লিচুর মধু: চাষি-মালিক উভয়েরই লাভ

ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ১৮ এপ্রিল ২০১৭, ১১:৩২

ঠাকুরগাঁও জেলার সুস্বাদু ও মিষ্টি লিচুর পরিচিতি দেশ জুড়ে। এসব লিচু বাগানে মৌ মাছির বাক্স বসিয়ে মধু আহরণ করে করছেন মৌ চাষিরা। এতে একদিকে যেমন মৌ চাষিরা মধু সংগ্রহ করে লাভবান হচ্ছেন, অন্যদিকে মৌ মাছির মাধ্যমে মুকুলে মুকুলে পরাগায়ণ ঘটায় লিচু গাছ মালিকরা বাম্পার ফলনের আশা করছেন। এক কথায় বাগানে মৌ চাষ করে চাষিরাও খুশি মালিকরাও খুশি।

ঠাকুরগাঁও জেলায় গড়ে উঠেছে বেশ কিছু লিচু বাগান। ঠাকুরগাঁও সদর, পীরগঞ্জ ও রাণীশংকৈল উপজেলায় গড়ে উঠেছে এসব লিচুর বাগান। প্রতি বছর মোটা অঙ্কের অর্থ আয় হয় লিচুর বাগান থেকে। চলতি বছর ঠাকুরগাঁওয়ের পাঁচ উপজেলায় ৯৮০ হেক্টর জমিতে প্রায় তিন হাজার বাগানে লিচু চাষ হয়েছে। বর্তমানে লিচুর বাগানগুলো মুকুলে ছেয়ে গেছে।

জেলার বেশিরভাগ লিচুর বাগানে বর্তমানে মৌমাছির বাক্স বসিয়ে মধূ সংগ্রহ করছেন মৌ খামারিরা। ঠাকুরগাঁও-রুহিয়া সড়কের পাশে উত্তর ঠাকুরগাঁও এলাকায় অবস্থিত লিচু বাগানগুলোতেও কয়েকজন মৌ খামারি বাগানে ছোট বড় বিভিন্ন আকৃতির বাক্স বসিয়ে মৌ চাষ করে মধু সংগ্রহ করছেন। তারা জানান, তাদের উৎপাদিত মধু খাঁটি ও নির্ভেজাল। তাই এসব মধু এপি ডাবরসহ বিভিন্ন কোম্পানি কিনে নিয়ে যায়। তবে তারা স্থানীয় মানুষের মাঝে বিক্রি করতে বেশি আগ্রহী।

আব্দুল ওহাব, আব্দুর রশিদ নামে কয়েকজন চাষি জানান, বাগান মালিকদের আহ্বানে তারা প্রায় ২০ থেকে ২৫টি খামাররি দল ঠাকুরগাঁওয়ের বিভিন্ন বাগানে এসেছেন। ১০ থেকে ১৫ দিন অন্তর অন্তর প্রতিটি বাক্স থেকে চাষিরা ছয় থেকে মণ মধু সংগ্রহ করেন। একদিকে মধু সংগ্রহ করেন, অপরদিকে গ্রাফটিংয়ের মাধ্যমে নতুন রানী উৎপাদন করছেন। তবে এ বছর আবহাওয়ার বিরুপ প্রভাবের কারণে মধু সংগ্রহ অনেকটা কম।

ঠাকুরগাঁও শহরের গোবিন্দনগর মহল্লায় নুরে আলমের লিচুর বাগানটি এলাকার সবচেয়ে বড় বাগান। এখানে শতাধিক লিচু গাছ থাকায় কয়েকজন মৌ চাষি সেই বাগানে ছোট বড় বিভিন্ন আকৃতির বাক্স বসিয়ে মৌ চাষ করছেন।

বাগান মালিক আব্দুল কাইউম ও নূর ইসলাম জানান, যে বছর বাগানে মৌমাছির চাষ করা হয় সেবছর গাছে বেশ ভাল মুকুল আসে। ভাল ফল আসে এবং লিচুর আবাদ ভাল হয়। মৌ চাষের ফলে কীটনাশকের ব্যবহার তেমন করা হয় না। ফুলে ফুলে মৌমাছির মধু সংগ্রহের পরাগায়ন ঘটায় লিচুর ফলন ও আকার ভাল হয়। এটা কৃষকদের জন্য লাভজনক।

কাঠের তৈরি বাক্সের মাধ্যমে মৌ চাষের দৃশ্য দেখে এলাকাবাসীও উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে ছুটে আসেন মধু কেনার জন্য লিচুর বাগানে। ক্রেতারা জানান, বাজারে খাঁটি মধু পাওয়া যায় না। তাই নির্ভেজাল মধু সংগ্রহ করতে পেরে তারা নিজেকে ধন্য মনে করছেন।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক খন্দকার মাওদুদুল ইসলাম জানান, চলতি বছর ঠাকুরগাঁও জেলায় ৯৮০ হেক্টর জমিতে লিচুর আবাদ হয়েছে। প্রতি বছর গড়ে তিন হাজার মেট্রিক টন লিচু এ জেলায় উৎপাদন হয়। চলতি বছর জেলার প্রায় সব বাগানেই ভ্রাম্যমাণ মৌ চাষিদের মধু চাষ করতে দেখা যায়। ইতোমধ্যে প্রায় দুইশ কেজি মধু সংগ্রহ করা হয়েছে। লিচু গাছ থেকে মৌমাছি মধু আহরণের ফলে গাছে গাছে বেশি করে পরাগায়ন হয়। এতে কৃষক ও মৌ খামারি উভয়েই লাভবান হচ্ছেন।

(ঢাকাটাইমস/১৮এপ্রিল/প্রতিনিধি/জেডএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :