শেরপুরে পাহাড়ি ঢলে ৮ ইউনিয়ন প্লাবিত

প্রকাশ | ২২ এপ্রিল ২০১৭, ১৯:১২

শেরপুর প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস

গত দুই দিনের অবিরাম বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে শেরপুরের ঝিনাইগাতী ও নালিতাবাড়ী উপজেলার ৮টি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। শুক্রবার রাত থেকে শুরু হয়ে শনিবার বিকাল পর্যন্ত অবিরাম বর্ষণ ও ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে মহারশী ও সোমেশ্বরী নদীর পানির স্রোতে দু’কূল উপচে ঝিনাইগাতী সদর, ধানশাইল, কাংশা, নলকুড়া,  গৌরীপুরসহ ৭টি ও নালিতাবাড়ীর রাজনগর ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়।

পানির তোড়ে এলাকার রাস্তাঘাট, কালভার্ট, কাঁচা-পাকা বাড়িঘরসহ বোরো ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

অন্যদিকে বেড়িবাঁধ সংস্কার না করায় শেরপুর-নালিতাবাড়ী সড়কের সন্নাসীভিটা বাজারে গাছের গুঁড়ি ও বাঁশ ফেলে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন ক্ষতিগ্রস্ত স্থানীয় কৃষকরা।

ক্ষয়ক্ষতি পর্যবেক্ষণ করতে শনিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ঝিনাইগাতী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সরেজমিন পরিদর্শন করেছেন।

স্থানীয়রা জানায়, গত দুই দিনের অবিরাম বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানিতে উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। ঢলের পানির তোড়ে রাস্তা-ঘাট, ভেঙে গেছে। মহারশি নদীর রামেরকুড়া এলাকার পুরনো ভাঙা অংশ দিয়ে ঢলের পানি প্রবেশ করে ঝিনাইগাতী উপজেলা পরিষদ চত্বর, কোর্ট বিল্ডিং, সাব-রেজিস্টি অফিস, পোস্ট অফিস চত্বর ও সদর বাজার বন্যার পানি প্রবেশ করে। কলস নদীর বুরুডুবি ভাঙা অংশ দিয়ে পানি প্রবেশ করে মালিঝিকান্দা ইউনিয়ন বন্যা কবলিত হয়ে পড়েছে।

মালিজিকান্দা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম তোতা জানান, তার ইউনিয়নের শতশত একর জমির বোরো ধান পানির নিচে তলিয়ে গেছে। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে ১০-১৫টি গ্রামের হাজারো মানুষ।

ঝিনাইগাতী সদর ইউপি চেয়ারম্যান মোফাজ্জল হোসেন বলেন, সদর ইউনিয়নের বেশির ভাগ এলাকা বন্যা কবলিত হয়ে পড়েছে। টানা বর্ষণ ও মহারশি, সোমেশ্বরী, কালঘোষা, মালিঝি নদীর পাহাড়ি ঢলের পানিতে উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে গ্রামবাসী। এছাড়া কান্দুলী, কোচনীপাড়া, বাগেরভিটা, দাড়িয়ারপাড়, কালিনগর, বালিয়াগাঁও, জরাকুড়া, পাইকুড়া, সুরিহাড়া, মাটিয়াপাড়া, পাগলারমুখ, বনগাঁও চতল গ্রামে আবাদ করা  বোরো ধান এখন পানি নিচে তলিয়ে আছে।

সুরিহাড়া গ্রামের কৃষক মো. হাসান আলী, সাদ্দাম মণ্ডল ও হাসেম আলী জানান, পাকা বোরো ধান পাহাড়ি ঢলের পানিতে তলিয়ে গেছে। এখন তারা দিশেহারা।

উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম বাদশা পানিবন্দী বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করে বলেন, এবার ১৪ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ করা হয়েছে। কালবৈশাখী ঝড় ও পাহাড়ি ঢলে অধিকাংশ জমির ধান ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এছাড়া বহু মানুষ এখন পানিবন্দী রয়েছে।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা কোরবান আলী বলেন,  বোরো ধানের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরুপনে কাজ চলছে।

অন্যদিকে, নালিতাবাড়ীতে গত বছরের ডিসেম্বরের ২০ তারিখে নবনির্মিত রাবারড্যামের রিজার্ভ পানির চাপে পুরনো নড়বড়ে বেড়িবাঁধের উত্তর সন্নাসীভিটা এলাকায় আকস্মিকভাবে বিধ্বস্ত হয়ে প্লাবিত হয় ওই গ্রামের বেশকিছু এলাকা। এতে ফসলের ক্ষতি ছাড়াও ঘর-বাড়ি বিনষ্ট হয় ও ভেসে যায় পুকুরের মাছ। তখন থেকেই বাঁধটি দ্রুত সংস্কারের দাবি করে আসছিলেন স্থানীয়রা। কিন্তু বাঁধটি সংস্কারের আগেই শনিবার সকালে ভারি বর্ষণে বিধ্বস্ত বাঁধ দিয়ে পানি প্রবেশ করে বন্যা কবলিত হয়ে পড়ে পড়ে ওইসব এলাকা।

স্থানীয় একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নাজমুল হক বলেন, ঢলের তীব্রতা বেশি থাকায় আবারও আকস্মিক বন্যার শিকার হলো উত্তর সন্নাসীভিটাসহ আশপাশের গ্রামের মানুষ। শতশত একর জমির উঠতি বোরো ধান তলিয়ে গেছে। ভেসে  গেছে বেশকিছু পুকুরের মাছ। বিধ্বস্ত হয়েছে ঘরবাড়ি, গাছপালা ও রাস্তাঘাট। বন্যার কবলে পড়ে স্থানীয় কমিউনিটি ক্লিনিক, ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্স, মসজিদসহ ঘরবাড়ি। খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে গবাদি পশুর। অনেকের ঘরে রান্না বন্ধ হয়ে যায়। ফলে দুর্ভোগ বাড়ে মানুষের।

এদিকে চা মাসেও বেড়িবাঁধ সংস্কার না করায় বিক্ষোভে ফেটে পড়ে স্থানীয় জনতা। শনিবার বেলা পৌণে এগারোটা থেকে প্রায় সাড়ে এগারোটা পর্যন্ত শেরপুর-নালিতাবাড়ী মহাসড়কের সন্নাসীভিটা বাজারে রাস্তার মাঝখানে বাঁশ বেঁধে ও গাছের গুড়ি ফেলে সড়ক অবরোধ করে। এসময় উভয়পাশে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যানজটের সৃষ্টি হয়।

(ঢাকাটাইমস/২২এপ্রিল/প্রতিনিধি/এলএ)