হারাতে বসেছে কালীগঞ্জের বাঁশ-বেত শিল্প

রাহেবুল ইসলাম টিটুল, কালিগঞ্জ (লালমনিরহাট)
 | প্রকাশিত : ২০ এপ্রিল ২০১৭, ০৯:৫৯

লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলায় বাঁশ ও বেত শিল্পের তৈরি বিভিন্ন জিনিস এখন হারিয়ে যাওয়ার পথে। গ্রামগঞ্জ থেকে হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী বাঁশের তৈরি বিভিন্ন নিত্য প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র। অভাবের তাড়নায় এই শিল্পের কারিগররা দীর্ঘদিনের বাপ-দাদার পেশা ছেড়ে আজ অনেকে অন্য পেশার দিকে ছুটছেন। তবে শত অভাব-অনটনের মাঝেও উপজেলায় হাতেগোনা কয়েকটি পরিবার আজও পৈত্রিক এই পেশাটি ধরে রেখেছেন।

সরেজমিনে দেখা গেছে, বর্তমানে উপজেলার জামির বাড়ী, শ্রুতিধর, ভুল্লারহাটসহ ২০-৩০টি পরিবারই বর্তমানে এই শিল্পটি ধরে রেখেছেন। পুরুষদের পাশাপাশি সংসারের কাজ শেষ করে নারী কারিগররাও বাঁশ দিয়ে পণ্য তৈরি করছেন।

বর্তমানে বেত তেমন সহজলভ্য না হওয়ায় বাঁশ দিয়েই বেশি এসব পণ্য তৈরি করছেন এই কারিগররা।

দিনদিন বিভিন্ন জিনিসপত্রের মূল্য যেভাবে বাড়ছে, তার সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে না এই শিল্পের তৈরি বিভিন্ন পণ্যের মূল্য। যার কারণে কারিগররা জীবন-সংসারে টিকে থাকতে হিমশিম খাচ্ছেন। কয়েক দশক আগে নওগাঁ জেলাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে চালান হতো এই কারিগরদের তৈরি বাঁশ ও বেতের পণ্যগুলো। এক সময় ছিল দেশের ঘরে ঘরে ছিল বাঁশের তৈরি এসব সামগ্রী। কালের আর্বতনে বিশেষ আর চোখে পড়ে না এই পণ্যগুলো। অপ্রতুল ব্যবহার আর বাঁশের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় বাঁশ শিল্প আজ হুমকির মুখে।

বাঁশ ও বেত থেকে তৈরি সামগ্রী বাচ্চাদের দোলনা, তালায়, র‌্যাখ, পাখা, ঝাড়, টোপা, ডালী, মাছ ধরার পলি, খলিশানসহ বিভিন্ন প্রকার আসবাবপত্র গ্রামঞ্চলের সর্বত্র বিস্তার ছিল। এক সময় যে বাঁশ ২০ থেকে ৩০ টাকায় পাওয়া যেত, সেই বাঁশ বর্তমান বাজারে কিনতে হচ্ছে দুইশ থেকে আড়াইশ টাকায়। কিন্তু বাড়েনি এসব পণ্যের দাম।

উপজেলার জামির বাড়ী শ্রুতিধর ভুল্লারহাট কারিগর হামিদুল ইসলাম, বেলাল হোসেন, আব্বির আলী, জশির আলী, আকতার আলীসহ অনেকে জানান, এই গ্রামের হাতেগোনা আমরা কয়েকটি পরিবার আজও এ কাজে নিয়োজিত আছি। একটি বাঁশ থেকে ১০-১২টি ডালি তৈরি হয়। সকল খরচ বাদ দিয়ে প্রতিটি পণ্য থেকে ১০-২০ টাকা করে লাভ থাকে। তবে আগের মত আর বেশি লাভ হয় না এখন। তাই এই সীমিত লাভ দিয়ে পরিবার চালানো অতি কষ্টের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

তারা জানান, তারা নিজেরাই বিভিন্ন হাটে গিয়ে ও গ্রামে-গ্রামে ফেরি করে এসব পণ্য বিক্রয় করে থাকেন।

তারা আরও জানান, খেয়ে না খেয়ে অতি কষ্টে ধার-দেনা ও বিভিন্ন সমিতি থেকে বেশি লাভ দিয়ে টাকা নিয়ে কোন রকম বাপ-দাদার এই পেশাকে আকঁড়ে জীবিকা নির্বাহ করে আসছি। আমাদের এই শিল্পটির উন্নতিকল্পে যদি সরকারিভাবে অল্প লাভে ঋণ দেয়া হয়, তাহলে বাঁশ শিল্পের কারিগররা স্বাবলম্বী হবে আর হারিয়ে যাওয়া এই শিল্পটিকে টিকিয়ে রাখতে সক্ষম হবে।

(ঢাকাটাইমস/২০এপ্রিল/প্রতিনিধি/এলএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :