বুড়ি তিস্তা বাঁচাতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা
তিস্তা নদীর পানির জন্য আন্দোলনের মধ্যে বুড়ি তিস্তা উদ্ধারে আওয়াজ উঠেছে। ‘বুড়ি তিস্তা নদী বাঁচাও, উলিপুর বাঁচাও’ এই স্লোগানে কয়েক মাস ধরে কুড়িগ্রামের উলিপুরের নারী-পুরুষ, কৃষক কৃষানি. জেলে-তাঁতী. কামার-কুমার, ছাত্র/ছাত্রীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা সভা সমাবেশ চালিয়ে আসছে। তারপরও জেলা প্রশাসন ও জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের টনক নড়ছে না। এজন্য তিস্তার প্রবেশ মুখ থেতরাই স্লুইচ গেট বুড়ি তিস্তা থেকে উলিপুর গুনাইগাছ ব্রিজ-ব্রহ্মপুত্র নদী পর্যন্ত বুড়ি তিস্তার নদীর অবৈধ দখল উদ্ধারে প্রধানমন্ত্রী, পানিসম্পদ মন্ত্রী, সচিব এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের ডিজির বরাবরে লিখিত আবেদন দিয়েছে উলিপুর সমিতি, ঢাকা।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক প্রকৌশলী মো. জাহাঙ্গীর কবীর বলেন, আমি লিখিত আবেদন পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বলেছি। তারপর আমরা ঢাকা থেকে তিন সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল ঘটনাস্থল পরির্দশন করবো। তাদের প্রতিবেদন পাওয়ার পরে বুড়ি তিস্তা উদ্ধারে কাজ করা হবে।
সংগঠনের সভাপতি হাবিবুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক এম ওমর ফারুক স্বাক্ষরিত লিখিত আবেদন গত ১০ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী, পানিসম্পদ মন্ত্রীসহ বিভিন্ন দপ্তরে দেয়া হয়।
লিখিত আবেদনে বলা হয়, কুড়িগ্রাম জেলার উলিপুর উপজেলায় ব্রিটিশ আমল থেকে তিস্তা নদীর প্রবেশ মুখ থেতরাই (পুরাতন স্লুইচ গেট) থেকে শুরু করে দলদলিয়ার অর্জুন, ঘাটিয়ালপাড়া, উলিপুর পৌরসভার নারিকেল বাড়ি ভায়া হয়ে গুণাইগাছ ব্রিজ তবকপুর-বজরা- চিলমারী ব্রহ্মপুত্র নদে প্রবাহিত হয় বুড়ি তিস্তা। ব্রিটিশ আমলে থেতরাই বন্দর থেকে বড় বড় নৌকা বুড়ি তিস্তা দিয়ে চলাচল করতো। ব্যবসায়ীরা ধান, চাল, পাট বোঝাই নৌকা গুনাইগাছ ব্রিজের কাছে আটকে রেখে উলিপুরে ব্যবসা করতো। আবার অনেক ব্যবসায়ী ধান, চাল, পাট বোঝাই নৌকা নিয়ে ব্রহ্মপুত্র নদী দিয়ে জামালপুর জেলার সরিষাবাড়ীতে ব্যবসা করতে যেতেন। এছাড়া আদিকাল থেকে বুড়ি তিস্তা নদীতে হাজার হাজার কৃষক সনাতন পদ্ধতিতে পাট জাগ দিতো। এ বুড়ি তিস্তা নদীতে ঐতিহ্যবাহী নৌকা বাইচ ও জেলেরা মাছ ধরতো। বুড়ি তিস্তা নদীর দুই পাড়ের কৃষকরা শ্যালো মেশিন দিয়ে পানি তুলে ইরি-আমনসহ বিভিন্ন ফসল আবাদ করতো। পরে বুড়ি তিস্তা নদী রক্ষায় ১৯৭৭ সালে থেতরাই সুইচ গেট থেকে উলিপুর গুনাইগাছ ব্রিজ পর্যন্ত খনন প্রকল্প নেয়া হয়। ওই সময় নদীর দুই ধারের জমির মালিকদেরকে সরকার কোটি কোটি টাকা দিয়ে জমি খনন করে। সেই জমির মালিকরা সরকারি টাকা নেয়ার পরেও জমি বাদেও অবৈধভাবে বুড়ি তিস্তা দখল করে চাষাবাদ করে আসছে। তাদের অবৈধ দখলের কারণে থেতরাই থেকে উলিপুর গুনাইগাছ ব্রিজ- ভায়া হয়ে ব্রহ্মপুত্র নদের প্রবাহ পথ বন্ধ থাকায় পানি নিষ্কাষণ হচ্ছে না। সামান্য বৃষ্টি হলে উলিপুর উপজেলার বিশাল একটি অংশ পানিতে তলিয়ে যায়। অথচ সরকার কোটি কোটি টাকা বুড়ি তিস্তা নদীর সংস্কারের জন্য ব্যয় করেছে। ১৯৯৩ সালে তিস্তা তীব্র ভাঙনে থেতরাই পরাতন স্লুইচ গেটটি বিলিন হয়ে যায়।
পরবর্তী সময়ে আবারও ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পরে বুড়ি তিস্তা খনন প্রকল্প চালু করে। এরপরে ২০০২ সালে আবারো একটি প্রকল্প চালু করা হয়। কিন্তু পানি উন্নয়ন বোর্ডের কিছু কর্মকর্তার কারণে প্রকল্পটি বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু দুঃখের বিষয় বুড়ি তিস্তা নদীর সেই ঐতিহ্য আর নেই। থেতরাই থেকে গুনাইগাছ ব্রিজ পর্যন্ত বুড়ি তিস্তা নদী অবৈধ দখলে থাকার কারণে এলাকার হাজার হাজার কৃষক তার পাট জাগ দিতে পারছে না, জেলেরা মাছ ধরতে পারছে না, সাধারণ মানুষ গোসল করতে পারছে না এবং কৃষক পানি নিয়ে ইরি-আমনসহ বিভিন্ন ফসল আবাদ করতে পারছে না। বর্তমানে পানির জন্য মরুভূমিতে পরিণত হয়েছে। তাই তিস্তা নদীর প্রবেশ মুখ থেতরাই (পুরাতন) স্লুইচ গেট থেকে উলিপুর গুনাইগাছ ব্রীজ- তবকপুর-বজরা এবং ব্রহ্মপুত্র মুখ পর্যন্ত বুড়ি তিস্তার নদী অবৈধ দখল উদ্ধার ও খননের প্রকল্পের নির্দেশনা প্রদানের জন্য আবেদন জানানো হয়।
(ঢাকাটাইমস/২১এপ্রিল/জেবি)
মন্তব্য করুন