রাস্তার দুর্ভোগে কেনাবেচা নেই মৌচাকে
রাজধানীর অন্যতম ব্যস্ত বিপণিবিতান ছিল মৌচাক মার্কেট। আশির দশক থেকে শহরের বড় একটা অংশের মানুষের কেনাকাটার কেন্দ্র ছিল মৌচাক ও আশপাশের এলাকা। কিন্তু এখন ওই এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে ফ্লাইওভার নির্মাণকাজের জন্য বেহাল রাস্তার কারণে আগের মতো ক্রেতার ভিড় নেই সেখানে। ফলে বিক্রি নেমেছে এক-তৃতীয়াংশে।
রবিবার বিকালে মৌচাক মার্কেটে ঘুরে ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলাপ করে এ চিত্র পাওয়া গেছে।
সরেজমিন ঘুরে জানা যায়, বিক্রিবাট্টা কম ও কাদাপানির কারণে ফুটপাতের অনেক দোকান বন্ধ থাকে বেশির ভাগ সময়। নিরুপায় যারা দোকান নিয়ে বসে থাকেন, তাদের খরচই ওঠে না।
আবদুল হাকিম নামের ১৭ বছর বয়সী একটি ছেলে ঝুড়িতে করে জুতা-সেন্ডেল বিক্রি করে মৌচাক মার্কটের সামনে। তার ভাষ্য, এখন দিনে হাজার টাকা বেচাকেনা করাই কষ্ট। আগে প্রতিদিন তিন-চার হাজার টাকা বেচতে পারত।
কারণ জানতে চাইলে হাকিম জানায়, ‘ফ্লাইওভার নির্মাণ হইতাছে চারদিকে। রাস্তায় গর্ত ভরা। সব সময় এগুলা কাদাপানিতে ভরা থাকে। তিন দিক থেকে কোনো কাস্টমার মৌচাক আসতে পারে না। তাহলে কিনবে কারা।’
২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে শুরু হয় মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভারের নির্মাণকাজ। ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও সময় বাড়ানো হয় ২০১৭ সালের জুন মাস অব্দি।
মৌচাকের সামনে দাঁড়ালে চোখে পড়ে বামে মগবাজারের দিকে, সামনে মালিবাগ রেলগেইট, আর ডানে মালিবাগ মোড়ের দিকে কাজ চলছে ফ্লাইওভারের। মাথা তুলছে কম উঁচু, মাঝারি উঁচু, বেশি উঁচু- তিন ধরনের পিলার। দেখে ভালো না লেগে পারে না।
কিন্তু চোখ যখন নিচে রাস্তায় পড়ে, তখন এক বীভৎস রূপ ঝাপটা দেয় দৃষ্টিতে। খানাখন্দে ভরা রাস্তা। কাদাপানিতে সয়লাব। মগবাজার আর মালিবাগ মোড়ের দিকে রাস্তা খোলা থাকলেও মালিবাগ রেলগেটের দিকে বাঁয়ের রাস্তা বন্ধ। আর খোলা ভাঙাচোরা রাস্তাগুলোতে গাড়ি চলছে বিপজ্জনকভাবে হেলেদুলে।
এক দোকানি সেদিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, ‘খানাখন্দকের কারণে এসব রাস্তায় যাত্রী নিয়ে রিকশা চলাচল করা খুবই কষ্টকর। বাধ্য না হলে ক্রেতা কিংবা যাত্রীরা এদিকে আসে না।’
পাশেই চোখে পড়ে পাম্প লাগিয়ে পানি নিষ্কাশন করছে দোকানিরা। সেখানে পানি জমে সামনের রাস্তা বন্ধ হয়ে আছে। পানি না সরালে ক্রেতারা দোকানের দিকে রাস্তাটি পার হতে পারবে না।
মৌচাক মার্কেটের নিচতলার শোভন গার্মেন্টসে দোকানিদের ব্যস্ততা নেই। কারণ ক্রেতার অভাব। আগে প্রতিদিন ২০-২৫ হাজার টাকা বিক্রি হতো। আর এখন চার-পাঁচ হাজার টাকাও বিক্রি হয় না। তা দিয়ে চলে না দোকান ভাড়া, কর্মচারীর বেতন, বিদ্যুৎ বিল ও অন্যান্য প্রাত্যহিক খরচ। কিন্তু দোকান খোলা না রেখেও উপায় নেই। সামনে আসছে রমজান মাস।
ওই দোকানিরা জানান, তিন বছর ধরে চলছে ফ্লাইওভার নির্মাণ করছে। রাস্তা ভেঙে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে গেছে, পথচারী-যাত্রীদের দুর্ভোগ সীমা ছাড়িয়েছে, কিন্তু রাস্তা মেরামতের দিকে নজর নেই কর্তৃপক্ষের।
তারা এখন ‘আল্লাহ আল্লাহ’ করছেন রমজান মাসের আগে আগে যেন রাস্তা ঠিক করা হয়। শোভনের দোকানি আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘সব মার্কেটের ব্যবসায়ীরা রমজানে ঈদের বেচাকেনার জন্য অপেক্ষা করে থাকেন। আমরা মার্কেট কমিটির লোকজনের কাছে আবদার করব, ঈদের আগে যেন রাস্তাটা মেরামত করার ব্যবস্থা করেন তারা।’
মৌচাক মার্কেটের ভেতরে কথা হয় জয়নাল আবেদীন নামের একজন ক্রেতার সঙ্গে। তিনি বলেন, এদিকের রাস্তা যে ভালো না তিনি শুনেছেন। কিন্তু অবস্থা যে এমন খারাপ তা ভাবতে পারেননি। জানলে এদিকে আসতেন না।
মৌচাক মার্কটের সামনের ফুটপাতে বসা দোকান বন্ধ দেখা গেছে। এর কারণ জানতে চাইলে সেখানকার ব্যবসায়ীদের ভাষ্য, বিক্রিবাট্টা নেই। তাই দোকান বন্ধ করে চলে গেছে দোকানি। রাস্তাঘাট চলাচলের অনুপযোগী বলে মানুষ মৌচাক-মালিবাগ এলাকা এড়িয়ে চলে।
বিক্রিবাট্টা যে শুধু মৌচাক মাকেটে কম তা না। মৌচাক মার্কেটের বিপরীত দিকে রয়েছে ফরচুন শপিং মল। সেখানেও একই অবস্থা। তার সামনের রাস্তাটি বন্ধ। ময়লা-আবর্জনায় ভরা। কাদাপানিতে সয়লাব।
(ঢাকাটাইমস/২৩এপ্রিল/এএ/মোআ)