শ্রীপুরে ভেজাল খাবার ও নকল ওষুধে হুমকিতে জনজীবন
গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলায় অবাধে বিক্রি হচ্ছে অনুমোদনহীন ও মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ, ভেজাল খাবার। আর তাতে বিপন্ন জনজীবন। এ ছাড়া প্রশাসনের তদারকি না থাকায় কাঁচাবাজারসহ বিভিন্ন পণ্যের দাম ইচ্ছেমতো বাড়িয়ে মানুষের পকেট কাটছেন দোকানিরা।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, উপজেলায় বিভিন্ন জায়গায় গড়ে উঠেছে অনুমোদনহীন ওষুধের দোকান, ভেজাল খাবারের হোটেল।
ওষুধপাড়ায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ওষুধের অনুমোদনহীন ও লাইসেন্সবিহীন অনেক দোকান গড়ে উঠেছে। চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ছাড়াই পাওয়া যায় সব ধরনের ওষুধ। অনেক সময় সহজ-সরল রোগীদের জোর করে নামে-বেনামে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ দেওয়া হয়। এসব ওষুধের মধ্যে রয়েছে যৌন উত্তেজক ট্যাবলেট বা সিরাপ, ব্যথানাশক ট্যাবলেট, বলবর্ধক ট্যাবলেট বা সিরাপ ইত্যাদি।
এ ছাড়া ডিআর (ড্রাগ রেজিস্ট্র্রেশন) নম্বরবিহীন বিভিন্ন ধরনের খাদ্য সম্পূরক (ফুড সাপ্লিমেন্ট) দেদার বিক্রি হতে দেখা গেছে। উপজেলার নয়নপুর বাজারে একটি ওষুধের দোকানের সামনে কোম্পানির এক সরবরাহকারীর সঙ্গে কথা হয়। পরিচয় গোপন রাখার শর্তে তিনি জানান, উপজেলার বেশ কয়েকটি বাজারে ঔষধের দোকানে যৌন উত্তেজক, ব্যথানাশক ও শক্তিবর্ধক ওষুধ দেদার বিক্রি হচ্ছে।
পরিচয় গোপন রেখে নয়নপুর বাজারের এক ওষুধ ব্যবসায়ীর কাছে ভারতীয় একটি যৌন উত্তেজক ট্যাবলেটের দাম জানতে চাইলে তিনি এর দাম ৫০ টাকা বলে জানান। অথচ বাস্তবতা হলো এই ট্যাবলেট কেনা হয় ৫ টাকা করে।
এদিকে ভেজাল খাবার আর কাঁচা বাজারের চিত্র আরো ভয়াবহ। উপজেলার বিভিন্ন বাজারের অলি-গলিতে গড়ে উঠেছে নিম্নমানের, অপরিষ্কার ও সস্তা প্রকৃতির কিছু খাবার হোটেল। নেংরা-অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে রান্না করা হয় খাবার। বাইরে পাতিল খোলা ফেলে রাখা হয়, তাতে কুকুর, বিড়ালসহ বিভিন্ন জন্তু খাবার তৈরির ওই পাতিলে মুখ দিচ্ছে। এগুলো আবার তেমন একটা পরিষ্কার না করে ব্যাবহার করা হচ্ছে খাবার তৈরির কাজে।
পিয়ার আলী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের অধ্যক্ষ সহযোগী অধ্যাপক একেএম আবুল খায়ের বলেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম যদি প্রশাসন নিয়ন্ত্রণ করতে না পারে, তাহলে সাধারণ মানুষের পক্ষে স্বাভাবিক জীবন যাপন করা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়বে। স্থানীয় প্রশাসন মাসে কয়েকবার বাজার নিয়ন্ত্রণ ও নকল ওষুধের ওপর অভিযান পরিচালনা করলে হয়তো এই বিড়ম্বনা থেকে রেহাই মিলতো। তাহলে ভেজাল খাবার, নকল ওষুধ যেমন কমে আসবে তেমনি বাজারদর স্বাভাবিক হয়ে যাবে। জীবনযাত্রার মান আরো অগ্রগতি হবে।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ মাহমুদুল হাসান ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘ব্যথানাশক ও যৌন উত্তেজক ওষুধ প্রকাশ্যে বিক্রির বিষয়টি উদ্বেগজনক।
এদের বিরুদ্ধে অভিযান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, প্রশাসন উদ্যোগ নিলে আমরা তাদের সহযোগিতা করতে পারি। আমরা সরাসরি নকল ওষুধের অভিযানে ভ্রাম্যমাণ আদালত চালাতে পারি না।
এ বিষয়ে শ্রীপুর উপজেলা প্রশাসনের দায়িত্বশীল কেউ বক্তব্য দিতে রাজি হননি। উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে গেলেও কর্মকর্তা রেহেনা আকতারকে পাওয়া যায়নি। পরে তাঁর মোঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও তিনি ফোন ধরেননি।
(ঢাকাটাইমস/১৯এপিল/মোআ)
মন্তব্য করুন