দরপত্রে আটকে আছে ফেনীর দুটি দীঘির কাজ
ফেনী শহরের রাজাঝির দীঘি ও বিজয় সিংহ দীঘির সৌন্দর্য বর্ধন কাজ শুরু হয়েও ফের দরপত্র প্রক্রিয়ায় আটকে আছে। জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্টের অর্থায়নে রাজাঝির দীঘি ৩ কোটি ৭১ লাখ টাকা ব্যয়ে সৌন্দর্য বর্ধন ও ২ কোটি ২৯ লাখ টাকা ব্যয়ে বিজয়সিংহ দীঘির পাড় সৌন্দর্য বর্ধনে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে ফেনী পৌরসভা। ইতোমধ্যে দীঘির পাড়ের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্র জানায়, ঐতিহাসিক এ দুই দীঘিকে নান্দনিক বিনোদন স্পট তৈরি করতে অর্থ বরাদ্দ দেয় পরিবেশ মন্ত্রণালয়। জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্টের অর্থায়নে পরিবেশ মন্ত্রণালয় ৬ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। চলতি মাসে টেন্ডার প্রক্রিয়ার সম্পন্নের কথা রয়েছে।
পৌরসভা সূত্র জানায়, ইতোমধ্যে প্রস্তাবিত প্রকল্প পরিবেশ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের ডিও লেটার পেলেই চলতি মাসের মধ্যে দরপত্র আহবান করা হতে পারে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী মাসের মধ্যে পুরোদমে কাজ শুরু হতে পারে।
ওই সূত্র আরো জানায়, প্রথমপর্যায়ে রাস্তা কার্পেটিং ও ওয়ার্ক ওয়ে করা হবে। পর্যায়ক্রমে লাইটিং, বাগানসহ সৌন্দর্যবর্ধন করা হবে। দীঘির চারপাশের সীমানা প্রাচীর ভেঙে পার্কিং ব্যবস্থা গড়ে তোলা হবে। পুরো প্রকল্প শেষ করতে ২০১৯ সাল পর্যন্ত সময় বেঁধে দেয়া হতে পারে বলে পৌরসভার দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানায়।
জানা গেছে, দুটি দীঘির পাড়ের সৌন্দর্য বর্ধন কাজ একযোগে শুরু হবে।
ফেনী পৌরসভার প্যানেল মেয়র-১ আশ্রাফুল আলম গীটার ঢাকাটাইমসকে জানান, দরপত্র প্রক্রিয়া অনেকদূর এগিয়েছে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী মাসের মধ্যে কাজ শুরু করা হতে পারে।
জানতে চাইলে ফেনী পৌরসভার মেয়র হাজী আলাউদ্দিন বলেন, শিগগিই সৌন্দর্য বর্ধনের কাজ শুরু করা হবে। এজন্য পৌর কর্তৃপক্ষ আন্তরিকভাবে চেষ্টা করছে।
এর আগে গত বছরের ১৮ ডিসেম্বর রাজাঝি দীঘির পাড় অবৈধ দখলমুক্ত করা হয়। পরদিন থেকে সৌন্দর্য বর্ধন প্রকল্পের কাজের শুরু হলেও দীর্ঘ প্রায় ৫ মাস ধরে কাজ বন্ধ রয়েছে। এতে জনমনে নানা প্রশ্ন উঠেছে। একই সাথে অবৈধ দখলদাররা আগের মতো পাড়ের উপর অস্থায়ী দোকান করছে। এর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে।
সম্প্রতি জেলা উন্নয়ন সমন্বয় সভায় জেলা প্রশাসক মো. আমিন উল আহসান এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরে বলেছেন, রাজাঝি দীঘির পাড়ের উচ্ছেদকৃত হকারদের পুনর্বাসনে পৌরসভা উদ্যোগ গ্রহণ করবে।
দীঘিকে ঘিরে অবৈধ টং দোকানের কারণে সৌন্দর্য হারায়। পথচারী ও স্কুল-কলেজ শিক্ষার্থীদের পথ চলাচলে বিড়ম্বনার শিকার হন। জেলা প্রশাসন ও পৌরসভার কর্তৃপক্ষ একাধিকবার অভিযান চালালেও কোন সুফল মেলেনি। অভিযানের পরই তারা আবার দোকান তৈরি শুরু করে।
১৫ ডিসেম্বর রাজাঝি দীঘির পাড়ে অবৈধ স্থাপনা ভেঙে ফেলার নির্দেশ দেন জেলা প্রশাসক মো. আমিন উল আহসান। নির্দেশ অনুযায়ী ১৬ ডিসেম্বর ব্যবসায়ীদের ব্যক্তিগত উদ্যোগে স্থাপনা ও মালামাল সরিয়ে নিতে মাইকিং করা হয়। ১৭ ডিসেম্বর ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে অবৈধ টং দোকান গুঁড়িয়ে দেয় তৎকালীন সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পিকেএম এনামুল করিম।
পথচারীরা জানায়, দুটি দীঘির পাড়কে জেলার শ্রেষ্ঠ নান্দনিক বিনোদন পার্ক হিসেবে গড়ে তোলা হলে ভ্রমনার্থীদের সমাগম বাড়বে। শিশু থেকে সব বয়সী লোকজন আনন্দ উপভোগ করতে পারবেন। দিনের কর্মব্যস্ততা সেরে বিকাল থেকে সন্ধ্যা অবধি সময় কাটাবে।
পথচারী দেলোয়ার হোসেন ও সালাহ উদ্দিন ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, উচ্ছেদের পরদিন সৌন্দর্য বর্ধনের কাজ শুরু করে আশার সৃষ্টি করলেও দীর্ঘদিনেও কাজ শুরু করা হয়নি। এতে করে হকাররা টং দোকানের আদলে প্লাস্টিক বিছিয়ে পসরা সাজিয়েছেন। যেহেতু রাস্তার এক পাশ সংস্কার কাজের জন্য ভাঙা, সেহেতু ফুটপাতে নির্বিঘ্ন চলাচল ব্যাহত হচ্ছে।
(ঢাকাটাইমস/২০এপ্রিল/প্রতিনিধি/এলএ)
মন্তব্য করুন