চালক-সহকারীর ধূমপানে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে যাত্রীরা
মহাখালীগামী একটি বাস যাত্রী নেয়ার জন্য দাঁড়িয়ে আছে ফার্মগেটে। এসময় চালক তার সহযোগীকে পাঠালেন সিগারেট আনতে। সহযোগী সিগারেট এনে দিলে চালক সিটে বসেই তা ফুঁকতে শুরু করলেন। আর চালকের সহকারী সিগারেট টানছিলেন গেইটে দাঁড়িয়ে। দুই দিক থেকে আসা সিগারেটের ধোঁয়ায় নাকে-মুখে কাপড় চেপে ধরলেন নারী যাত্রীরা।
বাসে বসে কেন ধূমপান করেন এ ব্যাপারে প্রশ্ন করলে চালক দেলোয়ার হোসেন ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আমগো সারাদিন বাসেই থাকতে হয়। বাস থেকে নাইমা যে বিড়ি খামু ঐ সময়টুকু পাই না। বাস থেকে নাইমা গেলে সার্জেন্ট আইসা ধরে, আবার বাস থেকে নাইমা গেলে যাত্রীরাও নাইমা যায়।’
বাসে বসে সিগারেট খাওয়া ঠিক নয় চালক দেলোয়ার নিজেও জানেন। তিনি এটাও জানেন যে সিগারেট খাওয়ার জন্য তার শাস্তিও হতে পারে।
শুধু দেলোয়ারই নয়, রাজধানীর আরও কয়েকটি রুটে সরেজমিনে চলন্ত বাসে চরে দেখা গেছে একই দৃশ্য। বাসস্টপ কিংবা একটু জ্যামে দাঁড়ালেই দেখা যায়, বাসচালক ও তার সহযোগী বিড়ি-সিগারেট ফুঁকছে। এটা অনেকের কাছে খুবই বিব্রতকর। কেউ কেউ সাহস করে প্রতিবাদ করলেও বেশির ভাগ যাত্রী ঝামেলা মনে করে কোনো কথা বলেন না।
সিগারেটের ধোঁয়া যে ভয়াবহ ক্ষতিকর এটা জানেন সবাই। পাবলিক প্লেসে সিগারেট খেলে জরিমানার আইনও আছে। কিন্তু নেই এর প্রয়োগ। এতে প্রতিদিন নারী-শিশুসহ বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে পড়ছে।
হুমায়রা নাজনিন। চাকরি করেন রাজধানীর গুলশানের একটি প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানে। সপ্তাহে ছয়দিন তাকে অফিস করতে হয়। তিনি যে বেতন পান তাতে সিএনজি দিয়ে অফিসে যাতায়াত সম্ভব নয়। তিনি অফিসসহ বিভিন্ন কাজে পাবলিক বাসে যাতায়াত করেন। তিনি অভিযোগ করেন, বেশিরভাগ পাবলিক বাসে নারীদের বসার সিট সামনের দিকে। নারীর সিটে বসলে কিছু কিছু বাসের চালক ও তার সহযোগীর সিগারেটের ধোঁয়ায় বসে থাকা দায়।
এ বিষয়ে সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) আইন শাখার সহকারী পরিচারক মো. খাইরুজ্জামান ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আমরা গণপরিবহনের মালিক ও চালক সমিতির সাথে এ ব্যাপারে বৈঠক করেছি কয়েকবার। চালক ও তাদের সহযোগীরা যেন বাসে সিগারেট না খান তার জন্য বিভিন্ন সচেতনতা ও আইনে যে তাদের শাস্তি হতে পারে সেটা বুঝিয়েছি। তবে এটা সত্য যে বাসে চালক-সহকারীদের সিগারেট খাওয়া এখন অনেক কমে গেছে। জনগণকেও এ ব্যাপারে সচেতন হতে হবে, যদি কোনো বাসে চালক-সহযোগী সিগারেট খায় তাদের না করতে হবে। আমাদের পক্ষে তো বাসে বাসে তদারকির জন্য লোক দেয়া সম্ভব নয়।’
পরোক্ষ ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। এতে কী পরিমাণ ক্ষতি হয় এ ব্যাপারে ঢাকা মেডিকেল কলেজের অধ্যাপক ও মেডিসিন বিভাগীয় প্রধান ডা. মো. এনামুল করিম ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আপনি ধূমপান করেন না, আপনি নিশ্চিত যে ধূমপানঘটিত রোগ থেকে রেহাই পেয়ে গেলেন। কিন্তু না সেটা আপনি পাচ্ছেন না। যারা সিগারেট খাচ্ছে তাদের ভেতরে সিগারেটের ধোঁয়াটা ফিল্টারের মাধ্যমে কিছুটা পরিশোধিত হচ্ছে। কিন্তু যারা পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হচ্ছেন তাদের ভেতরে সিগারেটের ধোঁয়াটা কোনো রকমের ফিল্টার ছাড়াই সরাসরি ফুসফুসে প্রবেশ করে।’
এই চিকিৎসক বলেন, ‘যারা পরোক্ষ ধূমপানের শিকার তাদের ফুসফুসে ক্যানসার, ব্রঙ্ককাইটিস, এমফাইসিস, পাকস্থলীতে ক্যানসারসহ ইসকিনিমিক হার্ট ডিজিস ও হার্ট অ্যাটাক হতে পারে।’
তামাক নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা ২০১৫ অনুযায়ী জনপরিসর ও গণপরিবহনে ধূমপান শাস্তিযোগ্য অপরাধ। আইন করা হলেও সেটা মানা হচ্ছে না। আবার আইনের সঠিক প্রয়োগও হচ্ছে না। চালক ও তাদের সহযোগীদের সচেতনতা আর আইনের যথাযথ ব্যবহারই বন্ধ করতে পারে গণপরিবহনে ধূমপান এমটাই প্রত্যাশা সাধারণ যাত্রীদের।
(ঢাকাটাইমস/১৭এপ্রিল/এনআই/জেবি)