যৌতুক না পেয়ে স্ত্রীকে হত্যার হুমকি পুলিশ কর্মকর্তার!

প্রকাশ | ২১ এপ্রিল ২০১৭, ১৮:১২

জামালপুর প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
এসআই বিল্লাল হোসেন

জামালপুর পুলিশ লাইন্সের সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) মো. বিল্লাল হোসেন যৌতুকের টাকা না পেয়ে স্বেচ্ছায় তালাক দিতে রাজি না হওয়ায় তার স্ত্রী সহিদাতুজ জান্নাতকে এসিড মেরে অথবা গাড়িচাপা দিয়ে হত্যার হুমকি দিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। সহিদাতুজ জান্নাত বর্তমানে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। তিনি তার স্বামীর অধিকার ফিরে পাওয়াসহ জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে লিখিত আবেদন জানিয়েছেন। অন্যথায় তিনি আত্মহত্যার পথ বেছে নেবেন বলে জানিয়েছেন।  তবে পুলিশ কর্মকর্তা এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেছেন, তাকে হয়রানির জন্যই এসব করা হচ্ছে।

জানা গেছে, গৃহবধূ সহিদাতুজ জান্নাতের বাড়ি জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার সানন্দবাড়ী এলাকায়। তিনি জামালপুর সরকারি আশেক মাহমুদ কলেজে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে মাস্টার্স শ্রেণির ছাত্রী। ২০১৫ সালে একটি অনুষ্ঠানে জামালপুর পুলিশ লাইন্সে কর্মরত পুলিশ কনস্টেবল বিল্লাল হোসেনের সাথে পরিচয় হয়। তার বাড়ি শেরপুর সদর উপজেলার হালগড়া গ্রামে। বিল্লাল হোসেন পরবর্তী সময়ে সহিদাতুজ জান্নাতের কাছে ফোন করে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলেন এবং বিয়ের প্রস্তাব দেন। গত বছরের অক্টোবরে বিল্লাল হোসেন কনস্টবল থেকে এএসআই পদে পদোন্নতি পান। চাকরিতে পদোন্নতি হওয়ার পর বিল্লাল হোসেন সহিদাতুজ জান্নাতকে বিয়ে করে জামালপুর শহরে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকার প্রস্তাব দেন। মাস্টার্স পরীক্ষার কথা বলে সময় চাইলে বিল্লাল খুব শিগগির বদলি হয়ে যাবেন বলে তাকে জানান। এক পর্যায়ে তিনি মেয়েটির বাড়িতে গিয়ে তার স্বজনদের কাছে বিয়ের প্রস্তাব দেন। এতে উভয় পক্ষের সম্মতিতে গত বছরের ৫ নভেম্বর ছয় লাখ টাকার দেনমোহর উল্লেখ করে তাদের দুজনের বিয়ে নিবন্ধন হয়। বিয়ের চারদিন পর বিল্লাল হোসেন তার স্ত্রীকে পাঁচ লাখ টাকা যৌতুক এনে দিতে বলেন এবং ১০ দিনের মধ্যে না দিতে পারলে তাকে তালাক দেয়ার হুমকি দেন বলে অভিযোগ করেন জান্নাত।

সহিদাতুজ জান্নাত এ নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় পড়েন। পরিবারের সদস্যদের সাথে আলোচনা করে তিনি বিল্লাল হোসেনের বিরুদ্ধে যৌতুক নিরোধ আইনে জামালপুর আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। পুলিশের চাকরি হারানোর ভয়ে বিল্লাল হোসেন গত ৫ জানুয়ারি সংশ্লিষ্ট আদালতে হাজির হয়ে আইনজীবীর মাধ্যমে তিনি সহিদাতুজ জান্নাতকে তার স্ত্রী হিসেবে স্বীকার করে তাকে নিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে সংসার করবেন, আর কখনো অত্যাচার করবেন না, এমনকি কখনো যৌতুক দাবি করবেন না বলে মুচলেকা দিয়ে জামিনে মুক্ত হন।

ওই দিনই বিল্লাল তাকে আদালত প্রাঙ্গণ থেকেই গ্রহণ করে শহরের একটি হোটেলের কক্ষ ভাড়া নিয়ে দাম্পত্য জীবন শুরু করেন। কিছু দিন না যেতেই বিল্লাল হোসেন তাকে স্বেচ্ছায় তালাক দেয়ার জন্য চাপ দিতে শুরু করেন। কিন্তু জান্নাত স্বেচ্ছায় তালাক দিতে রাজি না হওয়ায় তাকে এসিড মেরে অথবা গাড়িচাপা দিয়ে হত্যার হুমকি দেন পুলিশ কর্মকর্তা। এতে তিনি মানসিক যন্ত্রণা ও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। তিনি তার স্বামীর অধিকার ফিরে পাওয়াসহ জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে লিখিত আবেদন জানিয়েছেন।

এ বিষয়ে সহিদাতুজ জান্নাত ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আমি আমার স্বামীকে প্রচণ্ড ভালোবাসি। তার সাথে আমি সংসার করতে চাই। স্বামীর ভালোবাসা ও সামাজিক সম্মান হারিয়ে আজ আমি নিঃস্ব। মানসিকভাবে আমি মৃত্যুর দিকে ধাবিত হচ্ছি। তাই বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটলে আমার আত্মহত্যা করা ছাড়া আর কোনো রাস্তা খোলা থাকবে না।’

অপরদিকে পুলিশের এএসআই মো. বিল্লাল হোসেন ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘সহিদাতুজ জান্নাত আমার স্ত্রী। তাকে আমি নির্যাতন করিনি। কোনো হুমকিও দেইনি। আমি তার কাছে যৌতুকের টাকার জন্য চাপও দেইনি। আমাকে হয়রানি করার জন্য মিথ্যা অভিযোগে সে আমার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে। এরপরও আমি আদালতে মুচলেকা দিয়ে তাকে স্ত্রীর অধিকার দিয়েই চলেছি।’

পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘স্বেচ্ছায় তালাক দিতেও আমি বলিনি। আমি তার সাথে এসব বিষয়ে নিয়ে আপসে থাকার দৃষ্টিভঙ্গিতে কথা বলতে চাইলে সে রাজি হয় না। উল্টো মামলার বিচারে যা হয় হবে বলে আমাকে জানিয়ে দিয়েছে। সে আসলে আমাকে হয়রানি করার জন্যই এসব করছে।’

(ঢাকাটাইমস/২১এপ্রিল/প্রতিনিধি/জেবি)