কেনো এতো ভয় মমতার?

প্রকাশ | ২১ এপ্রিল ২০১৭, ১০:২২

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, ঢাকাটাইমম

দলীয় কাজে ওড়িশা গিয়েছিলেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। সেখানে গিয়েই সোজা চলে যান পুরির জগন্নাথ মন্দিরে। পুজো দেওয়ার পর মমতা জানান, তিনিই প্রকৃত হিন্দু, আর বিজেপি হিন্দু ধর্মের জন্য 'লজ্জা-অভিশাপ' কারণ তারা ধর্মকে কাজে লাগিয়ে মানুষে মানুষে বিভেদ তৈরি করছে।

এর আগে রাজনীতির জন্য মন্দির দর্শনের তেমন কোনো নজির নেই মমতার।কিন্তু এখন কেন জগন্নাথের মন্দিরে গিয়ে গলা উঁচিয়ে নিজের হিন্দু পরিচয় দিতে উদ্যোগী হলেন তিনি?

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক মানচিত্রে জায়গা করে নিতে উদগ্রীব হয়ে পড়েছে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দল বিজেপি। উত্তর প্রদেশের মত রাজ্য, যেখানে ২০ শতাংশ জনগোষ্ঠী মুসলিম, সেখানে অভাবনীয় নির্বাচনী সাফল্যের পর পশ্চিমবঙ্গের ব্যাপারেও আরো আশাবাদী হয়েছে তার দল বিজেপি।

কলকাতায় রাজনীতির শিক্ষক এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষক বিমল শঙ্কর নন্দ বলেন, ‘মমতা এখনও বাংলায় অত্যন্ত জনপ্রিয়...পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে এখনও হিন্দুত্ববাদের প্রভাব সামান্যই। তবে সন্দেহ নেই তার কাঁধে নিঃশ্বাস ফেলার চেষ্টা করছে বিজেপি।’

বিজেপির সেই প্রয়াস খুব অস্পষ্টও নয়। মমতা যখন জগন্নাথের মন্দিরে পুজো দিচ্ছেন, ঠিক তখন তার শহর কলকাতায় বিজেপির শিক্ষামন্ত্রী স্মৃতি ইরানি এক সভায় মমতাকে ঘায়েল করার চেষ্টা করছিলেন। স্মৃতি বলেন, ‘তিন তালাক নিয়ে মমতা ব্যানার্জি চুপ কেন?’

‘মমতা আসলে মুসলিমদের তোষণ করেন’-বিজেপি নেতারা বেশ কিছুদিন ধরেই তা বলার চেষ্টা করেন। বৃহস্পতিবার কলকাতায় স্মৃতি ইরানিও সেদিকেই ইঙ্গিত করেছেন।

বিজেপি-র প্রতিরোধ উপেক্ষা করে জগন্নাথ মন্দিরে পুজো দেওয়ার পাশাপাশি পাল্টা আক্রমণ করে মমতা দাবি করেন, তাদের  থেকেও তিনি বেশি হিন্দু। ‘আমিই আসল হিন্দু। বিজেপি হিন্দুত্বের নামে কলঙ্ক’- বলেন মমতা।

আগামী সপ্তাহে তিন দিনের জন্য কলকাতায় আসছেন বিজেপির প্রভাবশালী প্রেসিডেন্ট অমিত শাহ। এ ধরনের মন্তব্য তখন তার কণ্ঠেও যে শোনা যাবে এতে সন্দেহ নেই।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, হিন্দুত্ববাদ রাজনীতি পশ্চিমবঙ্গে কতটা কাজ করবে? বিমল শঙ্কর নন্দ মনে করেন, কেউ স্বীকার করুক আর না করুক, ভারতে হিন্দুত্ববাদের একটা পূনর্জাগরণ ঘটছে। উত্তর প্রদেশের নির্বাচনে তা স্পষ্ট হয়েছে। সেখানকার মুসলমানদের কাছে ভোট না চেয়েও বিজেপির বিপুল বিজয় হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গে হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির প্রভাব এখনও তেমন নেই তবে পশ্চিমবঙ্গের ৭৫ শতাংশ হিন্দু সেই তত্ত্বে আজ না হলেও একসময় প্রভাবিত হতেই পারে।

তার কিছু নমুনাও সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গে দেখা গেছে। পূর্ব মেদিনীপুরে লোকসভার একটি উপনির্বাচনে আশাতীত ফল করেছে বিজেপি। চারগুণ ভোট বাড়িয়ে কংগ্রেস এবং সিপিএমকে পেছনে ফেলে দ্বিতীয় স্থানে ছিলেন বিজেপির প্রার্থী।

পর্যবেক্ষকরা বলেন, হিন্দুত্ববাদি রাজনীতি প্রচারে বিজেপি হয়তো সামনের দিনগুলোতে মমতাকে হিন্দু বিদ্বেষী এবং মুসলিম তোষক হিসাবে দেখানোর চেষ্টা করতে পারে। সেই উদ্বেগ থেকেই কি তার পুরির জগন্নাথ মন্দিরে দর্শন এবং নিজেকে সাচ্চা হিন্দু তকমা দেওয়ার চেষ্টা?

অধ্যাপক বিমল নন্দ বলেন, ‘ভারতের হিন্দুরা বিজেপিকেই হিন্দুত্ববাদের প্রতিনিধি হিসাবে স্বীকার করে নিয়েছে। সেই জায়গা নেওয়া অন্য কোনো দলের জন্য তেমন সুবিধা হবে না।’

জগন্নাথ মন্দিরে মমতার পুজো দেওয়া নিয়ে মঙ্গলবার এক সেবাইত আপত্তি তুলেছিলেন। পুরীর রাস্তায় রাস্তায় চক-খড়িতে লেখা ‘গো ব্যাক মমতা’ চোখে পড়েছে সবার। বিকালে মন্দিরে মমতার ঢোকার সময়ে ‘গো ব্যাক’ বলে বিক্ষোভও দেখান দুইজন। পুলিশি ঘেরাটোপে সবুজ পাড় কটকি শাড়িতে মন্দিরে ঢুকে পুরোহিত বিজয়কৃষ্ণ সিংহারির হাত দিয়ে পুজো দেন মমতা। বেরনোর মুখে আবার বিজেপি-র পতাকার সঙ্গে কালো পতাকা নিয়ে এক যুবক ‘ভারত মাতা কি জয়’ বলে হাজির হন গাড়ির সামনে। এতেই স্পষ্ট হিন্দুত্ববাদের নিঃশ্বাস পড়ছে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মূখ্যমন্ত্রী মমতার কাঁধে।

(ঢাকাটাইমস/২১এপ্রিল/জেএস)