ভারপ্রাপ্তের আশঙ্কায় ঢাকা উত্তর বিএনপি

প্রকাশ | ২১ এপ্রিল ২০১৭, ০৮:০৬ | আপডেট: ২১ এপ্রিল ২০১৭, ১১:২০

বোরহান উদ্দিন, ঢাকাটাইমস

দীর্ঘদিন ধরে দল ও সহযোগী সংগঠন গোছানোর কাজ করছে বিএনপি। সর্বশেষ উত্তর-দক্ষিণ ভাগ করে ঢাকা মহানগরের দুই কমিটি ঘোষণা করেছে দলটি।

এ ঘটনায় স্বভাবতই নেতাকর্মীদের মধ্যে চাঙা ভাব বিরাজ করছে। নতুন নেতারা ফুলেল শুভেচ্ছা নিচ্ছেন নেতাকর্মীদের কাছ থেকে। তবে এমন উদযাপন ঢাকা দক্ষিণের চেয়ে অনেক কম উত্তরে। অনেকটা চুপচাপ উত্তরের নেতাকর্মীরা। তারা এখন ‘ভরপ্রাপ্ত’র আশঙ্কায়।

তৃণমূলে কথা বলে জানা গেছে, অনেক দিন বাইরে থাকার পর নতুন সাধারণ সম্পাদক দেশে ফিরেছেন। নতুন সভাপতি আব্দুল কাইউম নানা মামলায় আসামি হয়ে এখন বিদেশে। আন্দোলন কর্মসূচিতে নাশকতার অভিযোগে করা অসংখ্য মামলার পাশাপাশি ইতালির নাগরিক তাবেল্লা সিজার হত্যা মামলার প্রধান আসামি তিনি। অদূর ভবিষ্যতে তার দেশে ফেরার সম্ভাবনা কম।

কাইউমের অবর্তমানে সাধারণ সম্পাদক আহসান উল্লাহ হাসানকে (হাসান কমিশনার) ঘিরে নেতাকর্মীদের উচ্ছ্বাস চলছে। তবে তিনিও শিগগিরই মালয়েশিয়ায় যেতে পারেন বলে গুঞ্জন আছে নেতাকর্মীদের মধ্যে।

কমিটি ঘোষণার পর এমন গুঞ্জনে নেতাকর্মীদের মধ্যেই প্রশ্ন উঠেছে, বিদেশে বসে কীভাবে দল চালাবেন নতুন নেতারা?

অবশ্য তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগে সরাসরি না থাকলেও বিদেশে বসে সংগঠন গোছানো সম্ভব বলে মনে করছেন নবনির্বাচিত নেতারা।

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর আন্দোলনে ব্যর্থতার কারণে সাদেক হোসেন খোকার নেতৃত্বাধীন মহানগর কমিটি ভেঙে দেয় বিএনপি। এরপর ওই বছর ১৮ জুলাই দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসকে আহ্বায়ক করে ৫২ সদস্যের কমিটি ঘোষণা করা হয়। ছয় মাসের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল তাদের। 

এর দুই বছর ৮ মাস পর ঢাকাকে দুই ভাগে ভাগ করে নতুন কমিটি দিল বিএনপি।

খালেদা জিয়ার নির্দেশে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মঙ্গলবার মধ্যরাতে ঢাকা দক্ষিণের ৭০ সদস্যের এবং উত্তরের ৬৪ সদস্যের এই আংশিক কমিটি অনুমোদন করেন।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে,তারেক রহমানের পছন্দে মহানগর দক্ষিণের সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন কাইয়ুম। মহানগরের সাবেক সভাপতি সাদেক হোসেন খোকার লোক হিসেবে তিনি পরিচিত। তবে খোকার অনুপস্থিতিতে মির্জা আব্বাসের সঙ্গেও তার ভালো সম্পর্ক তৈরি হয়েছে বলে জানা গেছে।

যেভাবে কাইয়ুমের উত্থান

১৯৯১ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত বিএনপির এলজিআরডি মন্ত্রী আবদুস সালাম তালুকদারের করণিক ছিলেন কাইয়ুম। সেই থেকে তার ‘অতি ধনাঢ্য’ হয়ে ওঠা অনেকের কাছে রহস্যই বটে। ১৯৯১ সাল থেকে শুরু। বিএনপি ক্ষমতায় এলে আলোচনায় আসতে থাকেন তিনি। বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলেন। ‘ক্যাডারভিত্তিক’ রাজনীতিতে সক্রিয় হন বলে জানা গেছে। প্রথমে ওয়ার্ডে পদ পেলেও পরে বাড্ডা থানার পদ পান। সিটি করপোরেশনের কমিশনারও ছিলেন। পরে সাদেক হোসেন খোকার ঘনিষ্ঠ পরিচয়ে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য করা হয় তাকে। সবশেষ ঢাকা মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন তিনি।

বিএনপির রাজনীতিতে বেশ প্রভাব বিস্তারি কাইউমকে ২০১৫ সালে ইতালির নাগরিক তাভেল্লা সিজার হত্যা মামলায় আসামি করে পুলিশ।  ইতিমধ্যে মামলার চার্জ গঠন হয়েছে। তবে এরই মধ্যে দেশ ছাড়েন কাইউম। বর্তমানে তিনি মালয়েশিয়াতে অবস্থান করছেন বলে বিভিন্ন মাধ্যম নিশ্চিত করেছে।

এদিকে কমিটি ঘোষণার পর দেখা গেছে সাবেক সভাপতি সাদেক হোসেন খোকাপন্থী নেতাদের আধিক্য। ঢাকা মহানগর দক্ষিণের মতো উত্তরেও কম যোগ্যতা আর নেতাকর্মী থেকে বিচ্ছিন্ন অনেক নেতাকেই গুরুত্বপূণ পদে রাখা হয়েছে। অন্যদিকে মামলা-হামলার শিকার হয়েছেন,জেল খেটেছেন এমন অনেককে পদ দেয়া হয়নি। তেজগাঁও এলাকার আনোয়ারুজ্জামান আনোয়ারকে শুরুতে পদ দেয়া হয়নি। এ নিয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে বেশ ক্ষোভ দেখা দেয়ায় বুধবার রাতে নতুন করে তাকে পদ দেয়া হয়েছে।

ঢাকা মহানগর উত্তরের রাজনীতিতে সক্রিয় বিএনপির অঙ্গসংগঠনের এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘সভাপতির দেশে ফেরার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। সাধারণ সম্পাদক বিদেশে যাওয়া-আসার মধ্যেই থাকেন। এখন আছেন শুনতেছি আবার যেতে পারেন। তাহলে দল চালাবে কে? তাদের যোগ্যতা থাকলেও সব সময় দেশে থাকেন এমন কাউকে শীর্ষ দুই পদে আনলে ভালো হতো।’

ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রদলের একজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘নতুন সাধারণ সম্পাদকও যদি বিদেশ চলে যান তাহলে তো ভারপ্রাপ্ত দিয়ে চলতে হবে। সে ক্ষেত্রে আন্দোলন সংগ্রামের বদলে নেতাকর্মীদের ঝিমিয়ে পড়ার সম্ভাবনাই বেশি।’

অবশ্য নেতাকর্মীদের এমন উদ্বেগ মানতে নারাজ বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

বিদেশে থাকা নেতারা কীভাবে দল চালাবেন ঢাকাটাইমসের পক্ষ থেকে এমন প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ‘মিথ্যা মামলার কারণে দূরে সরে আছেন এমন নেতাদের মধ্যে যাদের এ (উত্তর) কমিটিতে রাখা হয়েছে তারা যে ভূমিকা রাখতে পারবেন না তা নয়। বরং তারাও একটি বড় ভূমিকা রাখবেন বলে বিশ্বাস করি। অতীত ইতিহাস বলে, শুধু যে কাছে থাকলেই ভূমিকা রাখা যাবে তা নয়। এতে আরো আন্দোলন বেগবান হবে।’

দূরে থাকলেও সেটা তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে পুষিয়ে নেবেন বলে জানান আব্দুল কাউয়ুম। দায়িত্ব পাওয়ার পর  তিনি বলেন, ‘তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগে নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করা খুব কঠিন কাজ নয়। আমার সঙ্গে সব সময় সবার যোগাযোগ আছে। আশা করি দূরে থাকলেও কোনো সমস্যা হবে না।’

এদিকে সাধারণ সম্পাদক আহসান উল্লাহ হাসানের সঙ্গে কথা বলতে একাধিকবার যোগাযোগ করলেও তিনি ফোন ধরেননি।

(ঢাকাটাইমস/২১এপ্রিল/বিইউ/মোআ)