ঠাকুরগাঁওয়ের জাটিভাঙ্গা গণহত্যা দিবস আজ

বদরুল ইসলাম বিপ্লব, ঠাকুরগাঁও
 | প্রকাশিত : ২৩ এপ্রিল ২০১৭, ১৮:০৩

২৩ এপ্রিল ঠাকুরগাঁওয়ের জাটিভাঙ্গা গণহত্যা দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে কয়েক হাজার শান্তিপ্রিয় মানুষ যখন ভারত অভিমুখে যাচ্ছিলেন, তখন এ দেশীয় রাজাকার বাহিনীর সহায়তায় পাক সেনারা প্রায় তিন সহস্রাধিক পুরুষকে ব্রাশ ফায়ার করে হত্যা করে।

সেদিনের বিভীষিকার সাক্ষী এখনো তিন শতাধিক শহীদজায়া স্বামী সন্তান ও সম্ভ্রম হারিয়ে বেঁচে আছে। তাদের সহায়তার উদ্দেশ্যে স্থানীয়ভাবে ট্রাস্ট গঠন করা হয়েছে। বিধবা শহীদজায়ারা মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি দাবি করেছেন।

১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণের পর দেশের অন্যান্য এলাকার ন্যায় এ এলাকার মানুষও মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। পাকবাহিনী নির্বিচারে হত্যা, ধর্ষণ, লুণ্ঠন ও অগ্নিসংযোগের মাধ্যমে সৃষ্টি করেছিল নারকীয় তাণ্ডব।

২৩ এপ্রিল সদর উপজেলার জগন্নাথপুর, চকহলদি, সিঙ্গিয়া, চন্ডিপুর, আলমপুর, বাসুদেবপুর, গৌরিপুর, মিলনপুর, খামারভোপলা, শুকানপুকুরী, ঢাবঢুবসহ বেশ কয়েকটি গ্রামের শান্তিপ্রিয় কয়েক হাজার নারী পুরুষ নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য ভারতের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেন। স্থানীয় রাজাকাররা জাটিভাঙ্গায় ভারত অভিমুখীদের আটক করে। খবর দেয়া হয় মিলিটারি ক্যাম্পে। তখন দুপুর ২টায় দুই ট্রাক মিলিটারি চলে আসে জাটিভাঙ্গায়। জাটিভাঙ্গা মাঠে পাক বাহিনী লাইন করে মেশিনগানের গুলিতে হত্যা করে সব পুরুষকে। নারীদের সম্ভ্রম লুট করে তাদের কাছ থেকে সোনা-দানাসহ সর্বস্ব লুট করে নেয় এ দেশীয় রাজাকাররা।

এখানে ৩ হাজারের অধিক মানুষকে হত্যা করা হয়। যার স্মৃতি বহন করছে এই উপজেলার চকহলদি গ্রাম। ওই গ্রামের একটি পাড়ার নাম আজ ‘বিধবা পাড়া’। এক পাড়াতেই বাস করছেন ২০ জন বিধবা। চকহলদি গ্রামের পবনশ্বরী, ফুলফুলি, শ্রী মতি ফুল, ভোটরী বেওয়া, চান্দুরী, জগন্নাথপুর গ্রামের সুকানী, বুধারী, ঝলমলি, বাতাসী, বালাশ্বরী সে দিনের শোক গাথা মুহূর্তের স্মৃতি রোমন্থন করতে গিয়ে অনেকেই কেঁদে ফেলেন।

তারা জানান, যুদ্ধে হত্যা-নির্যাতনের খবর শুনে নিরাপদে থাকার জন্য ভারতে রওনা দিই। পথে জাটিভাঙ্গা এলাকায় রাজাকাররা তাদের আটক করে। সকালে মিছিল করার কথা বলে পুরুষদের ডেকে নিয়ে যায় পাক বাহিনী। সেখানে নদীর পাড়ে লাইন করে নির্বিচারে হত্যা করে। স্বামী ও সন্তান হারিয়েই শেষ নয়। এরপর আমাদের দিনের পর দিন আটকে রেখে পাকসেনারা চালায় যৌন নির্যাতন।

দেশ স্বাধীন হওয়ার পর অনেকে স্বামীর বাড়িতে এবং অনেকের স্থান হয় পিত্রালয়ে।

সেদিনে স্বামীহারা নারীরা আজ বৃদ্ধ। সেদিনের বিধবারা স্বাধীনতার ৪৬ বছরেও অনেকে বিধবা ভাতা পাননি। সরকারিভাবে মাঝে মাঝে তাদের কম্বল বিতরণ করা হলেও অন্য কোন সরকারি সুবিধা পাননি সম্ভ্রমহারা এ নারীরা।

বিদায়ী জেলা প্রশাসক মূকেশ চন্দ্র বিশ্বাসের উদ্যোগে জাটিভাঙ্গার বেঁচে থাকা অসহায় বিধবাদের সহযোগিতার জন্য একটি ট্রাস্ট গঠন করা হয়। অনেককে আর্থিকভাবে সহযোগিতা করা হলেও তাদের দাবি মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি।

ভারপ্রাপ্ত জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার বদরুদ্দোজা বদর জাটিভাঙ্গায় নির্যাতিত বিধবাদের তিন শতাধিক এখনো নিদারুন কষ্টে বেঁচে থাকার কথা স্বীকার করে বলেন, জাটিভাঙ্গার শহীদজায়াদের কল্যাণে ট্রাস্ট গঠন করা হয়েছে। সেই ট্রাস্টের অর্থে তাদের আর্থিকভাবে সহযোগিতা করা হবে।

জেলা প্রশাসক আব্দুল আওয়াল জানান, জাটিভাঙ্গার জীবিত শহীদজায়াদের কল্যাণে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে একটি কল্যাণ ট্রাস্ট গঠন করা হয়েছে। প্রতিবছর শীতের সময় তাদের কম্বলসহ অন্যান্য অনুদান বিতরণ করা হয়। আগামীতে তাদের দাবি পূরণে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

(ঢাকাটাইমস/২৩এপ্রিল/প্রতিনিধি/এলএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :