ফ্রান্সে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে প্রভাবিত করবে জঙ্গি হামলা

প্রকাশ | ২১ এপ্রিল ২০১৭, ১৭:০২

ইউরোপ ব্যুরো, ঢাকাটাইমস

ফ্রান্সে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের মাত্র দুই দিন আগে রাজধানী প্যারিসে ‘জঙ্গি হামলা’র ঘটনা আসন্ন নির্বাচনকে অনেকটাই প্রভাবিত করবে বলে মনে করা হচ্ছে। নির্বাচনের একেবারে শেষ মুহূর্তে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে নিরাপত্তার বিষয়টি। এমনকি রবিবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রথম পর্যায়টি কিছুটা অনিশ্চয়তায় পড়েছে।

বৃহস্পতিবার রাতের ওই হামলার পর প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ১১ জন প্রার্থীই নিরাপত্তা বাহিনীর সম্মানে তাদের প্রচারণা বন্ধ রেখেছেন। প্রথম পর্যায়ে সবচেয়ে বেশি ভোট পাবেন যে দুই প্রার্থী, তাদের মধ্যে আগামী ৭ মে অনুষ্ঠিত হবে চূড়ান্ত লড়াই।

প্রচারণার কাজে আলপস ভ্রমণরত রক্ষণশীল প্রার্থী ফ্রাঁসোয়া ফিলন বলেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতিতে প্রচারণা চালানোর কোনো মানে হয় না। প্রথমেই আমাদের পুলিশের প্রতি সম্মান জানাতে হবে।’ তার দাবি, ‘ইসলামি কর্তৃত্ববাদের’ বিরুদ্ধে লড়াই করাটাই হবে তার সরকারের প্রধান কাজ।

কট্টর বামপন্থী প্রার্থী জ্যঁ-লুক মেলেঁকন বলেন, ‘আমাদের আরও নিশ্চিত তথ্যের জন্য অপেক্ষা করতে হলেও নাগরিক হিসেবে আমাদের দায়িত্ব পালন করা উচিত। আমরা যেন ভীত না হয়ে পড়ি। নির্বাচন যেন বিঘ্নিত না হয়, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখা উচিত।’

গত সপ্তাহে অভিবাসীদের সংখ্যা কমিয়ে আনার ঘোষণা দিয়ে সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করা লি পেনও মুখ খুলেছেন সর্বশেষ হামলার ঘটনা নিয়ে। তিনি বলেন, ‘ইসলামি জঙ্গিবাদের শিকার হই আমরা, আমি তা চাই না। আমাদের নরম হওয়া চলবে না। আমরা শিশুদের এমন দেশে রাখতে চাই না যে দেশ তাদের নিরাপত্তা দিতে পারে না।’

এর আগে দিনের শুরুতে ম্যাক্রনও গুলির ঘটনা নিয়ে কথা বলেন। তিনি জানান, ফরাসি প্রেসিডেন্টের প্রথম কাজ হবে জনগণকে নিরাপত্তা দেওয়া।

আগে থেকেই ফরাসি রাজনীতিতে জঙ্গিবাদ একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। ফলে নির্বাচনের  প্রাক্কালে এ হামলার ঘটনা প্রভাব বিস্তার করতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। ২০১৫ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ফ্রান্সে জঙ্গিবাদের শিকার হয়ে নিহত হয়েছে অন্তত ২৩৮ জন।

এবারের নির্বাচনের জনমত জরিপে দেখা গেছে, মধ্যপন্থী ইমানুয়েল ম্যাক্রন এবং উগ্র ডানপন্থী মেরিন লে পেন খানিকটা এগিয়ে আছেন।

ফ্রান্সের ক্ষমতা এর আগে পর্যন্ত মধ্য-বামপন্থী এবং মধ্য-ডানপন্থী প্রার্থীদের মধ্যে থাকলেও এবার তাতে ছেদ পড়তে যাচ্ছে বলেই মনে করা হচ্ছে।

সাবেক ব্যাংকার ম্যাক্রন গত বছর আগস্টে অর্থমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে নিজেই পৃথকভাবে নির্বাচনের ঘোষণা দেন। জনমত জরিপে তিনিই সবার চেয়ে এগিয়ে। তবে অন্য প্রার্থীদের সঙ্গে তার ব্যবধান এতটাই কম যে, শেষ পর্যন্ত যেকোনো ফলই সামনে আসতে পারে।

মেলেঁকন হঠাৎ করেই সামনে এসেছেন। জনমত জরিপে তিনি শীর্ষ দুই প্রার্থীর চেয়ে কয়েক শতাংশ পিছিয়ে আছেন বলে জানা গেছে।

সর্বশেষ বৃহস্পতিবারের একটি জনমত জরিপ অনুসারে, নির্বাচনী লড়াইয়ে এগিয়ে রয়েছে ম্যাক্রন ও লি পেন। যদিও তাদের দুজনের মধ্যকার ব্যবধান আগের চেয়ে বেড়েছে। ম্যাক্রন ২৪ দশমিক ৫ শতাংশ আর তার পেছনে ২১ শতাংশ সমর্থন নিয়ে রয়েছেন লি পেন। আর প্রচারণার শুরুতে জনপ্রিয় ফিলন ২০ শতাংশ এবং মেলেঁকন ১৯ শতাংশ সমর্থন পেয়েছেন জরিপে।

স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার রাত নয়টার দিকে চালানো ওই হামলায় এক পুলিশ সদস্য নিহত এবং আরও দু’জন আহত হন। নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে সন্দেহভাজন হামলাকারী নিহত হয়েছে বলে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়। হামলার দায় স্বীকার করেছে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন আইএস।

ওই হামলার পর ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওলাঁদ জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে বলেন, তিনি এটিকে ‘জঙ্গি হামলা’ বলে ধারণা করছেন। হামলার পরপরই তিনি এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেন। তিনি নিরাপত্তা বাহিনীর প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানান এবং নিহত পুলিশ সদস্যকে জাতীয় সম্মান জানানোর ঘোষণা দেন। এ নিয়ে একটি জঙ্গিবাদবিরোধী তদন্ত শুরু করেছে কর্তৃপক্ষ। সূত্র: রয়টার্স। 

(ঢাকাটাইমস/২১এপ্রিল/মোআ)