‘মূর্তি ঢেকে রাখার তামাশা জনগণ মানবে না’

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ২২ এপ্রিল ২০১৭, ১৮:১২

সর্বোচ্চ আদালতের সামনে স্থাপিত গ্রিক দেবীর ভাস্কর্যকে ‘মূর্তি’ আখ্যায়িত করে শীর্ষ আলেমরা বলেছেন, ‘এই মূর্তি আদালত প্রাঙ্গণ থেকে সরাতে হবে। এটা এখানে রেখে ঈদের নামাজের সময় ঢেকে রাখার যে কথা শোনা যাচ্ছে তা দেশের জনগণ কখনো মেনে নেবে না।’ যে দেশের প্রায় ৯০ ভাগ মুসলমান সে দেশের সর্বোচ্চ আদালতের সামনে মূর্তি থাকতে পারে না বলেও মন্তব্য করেন বক্তারা।

ইসলামি ঐতিহ্য সংরক্ষণ কমিটির আহ্বানে শনিবার কামরাঙ্গীরচরের জামিয়া নূরিয়ায় অনুষ্ঠিত জাতীয় ওলামা-মাশায়েখ সম্মেলনে বক্তারা এসব কথা বলেন। স্বাধীনতাবিরোধী আখ্যায়িত করে ঢাকার দুটি রাস্তা থেকে হাফেজ্জী হুজুর ও মাওলানা আমিমুল ইহসানের নাম মুছে ফেলার প্রতিবাদে ডাকা হয় এই সম্মেলন।

ইসলামী খেলাফত আন্দোলনের আমির মাওলানা শাহ আতাউল্লাহর সভাপতিত্বে সম্মেলনে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ কওমি মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ড বেফাকের সহসভাপতি শায়খুল হাদিস আল্লামা আশরাফ আলী, হেফাজত ঢাকা মহানগর আমির মাওলানা নূর হুসাইন কাসেমী, ইসলামী আন্দোলনের নায়েবে আমির মুফতি সৈয়দ ফয়জুল করীম, ইসলামী ঐক্য আন্দোলনের আমির ড. ঈসা শাহেদী, ইসলামী ঐতিহ্য সংরক্ষণ কমিটির সদস্য সচিব ও বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মাওলানা মাহফুজুল হক, খেলাফত মজলিসের নায়েবে আমির মাওলানা মুজীবুর রহমান পেশওয়ারী, মহাসচিব ড. আহমাদ আব্দুল কাদের, জামিয়া মুহাম্মদিয়ার প্রিন্সিপালা মাওলানা আবুল কালাম, দৈনিক ইনকিলাবের সিনিয়র সহকারী সম্পাদক মাওলানা উবায়দুর রহমান খান নদভী, জামিয়া ইউনুছিয়া ব্রাহ্মণবাড়িয়ার প্রিন্সিপাল মুফতি মোবারকুল্লাহ, কমিটির সমন্বয়কারী ও বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের মহাসচিব মাওলানা হাবিবুল্লাহ মিয়াজী, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক, মাওলানা আবুল বাশার -পীর সাহেব শাহতলী, খেলাফত আন্দোলনের নায়েবে আমির মাওলানা মুজিবুর রহমান হামিদী, চকবাজার শাহী মসজিদের খতিব মাওলানা মিনহাজ উদ্দীন, মাওলানা সানাউল্লাহ, নেজামে ইসলাম পার্টির যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মূসা বিন ইজহার, হেফাজত গাজীপুর আমির মাওলানা মাসউদুল করীম, হুফফাজুল কুরআনের সহসভাপতি মাওলানা নূরুর রশীদ, মাওলানা সাঈদুর রহমান, খেলাফত আন্দোলনের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আবু তাহের, মো. রোকনুজ্জামান রোকন, মাওলানা আতাউর রহমান আরেফী, মুফতি ইলিয়াস মাদারীপুরী, মুফতী ফখরুল ইসলাম, মাওলানা তাফাজ্জুল হোসাইন, মাওলানা ফিরোজ আশরাফী, মাওলানা আব্দুর রহিম শাকের, মুফতি বশীরুল্লাহ, মাওলানা মাসউদুর রহমান বিক্রমপূরী, মাওলানা তৈয়ব আল হুসাইনী, মুফতি আব্দুর রহিম কাসেমী, মাওলানা মাহবুবুর রহমান ও মাওলানা মো. ফয়সাল প্রমুখ।

মাওলানা আতাউল্লাহ বলেন, ‘হজরত হাফেজ্জী হুজুর রহ. ছিলেন সর্বজনমান্য বুজুর্গ ও শ্রদ্ধেয় আলেমেদ্বীন। ওলামায়ে কেরামের মুরুব্বি এবং তাদের রুহানি পিতা। তওবার রাজনীতির প্রবর্তন, আধ্যাত্মিক পথপ্রদর্শন, ইসলামি শিক্ষা, ইসলাম প্রচার-প্রসার, ও আদর্শ সমাজ গঠনে তাঁর বহুমূখী অবদান জাতির কাছে চির স্মরণীয় হয়ে আছে।’

হাফেজ্জী হুজুরের ছেলে বলেন, ‘ইসলাম প্রচার প্রসারে হজরত হাফেজ্জী হুজুর রহ. দেশে অগণিত মসজিদ-মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করে গেছেন। যা থেকে হাজার হাজার আদর্শ নাগরিক দেশবাসীকে উপহার দিয়েছে এবং দিচ্ছে। মজলিসে দাওয়াতুল হক্বের মাধ্যমে মুসলিম উম্মাহকে ভ্রান্ত আকিদা থেকে মুক্ত করে সঠিক সুন্নতের শিক্ষা-দীক্ষার কাজ করেন। তাসাওউফের মাধ্যমে তিনি জাতিকে নৈতিক উন্নতির সন্ধান দেন।’

হাফেজ্জী হুজুর সম্পর্কে আতাউল্লাহ বলেন, ‘তিনি জীবনের শেষ দিকে তওবার রাজনীতির ডাক দিয়ে খেলাফত আন্দোলন প্রতিষ্ঠা করেন। এভাবে বাংলাদেশে ইসলামি রাজনীতির বন্ধের দুয়ার উন্মুক্ত হয়ে একটি আদর্শিক রাজনৈতিক ধারা চালু হয়। এরপরও শাহরিয়ার কবির, মুনতাসির মামুনসহ হজরত হাফেজ্জী হুজুর রহ. এর নাম স্বাধীনতাবিরোধীদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছে এবং সড়কের নামফলক থেকে তাঁর নাম বাদ দিতে উস্কানি দিয়েছে। তারা ইসলামবিরোধী জাতীয় বেয়াদব। এদের চিহ্ণিত শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।’

মাওলানা আতাউল্লাহ আরও বলেন, ‘হজরত হাফেজ্জী হুজুর ও মুফতি আমীমুল ইহসান রহ. এর নাম সড়কের নামফলকে পুনঃস্থাপন না করলে এবং স্বাধীনতাবিরোধীদের তালিকা থেকে তাদের নাম প্রত্যাহার না করলে সারাদেশে আন্দোলনের দাবানল ছড়িয়ে পড়বে।’

আল্লামা আশরাফ আলী বলেন, ‘হাফেজ্জী হুজুর ও আমীমুল ইহসান রহ. কে স্বাধীনতাবিরোধীদের তালিকায় অন্তর্ভুক্তকরণ নিষ্পাপ শিশুকে অপবাদ দেয়ার নামান্তর। অবিলম্বে স্বাধীনতাবিরোধীদের তালিকা থেকে তাঁদের নাম প্রত্যাহার না হলে এবং তাদের নামে নামকরণকৃত সড়কগুলোতে তাদের নাম পুনর্বহাল না হলে সারাদেশে আন্দোলনের দাবানল জ্বলে উঠবে।’

আল্লামা নূর হুসাইন কাসেমী বলেন, ‘হাফেজ্জী হুজুর রহ. ছিলেন ইসলামী আন্দোলনের রাহবার ও পথিকৃৎ। তিনি রাজনীতির ময়দানে না এলে আজও ওলামায়ে কেরাম ইসলামের পক্ষে কথা বলতে পারতেন না। হজরত হাফেজ্জী হুজুর রহ. রাজনীতির ময়দানে আসার কারণেই বাংলাদেশে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম হয়েছে।’

মাওলানা উবায়দুর রহমান খান নদভী বলেন, ‘বর্তমান সরকারে গুরত্বপূর্ণ পর্যায়ে এমন ব্যক্তিরাও আছে যারা বঙ্গবন্ধুকে গাদ্দার বলেছে। তার চামড়া দিয়ে ডুগডুগি বাজানোর কথা বলেছে। পাক বাহিনীর মুরগি সরবরাহকারী খ্যাত শাহরিয়ার কবীবির আর রাজাকার পরিবারের সন্তান মুনতাসির মামুনের করা রিটের পরিপ্রেক্ষিতে রাস্তা থেকে হাফেজ্জী হুজুরের নাম সরানো হয়েছে। শুধু গ্রিক মূর্তি নয়, নবী-রাসূলদের মূর্তি স্থাপন হলেও তা ভেঙে দেয়া মুসলমানের ওপর ওয়াজিব। মূর্তি থাকবে মন্দিরে, গির্জা আর প্যাগোডায়, বুক ফুলিয়ে রাস্তা ঘাটে নয়। অবিলম্বে মূর্তি অপসারণ করতে হয়।’

মুফতি সৈয়দ ফয়জুল করীম বলেন, ‘ওলামায়ে কেরাম ঐক্যবদ্ধ থাকলে নাস্তিকরা মূর্তি স্থাপনের সুযোগ পাবে না। আমাদের আকাবিরদের নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে পারবে না। দাবি আদায়ে আওয়ামী লীগ-বিএনপির বাইরে ওলামায়ে কেরামের স্বতন্ত্র ঐক্যবদ্ধ প্লাটফর্ম সময়ের অপরিহার্য প্রয়োজন।’

ড. মাওলানা ঈসা শাহেদী বলেন, ‘হাফেজ্জী হুজুরের নাম স্বাধীনতাবিরোধী হিসেবে তালিকাভুক্ত, সুপ্রিম কোর্টের সামনে মূর্তি একই সূত্রে গাঁথা। প্রধানমন্ত্রী মূর্তি সরানোর ব্যাপারে আস্থা রাখতে বলেছেন। রমজানের আগে মূর্তি না সরালে আস্থা অনাস্থায় পর্যবসিত হবে। ভোটের রাজনীতি আর আন্তরিকতার পার্থক্য জনগণ বুঝে।’ ড. আহমদ আব্দুল কাদের বলেন, ‘সড়কে হাফেজ্জী হুজুর রহ. ও মুফতি আমীমুল ইহসান রহ. এর নাম পুনর্বহাল করতে হবে। শাহরিয়ার কবির, মুনতাসির মামুন, ইনু, বাদলদের প্রতিহত করতে হবে। দেশের বিরুদ্ধে ও ইসলামের বিরুদ্ধে তাদের অপকর্মের জন্য তাদেরকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে হবে।’

মুফতি মোবারক উল্লাহ বলেন, ‘স্বাধীনতা সংগ্রামে হাফেজ্জী হুজুরসহ ওলামায়ে কেরামের ভূমিকা ছিল উল্লেখযোগ্য। ষড়যন্ত্র করে প্রকৃত ইতিহাস আড়াল করা যাবে না। তরুণ প্রজন্মের কাছে স্বাধীনতা যুদ্ধে ওলামায়ে কেরামের অবদান সম্বলিত প্রকৃত ইতিহাস তুলে ধরতে হবে।’

মাওলানা আবুল কালাম বলেন, ‘হাফেজ্জী হুজুর রহ. এদেশের মুসলমানদের হৃদয়ের সম্রাট। তার ইজ্জতের ওপর আঘাতে কোটি মুসলমানের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ শুরু হয়েছে। সড়কের নাম মুছে দিয়ে জনগণের হৃদয় থেকে হাফেজ্জী হুজুরকে মোছা যাবে না।’

মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী বলেন, ‘মুনতাসির মামুন, শাহরিয়ার কবির গংসহ ইসলামবিরোধীদের এদেশে থাকতে হলে ৯৫% মুসলমানের আকিদা ও ধর্মবিশ্বাসের প্রতি শ্রদ্ধা ও সম্মান দিয়েই থাকতে হবে।’

ওলামা মাশায়েখ সম্মেলনের সভাপতির লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন- ইসলামী ঐতিহ্য সংরক্ষণ কমিটির সদস্য সচিব মাওলানা মাহফুজুল হক। তিনি আগামী দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করে বলেন, হাফেজ্জী হুজুর রহ. ও মুফতি আমীমুল ইহসান রহ. এর নাম স্বাধীনতাবিরোধী তালিকা থেকে বাতিল এবং সড়কের নাম পুনঃস্থাপন করতে হবে। অন্যথায় সারাদেশে আন্দোলনের দাবানল ছড়িয়ে পড়বে। তিনি দেশবাসীকে ঐক্যবদ্ধভাবে ঘোষিত কর্মসূচি সফল করার আহ্বান জানান।

কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে জেলা, উপজেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে মতবিনিময় সভা। রমজানে তারাবিহ, জুমা ও ইফতার মাহফিলে আলোচনার মাধ্যমে গণসচেতনতা সৃষ্টি। দাবি আদায় না হলে ঈদের পর মানববন্ধন, ঢাকা ঘেরাও ও জাতীয় মহাসমাবেশ।

(ঢাকাটাইমস/২২এপ্রিল/জেবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

জাতীয় এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :