চাঁপাইনবাবগঞ্জে স্কুল ম্যাগাজিনে বৈশাখ পালন নিয়ে কটূক্তি

চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ২৩ এপ্রিল ২০১৭, ১৬:০৩

চাঁপাইনবাবগঞ্জের একটি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রকাশিত বার্ষিক ম্যাগাজিনে বাংলা নববর্ষ নিয়ে কটাক্ষ করে ভুল তথ্য উপস্থাপন ও সাম্প্রদায়িকতা ছড়ানোর অভিযোগ উঠেছে। এই অভিযোগে লেখকসহ জড়িতদের শাস্তির দাবিতে নাগরিক সমাজ আন্দোলনের কথা ভাবছে। জেলা প্রশাসন বিতর্কিত ওই ম্যাগাজিনের সমস্ত কপি উদ্ধার করে তা জব্দ করেছে। এ ব্যাপারে একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়েছে।

অভিযোগে বলা হয়, জেলা শহরের শত বছরের পুরনো হরিমোহন সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় ‘মঞ্জরী’ নামে একটি ম্যাগাজিন প্রকাশ করে। প্রকাশিত ম্যাগাজিনের সম্পাদক ও সহকারী শিক্ষক বাদরুল ইসলাম ‘বাংলা নববর্ষ ইতিহাস, উদযাপন-রীতি ও আমাদের সংস্কৃতি’ প্রবন্ধে বাংলা নববর্ষ নিয়ে কটাক্ষ করেন বলে অভিযোগ করা হয়।

প্রকাশিত ম্যাগাজিনে তিনি বাংলা নববর্ষ পালনের সময় বাংলাদেশে যেসব অনুষ্ঠানাদি পালিত হয় তাকে হিন্দু সংস্কৃতির প্রতিরূপ বলে আখ্যায়িত করেছেন। তিনি লিখেছেন, ‘বাংলা নববর্ষের নামে বর্তমানে যেসব অনুষ্ঠানাদির আয়োজন করা হয়, বাঙালি মুসলমানদের আবহমান সংস্কৃতি ও জীবনাচারের সঙ্গে তার কোনো সম্পর্ক নেই। বরং বাংলা নববর্ষের নামে একশ্রেণির বুদ্ধিজীবী ও সংস্কৃতিসেবী যা কিছু করছেন তা মূলত হিন্দু সংস্কৃতিরই প্রতিরূপ। বাঙালি সংস্কৃতির নামে তা চালাবার ও একে সার্বজনীন বাঙালি সংস্কৃতি বলে দাবি করা হলেও ৯০ ভাগ বাঙালি তথা বাংলাদেশি মুসলমানের ঈমান-আকিদা ও ধর্মীয় মূল্যবোধের সঙ্গে তা সঙ্গতিপূর্ণ নয়। এটা আমাদের জন্য বিজাতীয় অপসংস্কৃতি।’

এই প্রবন্ধটি নিয়ে জেলায় তোলপাড় শুরু হয়। এর প্রতিবাদ করেছেন জেলার সাংস্কৃতিক কর্মী, সুশীল সমাজ, শিক্ষাবিদ ও অভিভাবক মহল। অভিযুক্ত শিক্ষক বাদরুলসহ জড়িতদের শাস্তিরও দাবি জানান তারা।

একাধিক শিক্ষার্থী জানায়, শিক্ষক বাদরুলসহ বেশ কয়েকজন শিক্ষক শ্রেণিকক্ষে পাঠদানের সময় শিবিরের মতাদর্শের দীক্ষা দিয়ে আসছেন।

এ বিষয়ে সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও মুক্তিযোদ্ধা মনিম-উদ-দৌলা চৌধুরী জানান, এ বিদ্যালয়ের কিছু কিছু শিক্ষক শিক্ষার্থীদের বাঙালির প্রধান উৎসব নববর্ষকে ভিন্নভাবে উপস্থাপন করার জন্য প্রবন্ধটি প্রকাশিত করেন, যা রাষ্ট্র ও সমাজবিরোধী। এসব শিক্ষককে চারদলীয় জোট সরকারের আমলে নিয়োগ দিয়ে এ বিদ্যালয়কে জামায়াতকরণ করা হয়েছে। তারা সুকৌশলে শিক্ষার্থীদের মাঝে তাদের দলীয় মতাদর্শের বীজ ঢুকিয়ে দিচ্ছেন। তিনি আরও বলেন, দেশের প্রচলিত আইনে এসব শিক্ষকের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া উচিত।

অভিভাবক ফারুক হোসেন জানান, এ বিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষক শিক্ষার্থীদের মাঝে সাম্প্রদায়িকতার বীজ বপন করছেন। এছাড়া বিদ্যালয়টিতে বর্তমানে কয়েকজন জামায়াত-শিবিরপন্থী শিক্ষক দিয়ে নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

নাগরিক কমিটির সভাপতি ও জাসদ নেতা মনিরুজ্জামান মনির জানান, সাম্প্রদায়িক উস্কানিদাতা শিক্ষকরা সাবেক শিবির নেতা। তারা শিবিরের মূল্যবোধ নিয়ে শিক্ষকতা করছেন। তাদের কাছ থেকে শিক্ষার্থীদের সঠিক শিক্ষা পাওয়া নিয়েও শঙ্কা প্রকাশ করেন। এছাড়া অভিযুক্ত ওই শিক্ষকদের বিরুদ্ধে সঠিক তদন্ত করে বিচারের দাবি জানান।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল লতিফ জানান, বিতর্কিত প্রবন্ধটির দায়-দায়িত্ব লেখক শিক্ষক বাদরুলকেই বহন করতে হবে। এছাড়া শ্রেণিকক্ষে পাঠদানের সময় শিবিরের মতাদর্শের দীক্ষা দেয়া সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে তিনি জানান, প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদানের পর থেকে ওইসব শিক্ষকদের মাঝে জামায়াত-শিবির সম্পর্কিত কোনো কার্যক্রম চোখে পড়েনি।

এ ঘটনায় দায়ীদের শাস্তির দাবি জানিয়ে জেলার অভিভাবক, মুক্তিযোদ্ধা, সাংস্কৃতিক কর্মী, আইনজীবী, ছাত্র সংগঠনের নেতৃবৃন্দসহ ৩৫ জন নাগরিক স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিপত্র গত বৃহস্পতিবার জেলা প্রশাসক মাহমুদুল হাসানের কাছে জমা দেন।

ঘটনাটি জানাজানি হলে বিভিন্ন মহলের সমালোচনার মুখে জেলা প্রশাসকের নির্দেশে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা) এরশাদ হোসেন খানকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত কমিটি ইতিমধ্যে বিতর্কিত ম্যাগাজিনের সমস্ত কপি জব্দ করেন এবং ম্যাগাজিন সম্পাদনা পরিষদের সাতজনের সাক্ষ্যগ্রহণ করেন।

জেলা প্রশাসক মো. মাহমুদুল হাসান জানান, ম্যাগাজিন নিয়ে ইতিমধ্যেই একটি তদন্ত কমিটি কাজ শুরু করেছেন। তদন্ত কমিটির কাছে সংশ্লি¬ষ্টরা ভুল স্বীকার করে ক্ষমা চেয়েছেন। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য প্রতিবেদন শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও শিক্ষা অধিদপ্তরের কাছে পাঠানো হবে।

(ঢাকাটাইমস/২৩এপ্রিল/প্রতিনিধি/জেবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :