চৌত্রিশে কণ্ঠশীলন
২ বৈশাখ ১৪২৪, শনিবার বিকাল ছ’টা। কণ্ঠশীলন কার্যালয়, এলিফ্যান্ট রোডে সাহিত্যের বাচিক চর্চা ও প্রসার প্রতিষ্ঠান কণ্ঠশীলনের চৌত্রিশে পদার্পণ উৎসবের আয়োজন করা হয়।
কণ্ঠশীলন এই যাত্রা শুরু করেছে ১৩৯১ সালের ২ বৈশাখে (১৯৮৪ সালের ১৫ এপ্রিল)। সুবাচন চর্চার নিয়মিত পাঠক্রমের মধ্য দিয়ে এ-পর্যন্ত প্রায় আট হাজার তরুণ-তরুণীকে কণ্ঠশীলন বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের প্রাথমিক তথা তন্নিষ্ঠ পাঠ দিয়েছে। অগ্রসর এবং গভীর আস্বাদের আগ্রহীরা প্রতিষ্ঠানে স্থায়ীভাবে যুক্ত হয়ে নিরন্তর অনুশীলনের ফল হিসেবে উপহার দিয়ে চলেছেন আবৃত্তি অনুষ্ঠান, শ্রুতিনাট্য ও মঞ্চনাটক।
কণ্ঠশীলন কেবল কিছু মঞ্চ ও মাইক্রোফোন-সফল পারফর্মার-মাত্র গড়তে চায়নি। এখানে ভাষাকে ভালোবেসে যত মানুষ লগ্ন হয়েছে, একে অপরে ঘন হয়ে রয়েছে জীবন ও সমাজের ধারক বৃত্তিগুলিকে, তারা সর্বতোমুখী বিকাশের চর্চায় নিরত।
‘ওরে গৃহবাসী খোল দ্বার খোল’ সম্মেলক গানের মাধ্যমে কণ্ঠশীলনের চৌত্রিশে পদার্পণ উৎসবের উদ্বোধন হয়। কণ্ঠশীলনের নিয়মিত, অনিয়মিত সদস্য ছাড়াও চারুনীড়ম, উদ্ভাসন, কল্পরেখা, খামখেয়ালী আড্ডা, দৃশ্যকাব্য, নাটুকে, হরবোলা, ঢাকা পদাতিক, মাইম আর্ট, স্বরবৃত্ত, বহ্নিশিখা, শিল্পের বাড়ি’সহ বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধিরা কণ্ঠশীলনের তেত্রিশ বছর পূর্তি উপলক্ষে শুভেচ্ছা জানান। একসঙ্গে কাজ করার অভিপ্রায় ব্যক্ত করেন। শিরিন ইসলামের উপস্থাপনায় কথা, আবৃত্তি ও গানে মূখর হয়ে ওঠে পুরো অনুষ্ঠান। কণ্ঠশীলনের সাহিত্য সংস্কৃতিতে অবদান নিয়ে আলোচনা করেন গাজী রাকায়েত, কবি এএফ আকরাম হোসেন, খালেক মল্লিক, আহসান দিপু, ইকবাল খোরশেদ, তপন বাগচি, তামান্না তিথি প্রমূখ।
বক্তারা বলেন, কণ্ঠশীলন শুধু শুদ্ধ উচ্চারণ ও আবৃত্তি শিক্ষার প্রশিক্ষণই দিচ্ছে তা নয়, মানুষের মানবিক গুণাবলীর বিকাশে অতুলনীয় ভূমিকা পালন করছে। বাঙালি সাম্রাজ্যবাদ প্রতিষ্ঠিত করতে, ধর্মান্ধতার কুচক্রীকে প্রতিহত করার সাংস্কৃতিক আন্দোলনে প্রথম সারিতে রয়েছে কণ্ঠশীলন।
তানজিনা তমা, নাদিমুল ইসলাম ও শ্রেয়সী রহমান শ্রেয়ার গানের পাশাপাশি আবৃত্তি করেন বিলকিস আহমেদ, নরোত্তম হালদার, রাজিয়া সুলতানা মুক্তা, জেএম মারুফ সিদ্দিকী, মিনহাজুল বশির শোভন ও তাসনিম ইসলাম দ্যুতি।
শিক্ষাগুরু ওয়াহিদুল হক ও বাক্শিল্পাচার্য নরেন বিশ্বাসের দীর্ঘসময় পথচলার সঙ্গী অধ্যক্ষ মীর বরকত, সভাপতি গোলাম সারোয়ার কণ্ঠশীলন নিয়ে স্মৃতিচারণ করেন। ১৯৮৪ সালে কণ্ঠশীলন প্রতিষ্ঠার পর থেকে নিয়মিত শুদ্ধ উচ্চারণ ও আবৃত্তি শিক্ষার আবর্তন পরিচালনা করে আসছে। অনেক ঝড়-ঝাপটা প্রতিহত করে এখনও এগিয়ে যাচ্ছে কণ্ঠশীলন। ওয়াহিদুল হক, নরেন বিশ্বাসের স্বপ্ন ছিল বাংলার মানুষ শুদ্ধ বা প্রমিত উচ্চারণে কথা বলবে। ওয়াহিদুল হক বলতেন, ‘কথা মানুষকে কাছে টানে, কথা মানুষকে দূরে ঠেলে দেয়। কথা মানুষকে বন্ধু করে, কথা মানুষকে শত্রু করে।’ তাই এক মানভাষায় কথা বলার আমাদের এই আন্দোলন চলতেই থাকবে। সবার সহযোগিতা নিয়ে এগিয়ে যাবে কণ্ঠশীলন এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
‘এবার তোর মরা গাঙে বান এসেছে ...’ সম্মেলক গানের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘটে।
(ঢাকাটাইমস/১৫এপ্রিল/জেবি)
মন্তব্য করুন