এরশাদ খালাস যে কারণে

প্রকাশ | ১৯ এপ্রিল ২০১৭, ১৭:১১ | আপডেট: ১৯ এপ্রিল ২০১৭, ১৮:৫৪

আদালত প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
ফাইল ছবি

ক্ষমতায় থাকাকালে বিমানের জন্য রাডার ক্রয় দুর্নীতি মামলায় জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদসহ চার আসামি খালাস পাওয়ার পেছনে রাষ্ট্রপক্ষের অদক্ষতা দায়ী। আসামিদের খালাস দিয়ে বিচারক বলেছেন, রাষ্ট্রপক্ষ গুরুত্বপূর্ণ নথি ও সাক্ষী হাজিরে ব্যর্থ হওয়ায় এরশাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ করা যায়নি।

মামলা করার ২৫ বছর পর বুধবার ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক কামরুল হোসেন মোল্লা এই আদেশ দিয়েছেন। এই মামলায় জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের মতো খালাস পেয়েছেন আরও তিন আসামি। এরা হলেন বিমান বাহিনীর সাবেক প্রধান সুলতান মাহমুদ, মমতাজ উদ্দিন আহমদ ও ইউনাইটেড ট্রেডার্স লিমিটেডের পরিচালক একেএম মুসা। আসামিদের মধ্যে মুসা পলাতক থাকা অবস্থায় মারা যান।

১৯৯৫ সালের ১২ আগস্ট এরশাদসহ আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের পর ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত মামলার সুপ্রিম কোর্টের আদেশে স্থগিত ছিল। মামলার ১৮ বছর পর ২০১০ সালের ১৯ আগস্ট শুরু হয় বাদীর সাক্ষ্যগ্রহণ।

রায়ের পর্যবেক্ষণে বিচারক বলেছেন, মামলাটিতে দুদকের পক্ষ থেকে গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষীকে আদালতে উপস্থাপন করা হয়নি। মামলায় ৩৮ জন সাক্ষীর মধ্যে ১২ জনকে আদালতে উপস্থাপন করতে সক্ষম হয়েছে দুদক। মামলায় অব্যাহতি পাওয়া এক আসামির স্বীকারোক্তি গ্রহণ করা ম্যাজিস্ট্রেটসহ চারজন গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী ছিল যাদের দুদক আদালতে উপস্থাপন করতে সক্ষম হয়নি।

এছাড়া আদালতে দুদক যেসব সাক্ষী উপস্থাপন করেছেন তারা ক্রয়কৃত রাডারের মান নিয়ে কোনো প্রশ্ন উত্থাপন করেননি। বরং ক্রয়ের পর থেকে রাডার ভালভাবে সেবা দিয়ে আসছে বলে সাক্ষ্য দিয়েছেন। তাই ফ্রান্সের থমসন কোম্পানির রাডারের তুলনায় ক্রয়কৃত যুক্তরাষ্ট্রের ওয়েস্টিং কোম্পানির রাডার তুলনামূলক ভাল বলেই প্রতীয়মান নয়।

রায়ের পর্যবেক্ষণে আরও বলা হয়, মামলার আসামি এরশাদ রাষ্ট্রপতি হিসেবে শুধুমাত্র রাডার ক্রয়ের বিষয়টি ফরমাল অনুমোদন করেছেন। অন্যদিকে আসামিদের বিরুদ্ধে পরস্পর সহযোগিতায় সরকারের ৬৪ কোটি ৪ লাখ ৪২ হাজার ৯১৮ টাকা আর্থিক ক্ষতির মাধ্যমে আত্মসাৎ করেছেন অভিযোগ করা হলেও কে কতো টাকা আত্মসাৎ করেছেন, কীভাবে করেছেন তা বলা হয়নি। এছাড়া কোনো সাক্ষী তা আদালতেও বলেননি। তাই আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তাদের বেকসুর খালাস দেয়া হলো।

রায় ঘোষণার সময় এরশাদসহ তিন আসামি আদালতে উপস্থিত ছিলেন। তবে রায় ঘোষণার পরই বেরিয়ে যাওয়ায় তাদের কারো প্রতিক্রিয়া নেয়া সম্ভব হয়নি।

তবে এরশাদের আইনজীবী শেখ সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘রায়ে আমার মক্কেল ন্যায়বিচার পেয়েছেন।’ তিনি বলেন, মামলাটি ছিল রাজনৈতিক। তৎকালীন সরকারের রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হওয়ায় মামলাটি করা হয়েছিল।

রায়ে প্রতিক্রিয়ায় দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর আব্দুস সালাম বলেন, রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি হাতে পেলে তা পর্যালোচনার পর আপিলের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

রায় ঘোষণার সময় এরশাদের সঙ্গে ছিলেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব জিএম কাদের, মন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, এমপি অধ্যাপক নূরুল ইসলাম মিলন, সালাহ উদ্দিন মুক্তি, মশিউর রহমান রানা, আবু হোসেন বাবলা, কাজী ফিরোজ রশিদ প্রমুখ।

এরশাদের আরেক আইনজীবী সামসুদ্দিন বাবুল জানান, এ মামলায় (রাডার) খালাস পাওয়ায় এখন তার (এরশাদ) বিরুদ্ধে জেনারেল মঞ্জুর হত্যা মামলা বিচারাধীন থাকল। তবে রাষ্ট্রপতি থাকাকালে বিভিন্ন উপহার সামগ্রী রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা না দেওয়ার মামলায় আগামী ৯ মে হাইকোর্ট আপিলের রায় ঘোষণা করবেন।’

এর আগে গত ১২ এপ্রিল দুদক ও আসামিপক্ষে যুক্তি উপস্থাপন শেষে রায় ঘোষণার জন্য ১৯ এপ্রিল দিন ধার্য করেন বিচারক।

ঢাকাটাইমস/১৯এপ্রিল/আরজে/ডব্লিউবি