লোকজ মেলার কিছু গান
মেলা মানে জনসমুদ্র, মেলা মানে প্রাণের উচ্ছ্বাস, মেলার নেই জাত-পাত। কোনো এলাকায় মেলা-পার্বণ বছরে দু-একবার আয়োজিত হলেও জাত-পাত নির্বিশেষে জনমনে এর প্রভাব থাকে বছরব্যাপী। হাসি-কান্নার মতো উৎসবের রংও সর্বজনীন। ঠিক যেমন একই রকম রং জগতের তাবৎ যাতনা আর প্রেমের। প্রেম, যাতনা, সম্মিলন নানা ভাব থেকে গীতের সৃষ্টি, আর সেই গীতের সুরারোপিত রূপ গান। প্রতিটি মেলার আছে নিজস্বতা, আছে নিজস্ব গান। মেলা-পার্বণ একসময় শেষ হয়ে যায়, গান বা সঙ্গীতের তরঙ্গে বছরব্যাপী দোলায়িত হয় মানুষের মন। তাই বলা যায়, মেলা বা পার্বণ থেকে উৎসারিত গান যাপিত জীবন উদযাপনের রঙিন অনুষঙ্গ।
এক.
যাতনে মান্য নষ্ট
ভোজনে পেট নষ্ট হয়
অসৎ লোকের সঙ্গ ধরা ভাল নয়।অসৎ লোকের সঙ্গ ধরা
অকাজে কার্য করা
কোদাল দিয়া চলা ফারা
বদনা দিয়া তামাক খায়।ঝি নষ্ট গ্রামের হাটে
বৌ নষ্ট গুদারাঘাটে
চুলা নষ্ট জিঙ্গুলের খোচায়
অসৎ লোকের সঙ্গ করা ভাল নয়।দোতারা হাতে গান গাইছেন জাহেদ আলী বয়াতি। গানটির গীতিকার, সুরকার ও প্রথম গায়ক জহুর আলী বয়াতি, যাকে স্থানীয়রা কালাই বয়াতি বলে জানে। জানালেন, জহুর আলী বয়াতির বড় ছেলে জাহেদ আলী বয়াতি। জহুর বয়াতি ঢাকা অঞ্চলের বিখ্যাত ও ‘মন আমার দেহঘড়ি সন্ধান করি কোন মিস্তুরি বানাইয়াছে’ গানের রূপকার আলাউদ্দিন বয়াতির সমসাময়িক কালের পালাকার। গায়ের রং অত্যধিক কালো হওয়ার কারণে কালাই বয়াতি নামে পরিচিত ছিলেন। পালায় জেতায় আছে তার বিশেষ নামডাক। প্রচলিত আছে আলাউদ্দিন বয়াতির সঙ্গে পালা করে সারা রাত পার করেছিলেন কালাই বয়াতি, তাও হারেননি। সেই সময়ের দেশজোড়া পরিচিত পালাকার আলাউদ্দিন বয়াতির সঙ্গে সেই অপরাজিত পালার জন্য তার নাম হয়ে যায় ঠেঁটা কালাই। যা এখন তার শিষ্য মালেক সরকার বহন করছেন, ঠেঁটা মালেক হিসেবে। কালাই বয়াতির জন্মতারিখ কেউ বলতে পারলেন না। তিনি ১৯৯৮ সালের ৯ এপ্রিল পরকালে পারি জমান।
দুই. লাউড়ের গড়ের উত্তর মাথায় বারেক টিলার পূর্বদিকে ৩৬০ আউলিয়ার অন্যতম সফরসঙ্গী শাহ আরেফিনের আস্তানা। প্রতি বছর চৈত্র মাসের পূর্ণিমা তিথিতে এখানে বসে ওরস। আর দক্ষিণ মাথায় যাদুকাটা নদীতীরে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের তীর্থস্থান শ্রী অদ্বৈত মহাপ্রভুর আখড়া। যাদুকাটা নদীতীরে পৃথিবীর সপ্তবারির জল একত্র হওয়ার পর প্রতিষ্ঠিত হয় ‘পুণ্যতীর্থ’। প্রতি দোল পূর্ণিমার রাতে সপ্তবারির জল একত্র হয়, এ বিশ্বাস থেকে চৈত্রের অষ্টমী তিথিতে ভক্তকুল স্নান করে পূত-পবিত্র হন। যাদুকাটা নদীতীরে অনুষ্ঠিত হয় বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলের সবচেয়ে বড় বারুণী স্নান।
দুই উৎসব ঘিরে নদীতীরে বসে হিন্দু-মুসলমানদের মিলনমেলা। নানা পশরার বিকিকিনিসহ পীর-ফকিরের দল আলাদা আলাদা তাঁবু ফেলে বসতি গারে মেলায়, থাকে তিনদিন। গরু, খাসি, মুরগি জবাই, রান্নাবান্না, খাওয়া-দাওয়া চলে সমানতালে। ঠিক কত বছর আগে শাহ আরেফিনের মেলা শুরু হয়েছিল সঠিকভাবে বলা মুশকিল। স্থানীয় বর্ষীয়ানদের মুখে শোনা, এই মেলার বয়স ১০০ বছরেরও বেশি।
‘পিঞ্জর ছেড়ে সোনার পাখি একদিন উড়িয়া যাইবে
গহীনও কাননে একদিন জন্মের মতো লুকাইবে।
ফিরবে যেদিন হায়াতের ডুরী
আমার শুয়া পাখিটা সেদিন যাইবো উড়িরে
ডাকলে আর চাইবো না ফিরি তার ভাবে সে চলিবে।।
ডুববে যেদিন জীবন রবি
তোমার ১০ ইন্দ্রিয় নষ্ট হইবিরে
সেদিন কিছু না আর তোমার রইবি অনন্তে সব মিশিবে।।
আরে মন তোমার যাহা আত্মীয়স্বজন
তোমার জন্য করবে ক্রন্দনরে।
একটা মাটির বাসর করে খনন
জন্মের তালা লাগাইবে।।
সাঙ্গ হবে ভব তামাশা
দুনিয়ার সব ভালবাসারে
সেদিন বাউল কবি মজনু পাশা চিরনিদ্রায় ঘুমাইবে ।।
পাখি উড়িয়া যাইবে’
বাউল মজনু পাশার গান এটি।যাদুকাটা নদীতীরে গাইছেন মজমা করে কয়েকজন। এর মধ্যে বিল্লাল ফকির গানের গীতিকার বিষয়ে আমার অজ্ঞতা নিয়ে কটাক্ষ করে বললেন, ‘গানের মধ্যিখানেই তো আছে জনকের নাম। বাহিরে খোজলে হবি? বাবাজি গানটি মজনু পাশার। গানের কথা, সুর ও প্রথম গায়ক বাউল মজনু পাশা।’ একটু লজ্জা পেয়ে গেলাম।
জানা গেল, গ্রামের স্কুলের শিক্ষক উপেন্দ্র কুমার দাসের অনুপ্রেরণায় ষষ্ঠ শ্রেণিতে অধ্যয়নরত অবস্থায় মজনু পাশা গান গাওয়া শুরু করেন। ২২ বছর বয়সে ওস্তাদের হাত ধরে সঙ্গীত চর্চার লক্ষ্যে ঘর হতে বের হন। তিনি প্রায় এক হাজার গানের জনক। জানা যায়, তিনি ১৯৩৮ সালের ২৬ অক্টোবর সুনামগঞ্জের বীরগাঁওয়ের ঠাকুরভোক গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পরপারে পারি জমান ২০১৫ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি।
তিন.
নৌকা চড়ে যাব কেল্লা বাবার বাড়ি
কে যাবিরে খড়ম পুরে উঠো তাড়াতাড়ি।
পঞ্চকাজি তার ভিতর, বানাইয়া যে কারিগর
চতুর্পাশে দিয়া হাঁকি কইরাছে তৈয়ারি।
পাপপুণ্য গাট্টি ভরে, সালতানাত খড়মপুরে
ডুইবা গেলে উদ্ধার করে কেল্লা শাহ মিস্তুরি।খড়মপুরের কেল্লা শাহর মাজার-সংলগ্ন গাছের নিচে সারি সারি ভক্তকুল। ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে বসেছে মজমা। এমনি একটি মজমায় খঞ্জনি হাতে গান গাইছেন জটাধারী এক পাগল। প্রশ্ন করলে কোনো উত্তর দেন না। পাশে বসা তার স্ত্রী কিছু কিছু প্রশ্নের উত্তর দেন। তার কাছ থেকে জানা গেল, পাগলের নাম বিরাট। বাড়ি যশোর। দুই সপ্তাহ হয় এসে যোগ দিয়েছেন ওরসে। তারা কিছুই বলতে পারলেন না গান সম্পর্কে। পরে আরেক ভক্ত জগন্নাথপুরের দিলদারের কাছে জানা গেল, গানের গীতিকার রুবেল, সুরকার ও গায়ক শরীফ উদ্দিন। শরীফ উদ্দিন লেংটা বাবা, ভাণ্ডারী, কেল্লা শাহর শানে গান করে থাকেন।
নৌকায় মজমা বসে গানের। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশপাশতো বটেই ভাটি-হাওরের সব আশেকান নৌকায় করে খড়মপুরে এসে ঝড়ো হয়। ওরস উপলক্ষে মাজারের বিভিন্নস্থানে বসে ভক্তদের সঙ্গীতের আসর। তবে প্রতি বছর মাজারস্থলের বাসার জায়গা নির্দিষ্ট থাকে সবার। নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা পরিশোধ করে আশেকানরা দলগতভাবে বসেন সেখানে। আর অনেকে আশপাশের রাস্তার পাশে নৌকা ভিড়িয়ে নৌকায় অথবা পাশের বাড়ির আঙ্গিনায় মজমা করেন। সপ্তাহব্যাপী ওরস চললেও ওরস শেষে মেলা থাকে প্রায় মাসব্যাপী। আখাউড়ার খড়মপুরে শাহ সৈয়দ আহাম্মদ গেছুদারাজ প্রকাশ কল্লা শহীদের (র.) মাজারে প্রতি বছর ভাদ্র মাসের শেষ সপ্তাহে বসে কেল্লা শাহ পীরের ওরস। ওরস উপলক্ষে বসে মেলা। পীর, ফকিরের আগমনে মুখরিত হয় গোটা আখাউড়া। কেল্লা শাহ মাজারের পাশের নদীতে নৌকা ছাড়া কিছুই চোখে পড়ে না। নৌকার সারি তিতাস নদী পূর্ণ হয়ে রেললাইন সড়কের আশপাশ পর্যন্ত বিস্তৃত হয়। এছাড়া মৃত্যুকূপ মোটরসাইকেল, জাদু প্রদর্শনী, নাগরদোলাসহ নানা আয়োজনে সরব থাকে গোটা মেলা প্রাঙ্গণ। আর আশপাশের পথে পথে ছোট ছোট পাত্রে বোঝাই করে বিক্রি হয় পেয়ারা। প্রতি বছর মেলাকে উপলক্ষ করে বের হয় প্রায় ডজনখানেক গানের সিডি। ওরসে আগত মাজারের ভক্ত-আশেকান জায়েগিরদের ইবাদত-বন্দেগি, নামাজ, জিয়ারত, কোরআন তেলাওয়াত, মিলাদ, তবারক বিতরণের মধ্য দিয়ে শেষ হয় মেলা।
চার .
গেছি গারো জনগোষ্ঠীর ওয়ানগালা মেলায়। মেলা অবলোকন আর বিনোদিত হওয়ার মতো পরিবেশনা দেখে বের হওয়া গেল সমতলের জনপদের খোঁজে। সন্ধ্যায় রাস্তার পাশে এক বাড়িতে গাছের গোড়ায় বাতি জ্বলতে দেখে থেমে গেলাম। ভেসে আসছিল গান।
আন্ধার ঘরে মানিক জ্বলে
এই ঘর বাইন্ধ্যাছে কোন কলে।
কলের তালা কলের কব্জা
জুইত গাঁথুনী বড়ই পাক্কা
কোর‘কের পরওনা লট্কা
দেখা যায় তার আগচালে।।কদম গাছের গোড়ায় মোমবাতির আলো জ্বালিয়ে, বাড়ির দাওয়ায় বসে গান ধরেছেন আবদুল খালেক বয়াতি। গানের সুর উত্তরঙ্গের আকাশে-বাতাসে কাঁপন তোলে। মেলা-সংলগ্ন গ্রামের বাড়ির আঙ্গিনায় বসে বাউল চাঁন মিয়া বয়াতির শিষ্য আবদুল খালেক বয়াতির গলায় গান অসাধারণ এক আবহের সৃষ্টি করেছে। খালেক বাউলের কাছে জানা গেল, তার গুরু চাঁন মিয়া বাউলের দাদা পীর বিতলং সাধুর গান এটি। প্রায় আড়াই শ বছর আগে নেত্রকোনা অঞ্চলের বাউল সাধকদের আদর্শ ছিলেন বিতলং সাধু। তার জন্ম-মৃত্যুর কোনো তথ্য পাওয়া যায় না। প্রাপ্ত তথ্যমতে, বিতলং সাধু নেত্রকোনা অঞ্চলের প্রাচীন বাউল।
নতুন ধানের চালের গুঁড়া পানিতে মিশিয়ে শস্য, বাড়ি ও মানুষের কপালে বা শরীরে ছাপ দেওয়া হয়। ধূপ পুরিয়ে, দামা বাজিয়ে রাজকীয় বেশে ‘নকমা’ বা সমাজপ্রধান ও ‘খামাল’ বা পুরোহিত নৃত্য করতে করতে গান গাইতে গাইতে দল বেঁধে নির্দিষ্ট জায়গায় ‘দু’ বা মুরগি এবং ‘চু’ বা মদ দিয়ে তাততারা রাবুকা বা বাঁশ দিয়ে বানানো প্রতিমা ‘রাক্কাসী’র প্রতি ধন্যবাদ জানান। সঙ্গে নোকমি বা সম্প্রদায় প্রধানের স্ত্রীও থাকেন। আর পিছে থাকে কাল বা লম্বা বাঁশ দিয়ে বানানো বাঁশি, দামা বা লম্বা ঢোল, বোম বা মহিষের শিং দিয়ে বানানো বাঁশি বাজিয়ে ফুর্তি করে গারোরা। প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী এই উৎসব জুম কৃষিভিত্তিক।
‘ওয়ানগালা’ ধন্যবাদ বা কৃতজ্ঞতা প্রকাশের উৎসব। আদিবাসী গারোদের বিশ্বাস, শস্য-দেবতা বা ‘মিশি সালজং’ পৃথিবীতে প্রথম ফসল দিয়েছিলেন এবং তিনি সারা বছর পরিমাণমতো আলো-বাতাস, রোদ-বৃষ্টি দিয়ে ভালো শস্য ফলাতে সহায়তা করেন। তাই নবান্নে নতুন ফসল ঘরে তোলার সময় ‘মিশি সালজং’কে ধন্যবাদ জানাতে উৎসবের আয়োজন করে গারোরা। ফসল দেবতাকে উৎসর্গ না করে তারা কোনো খাদ্য ভোগ করে না। ‘ওয়ানগালা’ আদিবাসী মান্দি বা গারোদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব।
পাঁচ.
আগে সখী পিছে সখী
মধ্যখানে সতীলো
ওকি যায় যে বেইলা
লেচুর বাগানে
আমায় কে দিল পিড়িতির বায়না-
লেচুর বাগানে।
বন্ধুর বাড়ি, আমার বাড়ি,
মধ্যখানে ধারা।অনেকেই মনসামঙ্গল কাব্য রচনা করেছেন। কালাহরি দত্ত, বিজয়গুপ্ত, নারায়ণ দেব, শম্বু মিত্র ও বিপ্রদাস পিপলাই, কেতকাদাস ক্ষেমানন্দ। তবে টাঙ্গাইলের খোকা ম-ল শুধু সপ্তদশ শতকের কবি কেতকাদাস ক্ষেমানন্দর নাম বলতে পারলেন। তিনি মনে করেন, এই গান কেতকাদাসের লেখা হয়ে থাকলেও সেই সময়ের ভাষা এত সহজ-সরল নয়। কালের পরিক্রমায় বিবর্তিত হয়ে বর্তমান রূপ ধারণ করেছে। কেতকাদাস ক্ষেমানন্দর জন্ম-মৃত্যু জানা না গেলেও এটা জানা যায়, তিনি ছিলেন রাঢ় দেশের অধিবাসী। শুধু রাঢ়বঙ্গেই নয় তার কাব্য পূর্ববঙ্গেও বেশ প্রচলিত ছিল। পূর্ববঙ্গে তার কাব্য ‘ক্ষেমানন্দী’ নামে পরিচিত। অনুমিত করা হয়, তার মনসামঙ্গল কাব্যটির রচনাকাল সপ্তদশ শতকের মধ্যভাগ। তবে অধ্যাপক সুখময় মুখোপাধ্যায় মনে করেন, ১৭০৮-০৯ খ্রিস্টাব্দের আগেই ক্ষেমানন্দ মনসামঙ্গল কাব্য রচনা করেছিলেন।
অর্জুনায় আজ শাওনের ঢালা ভাসান। সাপের ওঝা খোকা ম-ল তার দল নিয়ে যমুনার বুকে নাও ভাসিয়েছেন। নৌকায় চলছে মনসামঙ্গল পরিবেশনা। নৌকা এবং পথে বাড়ি বাড়ি নেমে গেরস্থের আঙ্গিনায় ধারাবাহিকভাবে চলছে পরিবেশনা। ন্যূনতম যমুনা পারের গ্রামের সাতঘাটে পরিবেশনার পর ঢালায় থাকা কলা, খৈ, দুধ কলাপাতায় নিয়ে যমুনার বুকে ভাসিয়ে দিয়ে সমাপ্ত হয় শাওনের ঢালা। তবে এর শুরু অনেক আগে, সেই পূর্ণিমা তিথিতে। সর্পদেবী মনসাকে তুষ্ট করতে প্রতি বছর শ্রাবণ মাসের শেষদিন টাঙ্গাইল অঞ্চলে হয় শাওনের ঢালা ভাসানি। এখানকার মনসামঙ্গল পরিবেশনা দেশের অন্যান্য অঞ্চলের শ্রাবণ সংক্রান্তির মতো নয়। টাঙ্গাইল-জামালপুর মুসলিমপ্রধান অঞ্চল হওয়ার কারণেই হয়ত শুধু মর্ত্য হতে শুরু করে চাঁদ সওদাগরের বেঁচে ওঠা পর্যন্ত কাব্য পড়া হয়। বেহুলা-লখিন্দরের প্রণয় পর্ব। প্রণয় পর্বের গান হওয়ার কারণে গানে আহ্লাদ পাওয়া যায় না।
সাপের বিষ নামানি ওঝাদের সারা বছর বিষ নামিয়ে, সাপ-বন্দনা করে সময় কাটে। বছরান্তে তারা শ্রাবণ মাসের শেষে সাতঘাটে বেহুলা-লখিন্দর কাহিনি নাট্য শুনিয়ে মাগন তোলেন। সাতঘাটে মাগন শেষে ঢালা পদ্মমাধবের উদ্দেশে যমুনার পানিতে ভাসিয়ে দেন। বাড়ি ফিরে, মাগনের চাল-ডালে রান্না করে খেয়ে, সারা রাত পাঁচালি গেয়ে পদ্মমাধবকে তুষ্ট করেন তারা। এভাবে সারা বছরের জন্য নির্বাণ লাভ করেন ওঝারা। তারা মনে করেন, পদ্মমাধব বা সর্পরাজকে তুষ্ট করার ফলে তারা সারা বছর নিশ্চিন্ত। সাতঘাটের মাগন, বেয়ুলার বাসান, শাওনের ঢালা, ব্রতকথা, পাঁচালি, মনসামঙ্গল কাব্য ও ভাসানযাত্রা যে নামেই বলি না কেনÑ সবই এক।
বাংলার লোকমেলার গান বাংলা সাহিত্যের এক অমূল্য সম্পদ। বাংলার আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে এমন হাজারো গান, যা গ্রামবাংলার মহামূল্যবান সম্পদ। বাংলার এই লোকায়ত গানের ধারা শত বাধার মধ্যেও টিকে আছে। টিকে থাকবে হাজার বছর। লোকগানের গানের শৈল্পিক নন্দনের টান মানুষকে উদ্বেলিত করে, করবে চিরকাল।
ইমরান উজ-জামান : সাংবাদিক ও গবেষক
ঢাকাটাইমস/১৭এপ্রিল/আইইউজে/টিএমএইচ
মন্তব্য করুন