রানা প্লাজার দুই মামলার বিচারকাজ আটকা

মোসাদ্দেক বশির, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ২৪ এপ্রিল ২০১৭, ১০:৫৭ | প্রকাশিত : ২৪ এপ্রিল ২০১৭, ০৮:১৬

২০১৫ সালের খুলনার রাকিব ও সিলেটের রাজন হত্যা মামলা হাইকোর্টে নিষ্পত্তিও হলেও ২০১৩ সালের আলোচিত রানা প্লাজা ধসের কোনো মামলা বিচারিক আদালতেই নিষ্পত্তি হয়নি। আইনের প্যাঁচে আটকে আছে মর্মান্তিক এ ঘটনার দুটি মামলার বিচার।

ঢাকা জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সরকারি আইনজীবী (পাবলিক প্রসিকিউটর-পিপি) ঢাকাটাইমসকে বলেন, দুটি মামলা সাক্ষ্য গ্রহণ পর্যায়ে রয়েছে। কিন্তু আসামিপক্ষ থেকে উচ্চ আদালতে আবেদন করায় মামলার কার্যক্রম স্থগিত আছে। সাক্ষীরা আদালতে এলেও সাক্ষ্যগ্রহণ করা যাচ্ছে না।

পিপি জানান, রানা প্লাজার ঘটনায় করা হত্যা মামলায় সোহেল রানার বাবা আবদুল খালেক ওরফে খালেক কুলুসহ ৩০ জন জামিনে রয়েছেন। পলাতক রয়েছে সাত আসামি। সোহেল রানাসহ তিন আসামি কারাগারে আটক।

ইমারত নির্মাণ আইনে হওয়া অন্য মামলায় ১৮ আসামির মধ্যে সোহেল রানার বাবা আবদুল খালেক ওরফে খালেক কুলুসহ ১২ জন জামিনে, আর তিনজন পলাতক। সোহেল রানাসহ তিন আসামি কারাগারে।

চার বছর আগে ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল সকাল নয়টার দিকে ধসে যায় সাভার বাসস্ট্যান্ডের পাশে অবস্থিত নয়তলা রানা প্লাজা ভবন। এতে চাপা পড়েন কয়েক হাজার শ্রমিক। এ ঘটনায় ১ হাজার ১৩৬ জন পোশাক শ্রমিক মারা যান। জীবিত উদ্ধার করা হয় প্রায় তিন হাজার শ্রমিককে, যাদের অধিকাংশ গুরুতর আহত হয়ে পঙ্গুত্ব বরণ করেন। ঘটনার পরদিন সাভার থানার উপপরিদর্শক (এসআই ) ওয়ালী আশরাফ খান অবহেলাজনিত মৃত্যুর অভিযোগ এনে রানা প্লাজার মালিক সোহেল রানাসহ ২১ জনকে আসামি করে মামলা করেন। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের অথরাইজড অফিসার হেলাল উদ্দিন ইমারত নির্মাণ আইনে ১৩ জনকে আসামি করে আরও একটি মামলা করেন। এ ছাড়া নকশাবহির্ভূত রানা প্লাজা ভবন নির্মাণের অভিযোগ এনে একটি মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

হত্যা মামলার সর্বশেষ অবস্থা

গত বছরের ১৮ জুলাই হত্যা মামলায় ভবন মালিক সোহেল রানাসহ ৪১ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর নির্দেশ দেন ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ এস এম কুদ্দুস জামান। ওই আদেশের বিরুদ্ধে সাত আসামি হাইকোর্ট বিভাগে আবেদন করে। বর্তমানে আবেদনগুলো শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে। ফলে বিচারিক আদালতে সাক্ষীদের সাক্ষ্য নেওয়া যাচ্ছে না। আগামী ৭ মে হাইকোর্টের আদেশ দাখিলের জন্য দিন ধার্য রয়েছে।

ইমারত আইনের মামলার সর্বশেষ অবস্থা

গত বছরের ১৬ জুন ইমারত নির্মাণ আইনের মামলায় ভবন মালিক সোহেল রানাসহ ১৮ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর নির্দেশ দেন ঢাকার অতিরিক্ত মুখ্য বিচারিক হাকিম মুস্তাফিজুর রহমান। ওই আদেশের বিরুদ্ধে বজলুস সামাদ আদনানসহ তিন আসামি ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে পৃথক তিনটি আবেদন করেন।

সর্বশেষ গত ১২ এপ্রিল এ মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য দিন নির্ধারণ ছিল। কিন্তু এদিন মামলার মূল নথি জেলা জজ আদালতে থাকায় রাষ্ট্রপক্ষ সাক্ষ্য গ্রহণ পেছানোর জন্য সময়ের আবেদন করে। ঢাকার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোস্তাফিজুর রহমান শুনানি শেষে সময়ের আবেদন মঞ্জুর করে সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য আগামী ১৭ মে দিন ঠিক করেন।

২০১৫ সালের ১ জুন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) সহকারী পুলিশ সুপার বিজয় কৃষ্ণ কর হত্যা ও ইমারত নির্মাণ আইনের পৃথক দুই মামলায় আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। দুই মামলায় রানা প্লাজার মালিক সোহেল রানা, তার বাবা আবদুল খালেক ওরফে খালেক কুলুসহ ৫৯ জনকে আসামি করা হয়। তবে আসামিদের মধ্যে ১৭ জনের নাম উভয় মামলার অভিযোগপত্রে উল্লেখ থাকায় ব্যক্তি হিসেবে আসামি ৪২ জন।

হত্যা মামলায় ৪১ জনকে আসামি করা হয়েছে এবং সাক্ষী করা হয়েছে ৫৯৪ জনকে। এ ছাড়া ইমারত নির্মাণ আইনের মামলায় ১৮ জনকে আসামি করা হয়েছে এবং সাক্ষী করা হয়েছে ১৩৫ জনকে। এ দুই মামলার মধ্যে হত্যা মামলায় ৪১ আসামির মধ্যে এক আসামি মারা যাওয়ায় এখন আসামির সংখ্যা ৪০।

দুদকের মামলা

নকশাবহির্ভূত রানা প্লাজা ভবন নির্মাণে দুর্নীতির মামলায় রানাসহ ১৮ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের বিষয়ে শুনানি হয় গত ১৯ এপ্রিল। আগামী ৮ মে অভিযোগ গঠন বিষয়ে আদেশের জন্য দিন ধার্য করেছেন ঢাকা বিভাগীয় স্পেশাল জজ এম আতোয়ার রহমান।

রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় নিহত ১১৩৭ জন

ঢাকা জেলা প্রশাসক অফিসে রক্ষিত হিসাব অনুযায়ী রানা প্লাজার ধ্বংসস্তূপ থেকে ২ হাজার ৪৩৮ জনকে জীবিত এবং ১ হাজার ১১৭ জনকে মৃত উদ্ধার করা হয়। পরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও ১৯ জন মারা যান। সব মিলিয়ে মৃতের সংখ্যা দাঁড়ায় ১ হাজার ১৩৬। সবশেষ ২০১৪ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি পাবনার বেড়ায় রানা প্লাজা দুর্ঘটনায় আহত শ্রমিক আবদুস সোবহান মারা যান।

রানার সব সম্পদ বাজেয়াপ্ত

ভবন ধসের ঘটনায় আহত ও নিহতদের ক্ষতিপূরণ দিতে ২০১৪ সালের ১৩ মার্চ আদালতের নির্দেশে রানা প্লাজার মালিক সোহেল রানার ব্যক্তিগত সব সম্পদ বাজেয়াপ্ত করে সরকার। ওই সময় ঢাকার জেলা প্রশাসক সৈয়দ ইউসুফ হারুন সাংবাদিকদের বলেন, ২০১৩ সালের ৩০ এপ্রিল হাইকোর্ট স্বপ্রণোদিত হয়ে একটি রুল জারি করেন। সেই রুলে ঢাকা জেলা প্রশাসক, জেলা পুলিশ সুপার ও সাভার ইউএনওকে সোহেল রানার ব্যক্তিগত সম্পদ বাজেয়াপ্ত করার নির্দেশ দেওয়া হয়। সে অনুযায়ী ২০১৪ সালের ১৩ মার্চ ঢাকা জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে একটি বিবিধ মামলা দায়ের করা হয়। পরে ওই আদেশবলে সোহেল রানার নামে রানা প্লাজার ১৮ শতক, রানা টাওয়ারের ১০ শতক এবং ধামরাইয়ে ১ একর ৪৬ শতক জমি বাজেয়াপ্ত করা হয়।

(ঢাকাটাইমস/২৩এপ্রিল/মোআ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

আদালত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

আদালত এর সর্বশেষ

আপিল বিভাগে নিয়োগ পেলেন তিন বিচারপতি

কক্সবাজারে কতজন রোহিঙ্গা ভোটার, তালিকা চেয়েছেন হাইকোর্ট

সাউথ এশিয়ান ল' ইয়ার্স ফোরাম ন্যাশনাল ও ইন্টারন্যাশনাল চ্যাপ্টারের দায়িত্ব পুনর্বণ্টন

আদেশ প্রতিপালন না হওয়ায় চট্টগ্রামের ডিসি এসপিসহ চার জনকে হাইকোর্টে তলব

১১ মামলায় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগের শুনানি ২৯ জুলাই

২৮ দিন পর খুলল সুপ্রিম কোর্ট

ব্যবসায়ী নাসিরের মামলা: পরীমনিকে আদালতে হাজির হতে সমন জারি

বোট ক্লাব কাণ্ড: পরীমনির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আবেদন

সেই রাতে ৮৭ হাজার টাকার মদ খেয়েছিলেন পরীমনি, পার্সেল না দেওয়ায় তাণ্ডব

বোট ক্লাব কাণ্ড: প্রতিবেদন দিল পিবিআই, ব্যবসায়ী নাসিরের মামলায় ফেঁসে যাচ্ছেন পরীমনি?

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :