকতে পারে। মানুষের মত মানুষ হতে পারে। আমি যেনো ওকে মানুষ করতে পারি।

আমি অনেক কষ্ট সহ্য করেছি, অনেক। অনেক অপমানিত, লাঞ্ছিত হয়েছি, কিন্তু মুখ ফুটে কিছু বলিনি। আমি আজকেও বলতে চাইনি, কিন্তু আজকে আমাকে নিতান্তই ছোট করা হয়েছে। আর যদি বলা চলা যে, শাকিব হিরো, তবে সেখান থেকেও সে আমাকে উঁচু করে রাখতে পারত।  কিন্তু কখনো উঁচু করে রাখেনি। আজকে আমাকে ছোট করা মানে ওকে ছোট করা। ইনফিউচার যখন ও আমাদের কথা বলবে, তখন মানুষ বলবে ওই সময়টাতে শাকিব তোমায় দাম দেয়নি। আমি এতদিন আট বছর চুপ ছিলাম। কারণ আমি তখন একা ছিলাম, আজকে আমি এজন্যই চুপ নেই যে, ওর (সন্তান) ভাল দেখার দায়িত্ব আমার। আমার সাথে ও (সন্তান) আছে। আমি মনে করি শাকিব যদি এই প্রোগামটা দেখে থাকে, ওর দায়িত্ব হবে দূর থেকে ওর জন্য দোয়া করতে। আসলে সে বাবা। আর ও (শাকিব) তো জন্ম নিয়েছে কারও কোল থেকে।  ও তো কাউকে বাবা ডাকে। ও জানে তো আমাকে আমার বাবা আমার পরিবার কি রেসপনসিবিলিটি দিয়ে বড় করেছে। না হলে আজকে আমি শাকিব খানের বউ হতে পারতাম না। সেম থিং ও তো অনেক শিশু ওর সামনে কিন্তু সামনে কোন ভালোমন্দের কোন বুঝ নাই। ওকে ঠকানো উচিত হবে না। আমি ওকে ঠকাতে পারিনি। আমি আশা করব বাবা হয়ে শাকিব যেন ওকে না ঠকায়।

উপস্থাপক: আপু আপনি বারবার বলছেন যে, আপনাকে অনেক অপমান, টর্চার করা হয়েছে এটা আপনি কেন বলছেন? কেমন টর্চার করা হলো।

অপু বিশ্বাস: ওটা যেটাই হোক, ওটা আমাদের দুজনের ব্যাপার। সেটা কথা না। ১১ বছর আমাদের সম্পর্কের পরও তো আমি তো ওকে হেল্প করেছি। আমাকে ছোট না করলেই পারত। আজকে তো আমাকে হেল্প করতে পারত।

উপস্থাপক: শাকিব খান শেষ কবে আপনার সন্তানকে দেখতে এসেছিলেন?

অপু বিশ্বাস: গত পরশু দিন রাতে।

উপস্থাপক: কী বলেন তিনি?

অপু বিশ্বাস: এসেছিল, ওকে আদর করে গেল। ইচ অ্যান্ড এভরিথিং যত খরচ লাগে, লাখ লাখ টাকা ওকে (সন্তান) দিয়ে গেল।

উপস্থাপ ক: শুধু টাকা দেয়া বা খরচ দেয়া কি একজন বাবার দায়িত্ব? আপনার কি মনে হয়?

অপু বিশ্বাস: এটা ওর ব্যাপার। সত্যিই আমার কিছু বলার নেই।

উপস্থাপক: আপনি কোন প্রশ্ন করেননি? কেন বাবার দায়িত্ব পুরোপুরি পালন করা হচ্ছে না?

অপু বিশ্বাস: পৃথিবীতে অনেক লোক আছে, তারাও তো বাবা? তারা রাত শেষে তাদের ছেলেকে নিয়ে ঘুমায়। তার (শাকিব) বোন, তার বিবাহিত জীবন, সে তো তার স্বামীকে নিয়ে থাকে। আমি কেন দূরে, আমি ওকে (সন্তান) পেটে নিয়ে দূরে। যখন আমি ডক্টরের কাছে সিজারে রুমে গিয়েছিলাম, ডাক্তারি বন্ডে আমি সাইন করেছি। ডাক্তার বলল, তার ৩৫ বছরের অভিজ্ঞতায় এই প্রথম রোগীকে বন্ডে সাইন করতে দেখল। আমার কি অন্যায়। আমি কি অন্যায় করেছি। আজকে কেন আমাকে এত শাস্তি পেত হল, আমি তো মানুষ। আমার কি চাওয়া পাওয়া নেই? টাকা দিলেই কি মানুষের সেবা হয়ে যায়? কিছুদিন আগেও ও আসতো। কিন্তু এখন ওর জ্বর। কিন্তু আমার বাচ্চার স্টিল নাউ জ্বর। ওরা জানে, ভ্যাকসিনের জ্বর। ওর কাছে ওর বাসায় উল্টা পাল্টা জানানো হয়।

উপস্থাপক: আপনি তার সঙ্গে যোগাযোগ করেন না?

অপু বিশ্বাস: ওর (শাকিব) দুইজন ফ্যামেলি মেম্বার আছে। তাদের সঙ্গে কথা বলা হয়। কালকে (শাকিব) ওর সঙ্গে সরাসরি কথা বলেছি।

উপস্থাপক: বাসায় যখন আসে বাচ্চা দেখতে তখন কথা বলেন না?

অপু বিশ্বাস: সে দেখে তার বাচ্চাকে, আদর করে কি বলার আছে? আমার অনেক কিছু বলার হয়ে গেছে। সত্যি আমি কিছু বলতে চাই না।

উপস্থাপক: আপু আমরা শাকিব খানের সঙ্গে ফোনে কথা বলতে চেষ্টা করবো। চাচ্ছি আপনি আমাদের সঙ্গে থাকুন। আমরা যত দ্রুত সম্ভব তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে চেষ্টা করছি। আমরা চাই আপনি তার সঙ্গে কথা বলেন। দর্শক জানুক আমরা তার সঙ্গে কথা বলছি। তারও কিছু বলার আছে। আপনি আজ এতসব তথ্য দিয়েছেন যা দর্শক জানে না। প্রথমবার আমরা জানতে পেরেছি, আপনাদের বিয়ে হয়েছে, আপনাদের একটি সন্তান আছে। এই বিষয়গুলোকে উনি কীভাবে ব্যাখ্যা করবেন আমরা জানতে চাইবো। আপু আমরা আরেকটু কথা বলি, আপনি বলেছেন আপনাদের যখন সন্তান হয় তখন তিনি দেখতে আসেননি।

অপু বিশ্বাস: তখনও শুটিংয়ে ব্যস্ত ছিলেন?

উপস্থাপক: আপনার কথায় আমরা বুঝতে পারছি আপনি অনেক ছাড় দিয়ে গেছেন। আপনার যখন বিয়ে হয়েছে তখন তা গোপন রাখতে বলা হয়েছে। আপনি সেটা গোপন রেখেছেন। তার ক্যারিয়ারের কথা ভেবেছেন। নিজের ক্যারিয়ারের কথা ভাবেননি। যখন আপনার বাচ্চা হলো তখন আপনি বললেন তার আরও ভালো হোক। তার ক্যারিয়ারের কথা বলে আপনি কিছুই বলেননি। এটা আপনি কেন করেছেন?

অপু বিশ্বাস: আমি এখন ভাবছি আমার ছেলের কথা। আমি এখন যদি এই প্রতিবাদটা না করতাম এই কথাটা না বলতাম তাহলে ইন ফিউচার ওকে নিয়ে যখন কথা হবে তখন আমি হাস্যকর হয়ে যেতাম। এই কথাটি আমি শাকিবকে বারবার বলেছি, এমন কোনো ঘটনা ঘটিও না যাতে আমাকে ছোট হতে হয়। কারণ এটাইতো সংসার। সংসার তো দুজনকেই ঘিরে হয়। সংসার তো একা হয় না।

উপস্থাপক: আপনি গর্ভধারণ করেন সেই পুরোটা সময় দেশের বাইরে ছিলেন?

অপু বিশ্বাস: হ্যাঁ, আমি একা ছিলাম।

উপস্থাপক: সে সময় কি উনি আপনার খোঁজ খবর নিয়েছেন?

অপু বিশ্বাস: তখন বসগিরি, শুটার, শিকারি ছবি নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন।

উপস্থাপক: আপনি বলছিলেন যে আপনার স্বপ্নের চলচ্চিত্র বসগিরি। আপনি সেটা ছেড়ে দিয়েছেন। এতটা ছাড় আপনি কেন দিয়েছেন? আমরা জানতে চাই।

অপু বিশ্বাস: এটা ওর কারণে।

উপস্থাপক: আপনার কি মনে হয় না এত ছাড় দেয়ার কারণে বিষয়গুলো এত দীর্ঘ হয়েছে?

অপু বিশ্বাস: হ্যাঁ এটা এখন মনে হয়েছে। এটা আমার অনেক আগেই করার দরকার ছিল। এই জীবনে আমি ছাড় দিয়ে অনেকটা ঠকে গিয়েছি। ও (ছেলেকে দেখিয়ে) মাসুম বাচ্চা তো আমি ওকে ঠকাতে চাই না। আমি ওর পাল্লাটা ভারী করতে চাই না। আমার তো ঠকের পাল্লা অনেক ভারী হয়ে গিয়েছে। আমি ধৈর্য্য ধরতে ধরতে আসলে আমি জানি না ধৈর্য্যের সীমা কতটা।

উপস্থাপক: শাকিব খানের পরিবারের কথা বলছেন? আপনি বলছেন তারা বাচ্চাকে দেখতে আসে। তারা আপনাদের সম্পর্কের কথা কি ভাবছে?

অপু বিশ্বাস: তারা পজেটিভ। তার বাচ্চাকে নিয়ে পজেটিভ। আমাদের সম্পর্ক নিয়ে তারা পজেটিভ।

উপস্থাপক: তাদের কোনো বক্তব্যতে কি তাদের কিছু যায় আসে না?

অপু বিশ্বাস: না, তারা কোনো বক্তব্য পেশ করে না। তারা শাকিবকে এক্সকিউজ করে চলে। বা ভয় পায়। এমন কিছু একটা।

উপস্থাপক: আপনি বলছেন শাকিব খানের বোন আছে। তিনি বিবাহিত। তার সন্তান আছে।

অপু বিশ্বাস: হ্যাঁ আছে। তার বেবি ও আমার বেবি এক মাসের ছোট বড়।

উপস্থাপক: শাকিব খানের মা আছেন? তিনি দেখছেন আপনি ত্যাগ শিকার করছেন?

অপু বিশ্বাস: আমি ত্যাগের শেষ সীমায় চলে গেছি। তার বিনিময়ে কিছু পাইনি। কিন্তু আমি এখন আর ধৈর্য্য ধরে রাখতে পারছি না।

উপস্থাপক: হঠাৎ কি হয়েছে যে আপনি আর ধৈর্য্য ধরে রাখতে পারছেন না?

অপু বিশ্বাস: আমার কাছে শাকিবের কমিটমেন্ট করা ছিল। রিসেন্ট একটা নিউজ এসেছে, রঙবাজ একটা ছবি। এই ছবিতে বুবলি নামের মেয়েটা, ওর সঙ্গে আপাতত আর কাজ করবে না। আমি এই ধরনের অনেক নিউজ দেখেছি। সে বুবলির সঙ্গে কাজ করবে না, এই না, সেই না। হঠাৎ আজ নিউজ দেখলাম সে বলছে, ‘শাকিব আর আমি ভালো জুটি’। সেটা ফেস্টিভ ডেতে আসছে। সে বলছে বুবলির সঙ্গে নাকি তার ভালো জুটি। ঈদে সে এই ছবিটি করছে। এই ছবির পরিচালক সুন্দর করে একটা স্ট্যাটাস দিয়েছে। সে লিখেছে, কিংখান এবং বসগিরি খ্যাত নায়িকা বুবলি।সে এখানে অ্যাড হচ্ছে। এটা দেখে, এগুলো দেখে আমার সঙ্গে শাকিবের প্রায় এক দেড়মাস ধরে বাকবিতণ্ডা হচ্ছে। আমি বলি, ওর সঙ্গে অভিনয়টা করা যাবে না। ওই মেয়েটা তোমার সঙ্গে যেভাবে এক্সকিউজ করছে তাতে করে মনে হচ্ছে এটা কেনো হবে? তুমি (শাকিব) তো জানো আমাদের বাচ্চা আছে। ওই মেয়েটা কোনো তোমার সঙ্গে এত গা মেশামেশি করে। পাবলিক তো জানে জানে না যে আমাদের বিয়ে হয়েছে, বাচ্চা আছে। ও যদি এমন করে তবে ফিউচারে প্রবলেম হয়ে দাঁড়াবে। কারণ আমরা মিডিয়ার মানুষ, যেটা শুনি, যেটা রটে, সেটা কিন্তু আমরা সত্যি ভেবে নেই। ওর সঙ্গে তোমার এত ইনটেমেসি শুনছি। ওটা থেকে দূরে থাকলে বেটার হয়।

সে (শাকিব) বলল, হ্যাঁ, কাজ করেছি এই সেই। একদিন দেখি (বুবলি) তার ফেসবুকে স্টাটাস দিয়েছে ফ্যামিলি টাইম। সেই ছবিতে শাকিব খানের সঙ্গে তাকে দেখা যায়। এই ছবিটা দেখে আমার খারাপও লাগে। আমি এই ঘটনায় বুবলির সঙ্গে রেগে গিয়ে খারাপ ব্যবহারও করেছি। এখন লাইভে এসে আমি তার কাছে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। এসব ঘটনায় মনে হচ্ছে শাকিব বুবলিকে প্রেফার করছে।

গত ১০-১২ দিন ধরে একটা গসিপিং হচ্ছে, শাকিব তার নতুন সিনেমায় নতুন নায়িকা পছন্দ করব। আমার বিশ্বাস ছিল সে বাংলাদেশের নুসরাত ফারিয়া, কলকাতার নুসরাত, কিংবা শায়ন্তিকাকে নায়িকা হিসেবে নেবে। কারণ শাকিব তার পরিবারকে ভালোবাসে। এসব নিয়ে আজ সকালে আমি যখন পত্রিকাতে নিউজটা দেখে তখন শাকিবের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেছি। কিন্তু সে রেসপন্স করেনি।

উপস্থাপক: আপনি এসব ব্যাপারে কখনো বুবলির সঙ্গে কথা বলেছেন?

অপু বিশ্বাস: না, আমার তো তার সঙ্গে কথা বলার প্রয়োজন নেই। আমার ব্যাপারটা তো তাকে (শাকিব) জানানো দরকার নেই। বুবলি কেন জানবে? আমি তো বুবলিকে চিনি না। আমার বসগিরি সিনেমাটা ওর কারণে করতে পারিনি। ও (শাকিব) যাকে দরকার নিয়েছে। আমি মনে করছি, সে কাজ করছে। ভালোই কাজ করছে। তবে সে আমার কাজগুলো করেছে। আমার মাইনাস পয়েন্ট ছিল আমার বেবি। আর না হলে আমি তখন শুকনাই ছিলাম। কিন্তু একটা মেয়ে যখন বেবি কনসিভ করে তখন সে কাজ করতে পারে না। 

অপু বিশ্বাস: মা্নুষ বলবে এতদিন কোথায় ছিলেন আপনি? একজন মা হিসেবে হিসেবে আমার ছেলেকে সবাইকে দেখা উচিত। একজন বউ হিসেবে সমস্ত মেয়ের সঙ্গেই ওর যতো ভালো রিলেশনই থাকুক না কেন, সবার জানা উচিত। একচুয়েলি শাকিবের আইডেনটিটিটা কী? শাকিব খানের সঙ্গে আমার পরিচয় কী। কে কার সঙ্গে কাজ করবে কে কাকে নিয়ে ভাল ও কে কাকে নিয়ে সুখে থাকবে এটা ওর পয়েন্ট। নট মাই পয়েন্ট।

উপস্থাপক: আপু কাজের বিষয়টি কিন্তু আলাদা। আপনি বললেন যে, পারসোনাল অনেক রিলেশনের কথা আপনি শুনেছেন। আপনি শুনেছেন বুবলির সাথে তিনি অনেকটা ফ্যামিলি সময় কাটাচ্ছেন।  এই ব্যাপার নিয়ে তার সঙ্গে কখনো কথা বলেননি?

অপু বিশ্বাস: আমি বলেছি। সে বলেছে, বুবলিকে সে জাস্ট দাওয়াত দিয়েছে, সে এরপর আর কোন কথা থাকে না।

উপস্থাপক: তারপর তো আমরা অনেক গুজব শুনেছি। আপনারও কি মনে হয় এগুলো শুধু গুজব। এগুলো নিয়ে তার সঙ্গে কখনো কথা বলেননি? 

অপু বিশ্বাস: আমি জানি না।

উপস্থাপক: আপনার কখনো জানতে ইচ্ছা করেনি?

অপু বিশ্বাস: করে না। কারণ আমি চাই যে যেটা নিয়ে সুখে থাকে, তাকে থাকতে দেয়া উচিত। আমাকে আমার মতো থাকতে দিলেই হয়। কিন্তু আজকে যে ইস্যুটা দাঁড়িয়েছে, এতে আমাকে ছোট করা হয়েছে।

উপস্থাপক: কেন আজকে আপনার এমন মনে হয়েছে?

অপু বিশ্বাস: এই জন্যই মনে হয়েছে যে, সে আমাকে কথা দিয়ে সে আর তার সঙ্গে কাজ করবে না। আপাতত কাজ করবে না। আজকে সে আমাকে ছোট করেছে। আমি তার কথা মতো বিভিন্ন জায়গায় নিউজ করিয়েছি। তাহলে তো আমার কথার ভ্যালু থাকে না।

উপস্থাপক: আপনি বলতে চাচ্ছেন শাকিব খান বুবলিকে নিয়ে আর কাজ করবে না?

অপু বিশ্বাস: করবে। তবে আপাতত ছবি করবে না। কারণ আমার সঙ্গে বুবলির সম্পর্ক খারাপ হয়েছে। বাক-বিতণ্ডা হয়েছে। সে আমাকে খারাপ ব্যবহার করেছে। তাই বলেছে। তবে হয়তো সেই সুবাদে সে বলেছে। আামকে স্বান্তনা দেয়ার জন্য হয়তো বলেছে।

উপস্থাপক: আপনি বলেছেন আপনাদের বিয়েতে একজন প্রডিউসারও ছিলেন। তো তারা কি আপনাদের মাঝে মধ্যস্থতা করেননি?

অপু বিশ্বাস: উনি আমার কাছের বড় ভাই। উনার নাম মামুনুর রহমান মামুন। একটা মুভি তৈরি করেছেন। তিনি আমাদের ভাল চান। শাকিবের ভাল আমরা সবাই চাই। চলচ্চিত্রের স্বার্থে।

উপস্থাপক: আপনিইতো চলচ্চিত্রে ভাল কাজ করেছেন। আপনাকে নিয়েও তো স্বার্থ ছিল।

অপু বিশ্বাস: ছিল। ঠিক আছে আপু। আমি আর কথা বাড়াতে চাচ্ছি না। আমার ছেলেটা ছোট। আমার মনে হয় তাকে এখন বাসায় নিয়ে যাওয়া উচিত।

উপস্থাপক: আপনি তাকে নিয়ে কি ভাবছেন? আপনার ভবিষ্যত নিয়ে কী ভাবছেন?

অপু বিশ্বাস: আমি কাজ করছি। দর্শকের কাছে আমি দোয়া চাই। আমার ছেলেকে আমি শেখাবো ওর দ্বারা কোন মেয়ে যেন প্রতারিত না হয়।

উপস্থাপক: আপনি বললেন আপনি চলচ্চিত্রে ফিরতে চান। নতুন কোন চলচ্চিত্রের অফার পেয়েছেন?

অপু বিশ্বাস: নতুন কোন চলচ্চিত্রের কথা হয়নি। এক জনের সঙ্গে কথা হয়েছিল। সেটাতেও শাকিব থাকার কথা ছিল। জানি না কী হয়। এক দেড় মাস আমি আামর বাচ্চার দিকে সময় দেব। ফিট হবো। এরপর আমি ভাববো কী করবো। দেখি কি হয়?

উপস্থাপক: বাচ্চা কার মতো হয়েছে? দেখতে কেমন হয়েছে? সবাই কী বলে। আপনার কী মনে হয় কার মতো দেখতে হয়েছে?

অপু বিশ্বাস: আমার বাচ্চা অনেক ভালো হয়েছে। আমি কীভাবে বলবো? এটা দর্শক বলবে। এটা আপনারা বলবেন। ওর এটিচিউড ওর বাবার মতো। হাত পাগুলো ওর মতো। আমি আর কিছু বলতে চাচ্ছিনা।

উপস্থাপক: আপনার কেমন লাগে?

অপু বিশ্বাস: আমি অনেক সাকসেস। একজন মা হিসেবে আমি গর্বিত।

উপস্থাপক: আপনার ভব্যিষত নিয়ে কী ভাবছেন? আপনার নিরাপত্তার দিকটি নিয়ে কথা বলছি। এটা নিয়ে কি ভাবছেন?

অপু বিশ্বাস: ভেবেতো কোন কাজ হয় না। কী হবে কী হবে না, কিছু বলতে পারছি না। আমি কিছু ভাবছি না। এখন আর সময় দিতে চাচ্ছি না।

উপস্থাপক: দর্শকদের জন্য আর কিছু বলার নেই?

অপু বিশ্বাস: না আর কিছু বলার নাই। দর্শকদেরকে বলবো আমার জন্য দোয়া করবেন। আমার ছেলের জন্য দোয়া করবেন।

উপস্থাপক: ঠিক আছে আপু, আপনাকে ধন্যবাদ।

ঢাকাটাইমস/১০এপ্রিল/এমইউ/এজেড/জিএম/ডব্লিউবি