গল্প
মায়ের আদর
চাঁদের মতো ফুটফুটে সুন্দর ছেলেটির বাবা-মা আদর করে নাম রেখেছিলেন চাঁদ। পদ্মা পাড়ের মালিকান্দা বাজার লাগোয়া পুলিশ থানার কোয়ার্টারে তার জন্ম। তার বাবা থানাটির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বা ওসি। থানা পুলিশ এবং স্থানীয় জনসাধারনের কাছে তিনি বড় সাহেব বলে পরিচিত।
চাঁদ বড় সাহেবের পঞ্চম সন্তান এবং চতুর্থ পুত্র। চাঁদের বড় ও মেজভাই স্থানীয় মালিকান্দা ও মেঘুলা হাইস্কুলে নীচু ক্লাশে পড়ে। সেজভাই ও একবোন পড়াশুনা করে না। তাদের শিক্ষাজীবন এখনও শুরু হয় নি। তারা ঘরে বসে এক্কা-দোক্কা খেলে। বড়জোর থানার মাঠে ছোটাছুটি করে।এর বাইরে যাওয়ার মতো বয়স তাদের হয় নি। এক পর্যায়ে চাঁদের বাবা বদলী হলেন তাঁর বর্তমান কর্মস্থল হতে।
সেই সময় বদলী হলেই কর্মকর্তারা কিছুদিনের জন্য পরিবার রেখে আসতো দেশের বাড়িতে। নতুন কর্মস্থলে যোগদান করে খানিকটা গুছিয়ে নেয়ার পরে আবার তাদের বাড়ি থেকে নিয়ে আসা হতো। চাঁদের পিতাও তাই করলেন। চাঁদসহ পরিবারের সবাইকে পাঠিয়ে দেওয়া হলো সুদূর বরিশালের গন্ডগ্রামে। চাঁদের বয়স তখন বছর দেড়েক।
বহুদিন পরে নাতি-নাতনীদের কাছে পেয়ে চাঁদের দাদী খুব খুশী হলেন। বিশেষ করে চাঁদকে দেখে তিনি আহলাদে আটখানা। সবাইকে ডেকে ডেকে দেখাতে লাগলেন। বলতে লাগলেন, মোর নয়া নাতিরে দেখছ, কেমন সুন্দর। চান্দের লাহান সুন্দর হইছে, হেই জন্য অর নামও চান্দ। মানিকের ভাই চান্দ!! সুন্দর না? একথা শুনে সবাই জোরে মাথা নেড়ে সায় দিতে লাগলো। কেউ পিছিয়ে পড়লে, তার সর্বনাশ। দাদী তার উপর মূহুর্তে রুষ্ট হয়ে বলতেন, ও কি কথা কও না দেহি। মোর নাতিরে তোমার পছন্দ হয় নাই? এত সুন্দর পোলাপান দেখছো কোনো হানে? চাঁদের দাদীর কান্ড কারখানা দেখে তার দাদা হেসে ফেলতেন। দাদী তার উপরও ছদ্ম রাগ ঝাড়তেন। বলতেন, আমনে হাসেন ক্যা? দাদা মাথা নেড়ে বলতেন, হাসি নাতিরে দেইখ্যা না, তোমারে দেইখ্যা। নাতিদের প্রতি চাঁদের দাদীর প্রচন্ড দুর্বলতা। বিশেষ করে চাঁদের প্রতি। এই দুর্বল স্থানে কেউ আঘাত করলে তার রক্ষা নেই। দাদী হিতাহিত জ্ঞানশূন্য হয়ে তাকে প্রত্যাঘাত করতেন। সে যেই হোক।
কিছুদিন পরে চাঁদের পিতা এসে সবাইকে তার নতুন কর্মস্থলে নিয়ে গেলেন। দাদী চিৎকার করে কেঁদে বাড়ী মাথায় নিলেন। দু’দিন ধরে কিছু খেলেন না । ওদের বিদায় দিতে এসে নৌকা ছেড়ে দেওয়ার পরও রাত অবধি ঘাটে বসে রইলেন।
চাঁদের পিতার নতুন কর্মস্থল বর্তমান কিশোরগঞ্জ জেলার হাওড় অঞ্চল সংলগ্ন একটি থানায়। স্থানটি তখন মাছ, দুধ, পনির এবং চীনা বাদামের জন্য বিখ্যাত ছিল। ইতিমধ্যে চাঁদের পিতা তার বড় দুই ছেলেকে পড়াশুনার সুবিধার্থে ঢাকায় স্কুলে ভর্তি করে দিয়ে এসেছেন। তারা পুরোনো ঢাকার নারিন্দাতে চাঁদের বড় ফুফুর বাসায় থেকে পড়াশুনা করবে। প্রথমে চাঁদের মা এতে আপত্তি করেছিলেন। কিন্তু বদলির চাকুরীতে ছেলে পিলের পড়াশুনার খুব অসুবিধা হয়, বারবার স্কুল বদলাতে হয়, স্বামীর এমন যুক্তি শুনে তিনি আর বেশী কিছু বলেননি।
চাঁদ খানিকটা বড় হয়েছে। হাঁটে, দৌড়ায় এবং আধো আধো কথা বলে। মা ছাড়া সেজভাই এর সাথেই তার সময় কাটে বেশী। সেজভাই মানিক তখনো স্কুলে যেতে শুরু করে নি। সারাদিন ছোট ভাইটাকে কোলে কাখে করে তার সাথে খেলে। মাঝে মাঝে একটু বিরক্তও হয়, যখন চাঁদ তার সাথে বাসার বাইরে যাওয়ার জন্য আবদার করে। কারন তাকে বাসার বাইরে নিয়ে যাওয়ার অনুমতি নেই। মা বারন করেছেন। কিন্তু এই অবুঝ শিশুটি তা বোঝে না। সেজভাই বাসার বাইরে যেতে চাইলেই চাঁদ চিৎকার, চেঁচামেচি, কান্নাকাটি করে তাকে দোটানায় ফেলে দেয়। এর ফলে অনেক সময় তার নিজের বাইরে যাওয়া বন্ধ হয়ে যায়।
এই রকম বিরক্তির চরমে উঠে একদিন সেজভাই দৌড় দিয়ে চলে যেতে চেষ্টা করে। চাঁদ তাকে ধরতে গিয়ে বর্ষার বৃষ্টি জমা কাদা-পানিতে পড়ে যায়। শোরগোল শুনে মা বাইরে এসে দেখেন চাঁদের কাপড় চোপর কাঁদা পানিতে মাখামাখি হয়ে সারা । অগত্যা কি আর করা। তিনি চাঁদকে ভর সন্ধাবেলায় টিউবওয়েলের ঠান্ডাপানিতে সাবান দিয়ে ভালো করে গোসল করিয়ে দিলেন। ভরাবর্ষার বৃষ্টি ভেজা দিনটিও ছিলো খুব ঠান্ডা।
সেই রাত্রেই চাঁদের গা কাঁপিয়ে জ্বর উঠলো। প্রবল জ্বর। ঠান্ডা জ্বর ধরে নিলো সবাই। তাই আর ডাক্তার দেখানো হলো না । কিন্তু তিনদিন পরেও জ্বর কমার লক্ষন না দেখে বাবা-মা দুজনই চিন্তিত হয়ে পড়লো। সরকারী ডাক্তারকে খবর দেওয়া হলো। তখনকার দিনে পশ্চাৎপদ ঐ এলাকায় এ ছাড়া কোনো চিকিৎসকও ছিলো না। তিনি গম্ভীর মুখে জানালেন, টাইফয়েড হতে পারে, রক্ত পরীক্ষা করাতে হবে। রক্ত পরীক্ষার জন্য স্যাম্পল নিয়ে যাওয়া হলো মহকুমা শহরে। রক্ত পরীক্ষা করে দেখা গেল, চাঁদের টাইফয়েডই হয়েছে।
সেই সব দিনে টাইফয়েড ছিল এক মূর্তিমান আতঙ্কের নাম। মানুষ বিশ্বাস করতো, টাইফয়েড জ্বর সহজে সারে না। আর অনেকদিন ভুগে সারলেও একটা অঙ্গহানি করে রেখে যায়। চাঁদের টাইফয়েড হয়েছে জেনে তার বাবা-মা দুজনেরই মুখ কালো হয়ে গেল। ডাক্তার ওষুধ পাল্টে নতুন ওষুধ দিলেন। তার মধ্যে কড়া অ্যান্টিবায়োটিকও রয়েছে। এই ওষুধ সম্পর্কে তখন নানা ধরনের ভ্রান্ত ও ভীতিকর ধারনা প্রচলিত ছিল।নিয়মিত ওষুধ চললো । মা সারাদিন কাজ-কর্ম ফেলে ছেলেকে আগলে রাখেন। কিন্তু তার অবস্থার কোনো উন্নতি হলো না। জ্বর ছাড়ার কোনো লক্ষন দেখা গেলো না। মাঝে মাঝে জ্বর ছেড়ে গিয়ে আবার ফিরে আসে। মায়ের মুখ সবসময় কালো, দুশ্চিন্তায় মলিন। একদিন ভোররাতে ওর অবস্থা খুবই শঙ্গীন হয়ে পড়লো। মা কান্নাকাটি করতে লাগলেন। একপর্যায়ে বাবার কান্নার আওয়াজ পাওয়া গেলো। চাঁদের দুই ভাই-বোন ঘুম ভেঙ্গে উঠে বিছানার উপর রাত ভর বসে রইল। সরকারী ডাক্তার সাহেব এসে চাঁদকে কোরামিন ইনজেকশন পুশ করলেন। তখনকার দিনে এই ইনজেকশনটিকে ধন্বন্তরী মনে করা হতো। বাবা মার কান্নাকাটি বন্ধ হলো। দূর্বল ও ক্লান্ত চাঁদ ঘুমিয়ে পড়লো।
সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো মহকুমা শহর থেকে বড় ডাক্তার আনা হবে। থানা থেকে দু’জনকে ডাক্তার আনতে মহকুমা শহরে পাঠানো হলো। ডাক্তার ট্রেনে চড়ে আসবেন। তখন এ ছাড়া যাতায়াতের অন্য কোনও উপায় ছিল না।
পরদিন ডাক্তার এসে কুলিয়ার চর স্টেশনে নামলেন। তার নাম প্রফুল্ল কুমার বীর। কিন্তুু তিনি স্টেশনে নামার পরই চাঁদের জ্বর ছেড়ে গেলো, আর উঠলো না । তবু ডাক্তার ওদের বাসায় আসলেন। চাঁদের মা জলভরা চোখে ডাক্তার বাবুকে বললেন, আপনি আসাতেই আমার ছেলেটা সুস্থ হয়ে উঠলো। ডাক্তার বাবু বললেন, মা আপনার ছেলে এমনিতেই সুস্থ হতো। সরকারী ডাক্তার সাহেব ভালো চিকিৎসাই করেছেন। দীর্ঘদিন রোগে ভুগে ভুগে চাঁদ খুবই মা ন্যাওটা হয়ে পড়লো। মাকে ছাড়া সে বিছানা থেকে নামতেও চায় না। মাও ছেলেকে এক দন্ডের জন্য চোখের আড়াল করেন না।
বছর না ঘুরতেই চাঁদের বাবা আবার বদলী হলেন। তার চাকুরীটাই বদলীর। এবারে তিনি এলেন জেলা শহর থেকে দশ মাইল দূরে একটি শহুরে জনপদে। এই ছোট শহরটি বিখ্যাত ছিলো তার বিশাল রাজবাড়ী এবং ঐতিহ্যবাহী মিষ্টির জন্য। নতুন কর্মস্থলে এসেই চাঁদের বাবা তার সেজভাইকে স্কুলে ভর্তি করে দিলেন। স্কুলের নাম রাম কিশোর উচ্চ বিদ্যালয়। সংক্ষেপে আর কে হাই স্কুল। তাকে চতুর্থ শ্রেনিতে ভর্তি করা হলো। আর তাকে বাসায় এসে প্রাইভেট পড়াতে লাগলেন ঐ স্কুলেরই এক শিক্ষক, মনোরঞ্জন চক্রবর্তী।
সেজ ভাই স্কুলে গেলে চাঁদ অনেকটা সময় বাসার বাইরের দিকের বাঁধানো সিড়িতে বসে থাকতো। প্রতীক্ষা করতো সেজ ভাইয়ের আসার জন্য। মাঝে মাঝে ছোট শহরের সুপরিচিত পাগল ঈমান আলী ওরফে ঈমাইন্না পাগলা এসে হাজির হতো। কোন এক বিচিত্র কারনে চাঁদকে খুব পছন্দ করতো ঈমান। তাকে দেখলেই একগাল হেসে বলতো, ক্যাডা এইডা ? চান মিয়া? চান মিয়া ভালা। বলেই সে হাঁটা শুরু করতো। সেই সাথে তার বহুল পরিচিত চিৎকার, আরে ভাস। কাকে যে সে ভাসতে বলতো বার বার, কেউ জানে না ।
চাঁদের বড় ও মেজভাইর স্কুল বন্ধ হয়েছে। তাঁরা বাবা-মায়ের কাছে চলে এসেছেন। স্কুল বন্ধ হলেই দুই ভাই বাসায় চলে আসে এবং বন্ধের দিনগুলি বাবা-মা’র সঙ্গে কাটায়। এরা দুজন আসলে বাসায় আনন্দের হিল্লোল বয়ে যায়। সবাই খুব খুশি হয়। সবচেয়ে বেশি খুশী হয় চাঁদ। সে মেজ ভাইয়ের কাছে ঘুর ঘুর করে। তাকে সে খুব পছন্দ করে। মেজ ভাই ও তাকে খুব আদর করেন।
এরই মধ্যে বাসায় ধাত্রীর আনাগোনা শুরু হলো । প্রৌঢ়া এই হিন্দু ভদ্রমহিলা থানার লাগোয়া তার বাড়িতে থাকেন। দিন দিন তার আসা-যাওয়া বাড়তে লাগলো। বাসায় ছেলেপিলেদের সাথে দেখা হলে তিনি মুচকি হেসে আকারে ইঙ্গিতে কিছু একটা বলার চেষ্টা করেন। একদিন তিনি চাঁদকে কাছে পেয়ে বললেন, ছোট্ট একটা বাবু এনে দিবো তোমাকে দাদু ভাই। তুমি ভাইয়া চাও, নাকি আপু চাও? চাঁদ তার কথা শুনে কি বুঝলো কে জানে? সে কিছুই বললো না। চোখ বড় বড় করে বড় ভাইদের দিকে তাকাতে লাগলো।একদিন ধাত্রী মহিলা এসে সারাদিন চাঁদদের বাসায় থাকলেন। রাতেও তিনি থেকে গেলেন চাঁদের আম্মার কাছে। তার কামরা আলাদা করে ফেলা হয়েছে। ধুয়ে মুছে পরিস্কার করে কাপড়-চোপর সব পাল্টে ধোয়া কাপড়-চোপর দেওয়া হয়েছে।
চাঁদকে নিয়ে মুশকিল হলো, সে সব সময় মায়ের সঙ্গে ঘুমায়। আজ তাকে মায়ের কাছে থাকতে দেওয়া হলো না। তাকে বলা হলো যে মায়ের খুব অসুখ। কিন্তু সে বারবার কাঁদো কাঁদো গলায় বলতে লাগলো, আম্মার কাছে যাবো। তাকে মায়ের কাছে নিয়ে যাওয়া হলো। মা তাকে অনেক আদর করে বললেন আজকে তুমি মেজভাইয়ের কাছে থাকো আব্বা। চাঁদ খুবই অসšু‘ষ্ট চিত্তে মেজভাইয়ের হাত ধরে তাদের কামরায় ফিরে গেল। গভীর রাতে ঘুম ভেঙ্গে সে একই আবদার করলো। মেজভাই তাকে অনেক আদর করলেন, অনেক বোঝালেন। সে আবার ঘুমিয়ে পড়লো।
খুব সকালে ঘুম ভেঙ্গে বিছানায় উঠে বসলো চাঁদ। সঙ্গে সঙ্গে মেজভাইও উঠে বসলেন। জিজ্ঞেস করলেন, কি হয়েছে? চাঁদ অস্ফুস্ট স্বরে বললো, আম্মা। মেজভাই ওকে নিয়ে বারান্দায় এলেন। পুরো বারান্দা ধোয়া হয়েছে, তখনো ভেজা। দেখলেই বোঝা যায় ,এই বাসায় একটা কিছু ঘটেছে। মেজভাই তাকে কোলে নিয়ে সন্তর্পনে বারান্দা পার হয়ে মায়ের কামরার দরজায় গিয়ে নামিয়ে দিলেন। সেই ঘরও ধোয়া হয়েছে। চারদিকে ফিনাইলের গন্ধ।
চাঁদ দরজায় দাঁড়িয়ে, ভিতরে উঁকি দিয়ে দেখলো। মায়ের চোখে চোখ পড়তেই মা তাকে ইশারায় কাছে ডাকলেন। কিন্তু চাঁদ তখনো দ্বিধাগ্রস্থ। মা তাকে নীচু কন্ঠে ডাকলেন, আসো আব্বা আসো। আমার কাছে আসো। চাঁদ আবারো এদিক ওদিক তাকিয়ে পা টিপে টিপে মায়ের নিকটবর্তী হলো। একেবারে কাছে গিয়ে দেখলো মায়ের কোলের কাছে ছোট্ট লাল টুকটকেু কে একটা বাবু শুয়ে আছে। মা চাঁদের হাত ধরে বললেন, কি হয়েছে আব্বা ? আপু,আল্লাহ তোমাকে একটা আপু দিয়েছে। চাঁদ চোখ বড় বড় করে বললো, ভুনাভুনি? মা বললেন হ্যা বাবা, ভুনাভুনি । ভুনাভুনি হলো বোনের আদরের ডাক।
কিন্তু চাঁদের চোখ ছলছল করতে লাগল। সে ঘুরে দাঁড়িয়ে দরজায় দাঁড়ানো মেজ ভাইয়ের দিকে তাকালো। মেজভাই দু’হাত বাড়িয়ে দিলেন। চাঁদ আবার পা টিপে টিপে ধীরে ধীরে বেরিয়ে গেল। দরজার কাছে গিয়ে মাথা ঘুরিয়ে আবার মায়ের দিকে তাকালো। মাকে দেখলো, সেই সাথে নতুন বাবুটিকে আবার দেখলো। মেজভাই তাকে কোলে করে নাশতার টেবিলে নিয়ে গেলেন। টেবিলে নানারকম মিষ্টি। তার মধ্যে সুগন্ধ ছড়ানো ঐতিহ্যবাহী মিষ্টি মন্ডাও রয়েছে। চাঁদের বাবা নতুন বাবুর জন্ম উপলক্ষে এসব মিষ্টি আনিয়েছেন। মিষ্টি চাঁদের খুব পছন্দ। বিশেষ করে মন্ডা দেখলেই সে খুব খুশী হয়ে যায়। কিন্তু আজ সে গম্ভীর হয়ে বসে রইল। মিষ্টির দিকে হাত বাড়ালো না। তার ফর্সা মুখটা বিষাদে কালো দেখাচ্ছে।
মেজভাই তার দিকে একটা মন্ডা এগিয়ে দিলেন। বললেন মিষ্টি খাও ভাইয়া। চাঁদ তবু মাথা নিচু করে চুপ করে রইলো। মেজভাই তার কাছে গিয়ে মুখখানি তুলে ধরলেন, দেখলেন তার দুই চোখে জল টলমল করছে । মেজভাই বললেন কি হয়েছে ভাইয়া, কাদছো কেন? চাঁদ ফুপিয়ে কেঁদে উঠলো। কান্না জড়িত গলায় শুধু বললো, আম্মা। আম্মার কাছে যাবো। মেজভাই তাকে দু’হাতে বুকে জড়িয়ে ধরলেন। তিনি মনে করার চেষ্টা করলেন কবে, কতদিন আগে মায়ের আদরের জন্য তার এমন মন খারাপ হয়েছিল। কবে মায়ের কোলের কাছের জায়গাটা তাকে ছেড়ে দিতে হয়েছিল তার ছোটভাই মানিকের কাছে। তিনি মনে করতে পারলেন না। তার দু’ চোখের দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে উঠলো। সেই চোখে জল টলমল করছে।
নিউ ইয়র্ক ২৮-২৯ জুলাই ২০১৬
মন্তব্য করুন