ত্বকীর খুনি কারা জানি: শামীম ওসমান

প্রকাশ | ২১ এপ্রিল ২০১৭, ২১:০৬ | আপডেট: ২১ এপ্রিল ২০১৭, ২১:০৯

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস

নারায়ণগঞ্জের আলোচিত ত্বকী হত্যার সঙ্গে জড়িত কারা সেটা জানেন সংসদ সদস্য শামীম ওসমান। তবে তিনি এমপি বলে সেটা প্রকাশ করতে পারছেন না। শিগগির এ ব্যাপারে সংবাদ সম্মেলন করবেন বলে জানিয়েছেন তিনি।

শুক্রবার জুমার পর নগরীর ডিআইটি জামে মসজিদের সামনে ‘নারায়ণগঞ্জের সবস্তরের ধর্মপ্রাণ মুসলামান’দের ব্যানারে এক সমাবেশে এ কথা বলেন শামীম ওসমান। 

সাংসদ বলেন, ‘আমি রফিউর রাব্বির বিরুদ্ধে কথা বললে অনেকে বলবে তার ছেলে মরেছে তাই বলছি। আমি কয়েক দিনের মধ্যে প্রেস কনফারেন্স করে রাব্বির ছেলে হত্যার বিচার চাইবো।’

রাব্বি ইসলামের কটূক্তি করেছেন এমন অভিযোগ এনে সাংসদ বলেন, ‘আমি জানি রাব্বি কোন শক্তির বলে এসব কথা বলে। এমপি বলে সবার নাম বলতে পারি না। হাত পা বাঁধা। আপনার পেছনে যেসব শক্তি আছে তাদের জন্য আমার হাতের চুটকিই যথেষ্ট।’

২০১৩ সালের ৬ মার্চ নারায়ণগঞ্জ শহরের শায়েস্তা খান রোডের বাসা থেকে বের হয়ে নিখোঁজ হয় মেধাবী স্কুলছাত্র ত্বকী। এর দুই দিন পর ৮ মার্চ শহরের চারারগোপ এলাকায় শীতলক্ষ্যা নদীর তীর থেকে তার মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় ওই দিন রাতেই ত্বকীর বাবা রফিউর রাব্বি বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে সদর মডেল থানায় একটি মামলা করেন।

পরে এই হত্যার ঘটনায় সাংসদ ও আওয়ামী লীগের নেতা শামীম ওসমান, তাঁর ছেলে অয়ন ওসমান, ভাতিজা আজমেরী ওসমান, জেলা যুবলীগের বহিষ্কৃত নেতা জহিরুল ইসলাম পারভেজ ওরফে ক্যাঙারু পারভেজ, জেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি রাজীব দাস, সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান, সালেহ রহমান সীমান্ত ও রিফাতকে দায়ী করে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ দেন ত্বকীর বাবা রফিউর রাব্বি। তবে শামীম ওসমান বরাবরই এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

ত্বকী হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে র‌্যাব ইউসুফ হোসেন ওরফে লিটন, সুলতান শওকত ও তায়েবউদ্দিন ওরফে জ্যাকিকে গ্রেপ্তার করে। তাদের মধ্যে ইউসুফ ও সুলতান শওকত ১৬৪ ধারায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। প্রথমে মামলাটি পুলিশ তদন্ত করে। কিন্তু পরে পুলিশের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ তোলেন ত্বকীর বাবা। পরবর্তী সময়ে হাইকোর্টের নির্দেশে র‌্যাব তদন্ত শুরু করে।

এ হত্যাকাণ্ডের প্রথম বার্ষিকীতে ২০১৪ সালের মার্চ মাসে র‌্যাব সদরদপ্তরের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা গণমাধ্যমকর্মীদের বলেছিলেন, ত্বকী হত্যাকাণ্ডে আজমেরী ওসমানসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে তথ্যপ্রমাণ পাওয়া গেছে। যেকোনো দিন এই হত্যা মামলার অভিযোগপত্র দেয়া হবে। কিন্তু সেই অভিযোগপত্র আজও দেয়া হয়নি।

ত্বকীর বাবা রফিউর রাব্বি নারায়ণগঞ্জের নাগরিক সমাজের নেতা। ওসমান পরিবারের প্রতিদ্বন্দ্বী নারায়ণগঞ্জের মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীকে সমর্থন করেন তিনি। শামীম ওসমানের সঙ্গে রাব্বির বিরোধী দীর্ঘদিনের। 

রফিউর রাব্বী ধর্ম অবমাননা করেছেন এমন অভিযোগ তুলে শামীম ওসমান আজকের সমাবেশে তার বিরুদ্ধে মাঠে নামার ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি বলেন, প্রশাসন যদি রাব্বির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেয়, তাহলে আল্লাহকে খুশি করতেই মাঠে নামবেন তিনি। 

ত্বকী হত্যায় তাকে জড়িয়ে লেখালেখির কারণে একটি পত্রিকার নাম উল্লেখ করে সমালোচনা করে নারায়ণগঞ্জের আলোচিত এই এমপি। পত্রিকাটি তার পেছনে লেগে আছে বলে জানান তিনি।

গত ৭ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জে এক সাংস্কৃতিক সংগঠনের অনুষ্ঠানে রাব্বী বলেন, ‘যদি বাংলার মানুষ জানতো সংবিধান বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম দিয়ে শুরু হত, দেশ হবে সাম্প্রদায়িকতার দেশ, তাহলে ৩০ লাখ শহীদ মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করতো না’। এই বক্তব্যের পর হেফাজতের এক নেতা মামলা করেছেন রাব্বীর বিরুদ্ধে। আর এরপর থেকে হেফাজতের নেতাদের নিয়ে রাব্বীর বিরুদ্ধে নানা বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন শামীম ওসমান।

হেফাজতে ইসলাম নারায়ণগঞ্জ জেলা শাখার আহ্বায়ক মাওলানা আব্দুল আউয়ালের সভাপতিত্বে সমাবেশ বক্তব্য দেন মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার সামিউল্লাহ মিলন, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান ও মহানগর বিএনপি সহ-সভাপতি আবুল কালাম আজাদ বিশ্বাস, রাব্বির বিরুদ্ধে করা মামলার বাদী ও হেফাজতের নারায়ণগঞ্জ জেলা শাখার সমন্বয়ক ফেরদাউসুর রহমান প্রমুখ। 

(ঢাকাটাইমস/২১এপ্রিল/প্রতিনিধি/জেবি)