হাওরের পর ডুবছে অন্য এলাকার ফসলও

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ২৪ এপ্রিল ২০১৭, ২৩:২২

আগাম বন্যায় কয়েকটি জেলার হাওরাঞ্চলে হাজার হাজার হেক্টর ফসলি জমি ইতোমধ্যে নষ্ট হয়ে গেছে। হাওরজুড়ে এখন শুধুই কান্না আর হাহাকার। এই অবস্থায় টানা বৃষ্টি আর ঝড়-তুফানে অন্য এলাকার ফসল নিয়েও দুশ্চিন্তায় পড়েছেন কৃষকেরা। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের কৃষিজমি পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় বড় ক্ষতির আশঙ্কা করছেন তারা।

গত কয়েক দিন ধরে সাগরে নিম্নচাপের প্রভাবে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে অনবরত ভারী বর্ষণ হচ্ছে। এতে বিভিন্ন জেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে গেছে। আগাম পানি উঠায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বোরো, ইরি ও রবিশষ্য। বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে দেশের বিভিন্ন স্থানে ফসলের ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর:

চলনবিলে নদীর পানি, আতঙ্কে কৃষকেরা

টানা কয়েক দিনের ভারী বর্ষণে আত্রাই এবং গুড় নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় এবার চলনবিলে প্রবেশ করছে পানি। এতে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে এই অঞ্চলের শতাধিক কৃষক। তাছাড়া শ্রমিক সংকট থাকায় ধানও কাটতে পারছেন না চাষিরা। বোরো ধান ঘরে তোলা নিয়ে দুশ্চিন্তায় দিন কাটছে এখন চলনবিলের কৃষকদের। ফলে অকালে ফসল ডুবে নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছেন চাষীরা। এদিকে, পাকা ধান কেটে ঘরে তুলতে জরুরিভাবে এলাকায় মাইকিং করেছে উপজেলা প্রশাসন।

এলাকাবাসীরা জানান, টানা কয়েক দিনের ভারী বৃষ্টিতে সিংড়া উপজেলার আত্রাই এবং গুড় নদীর পানি ভয়াবাহ আকার ধারণ করেছে। বৃষ্টি অব্যাহত থাকায় পানি বৃদ্ধির কারণে জোড় মল্লিকা, নিংগইন এবং পাটকোল ব্রিজের নিচ দিয়ে চলনবিলের ফসলি জমিতে প্রতিনিয়ত পানি প্রবেশ করছে। এতে নিংগইন, বালুভরা, হাসপুকুরিয়া, শেরকোল, তেলীগ্রাম, ভাগনাগরকান্দি মাঠের বোরো ধান ডুবে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

এদিকে, উপজেলার নূরপুর, ভাগনাগরকান্দিসহ বেশ কিছু এলাকায় পানিতে তলিয়ে গেছে বোরো ধান।

নিংগইন এলাকার কৃষক আশকান আলী ঢাকাটাইমসকে জানান, ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে তিনি জোড়মল্লিকা বিলে ১৫ বিঘা জমিতে বোরো ধান চাষাবাদ করেছেন। হঠাৎ নদীর পানি বিলে প্রবেশ করায় শতাধিক কৃষক আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। এখন কৃষকের চোখে ঘুম নেই।

এদিকে, সোমবার সকালে খবর পেয়ে জোড় মল্লিকা, নিংগইন এবং পাটকোল এলাকায় জরুরিভাবে মাটি দিয়ে বাঁধ নির্মাণ কাজ শুরু করেছে প্রশাসন।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাজ্জাদ হোসেন ঢাকাটাইমসকে বলেন, আত্রাই নদীতে ঢলের পানি উপচে চলনবিলে প্রবেশের চেষ্টা করছিল। কিন্তু বাধ দেয়ার কারণে এখন আর প্রবেশ করছে না। তবে ভারী বর্ষণ অব্যাহত থাকলে চলনবিলে পানি ঢুকে ফসল নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ নাজমুল আহসান ঢাকাটাইমসকে বলেন, টানা ভারী বর্ষনের নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে চলনবিল এলাকায় পানি ঢুকছিল। পানি যাতে না ঢুকতে পারে সে জন্য দুটি স্থানে তাৎক্ষণিকভাবে বাঁধ নির্মাণের জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, আগামী তিন চার দিন আবহাওয়া ভালো থাকলে নদী পানি কমে যাবে। তখন ফসলের আর কোনো ক্ষতি হবে না।

টানা বৃষ্টিতে বাগেরহাটে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি

উপকূলীয় জেলা বাগেরহাটে টানা বৃষ্টিতে পাকা বোরো ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বৃষ্টির পানিতে বোরো ধানের মাঠ তলিয়ে রয়েছে। ফলে পাকা বোরো ধান মাঠে পড়েই নষ্ট হচ্ছে। এই ধান আর কৃষকের ঘরে তোলা সম্ভব হবে না বলে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা জানান।

গত তিন দিনের টানা বৃষ্টিতে বাগেরহাট সদর উপজেলার গোটাপাড়া, কান্দাপাড়া, বেশরগাঁতি, চরগ্রাম, বেমরতা, ফতেপুর, ডেমা, চুলকাঠি, শ্রীঘাট, সিএন্ডবি বাজার, ষাট গম্বুজসহ বিভিন্ন উপজেলার পাকা বোরো ধানের মাঠ তলিয়ে যায়। তবে জেলায় কি পরিমাণ জমির রোরো ধানের আবাদ নষ্ট হয়েছে তা জানাতে পারেনি কৃষি বিভাগ।

অন্যদিকে, রবিবার রাতের বয়ে যাওয়া কালবৈশাখী ঝড়ে বাগেরহাট-মাওয়া মহাসড়কে গাছ উপড়ে যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। রাতে জেলার বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।

শেখ আসাদুজ্জামান রিপন বলেন, এবছর দশ বিঘা জমিতে বোরো ধানের আবাদ করি। এবছর বোরো ধানের ফলনও ভাল হয়। গত কয়েকদিন ধরে শ্রমিক নিয়ে পেকে যাওয়া ধান মাঠ থেকে কাটা শুরু করি। হঠাৎ করে বৃষ্টি শুরু হওয়ায় মাঠে কেটে রাখা ধান ঘরে তুলে আনতে পারিনি। ফলে ওই কেটে রাখা ধান মাঠে পড়ে নষ্ট হচ্ছে। এতে আমার দারুণ ক্ষতি হয়েছে।

কৃষক সাধন পাল ও নিরাপদ পাল ঢাকাটাইমসকে বলেন, এ বছর বোরো ধানের আবাদ ভাল হয়েছে। বৈশাখ মাস থেকে মাঠের পেকে যাওয়া ধান আমরা কাটতে শুরু করি। গত তিন দিন আগে হঠাৎ করে বৈরি আবহাওয়ার মধ্যে ঝড়ো হাওয়ার সাথে বৃষ্টি শুরু হলে ধান কাটা ব্যাহত হয়। ফলে ধানের মাঠ বৃষ্টির পানিতে নিমজ্জিত হয়ে তা ঝরে পড়ছে। আমরা এই ধান আর ঘরে তোলার আশা ছেড়ে দিয়েছি।

বাগেরহাট সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আনিসুজ্জামান মাসুদ ঢাকাটাইমসকে বলেন, বাগেরহাট-মাওয়া মহাসড়কের মোল্লাহাট উপজেলার গাওলা এলাকায় ঝড়ে বেশকিছু গাছ উপড়ে রাস্তার উপর পড়ে যায়। পরে সেখান গিয়ে আমরা তা কেটে রাস্তার উপর দিয়ে সরিয়ে দেই।

বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক তপন কুমার বিশ্বাস বলেন, রবিবার রাতে প্রবল বর্ষণের সঙ্গে ঝড়ো হাওয়ায় বাগেরহাট-মাওয়া মহাসড়কের মোল্লাহাট এলাকায় বেশকিছু গাছ উপড়ে রাস্তার উপর পড়ে। এতে বেশকিছু সময় যান চলাচল ব্যাহত হয়। ঝড় থামলে সড়ক বিভাগের কর্মীরা পড়ে থাকা গাছ কেটে সরিয়ে দিলে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। ঝড়ে জেলাজুড়ে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। গভীর রাতে জেলার বিদ্যুৎ ব্যবস্থা আবার স্বাভাবিক করে বিদ্যুৎ বিভাগ।

বাগেরহাট কৃষি বিভাগের উপ-পরিচালক মো. আবতাব উদ্দিন ঢাকাটাইমসকে বলেন, অতি বৃষ্টিতে বাগেরহাটের মাঠে কাটার অপেক্ষায় থাকা পাকা বোরো ধানের ক্ষতি হয়েছে। বৃষ্টির পানিতে ধানের মাঠ তলিয়ে রয়েছে। হঠাৎ বৈরি আবহাওয়ার কারণে কৃষক পাকা ধান মাঠ থেকে কেটে ঘরে তুলতে না পারায় তা মাঠেই ঝরে পড়ে আছে। এতে কৃষকের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। জেলার কত হেক্টর জমির বোরো ধান নষ্ট হয়েছে তার তালিকা তৈরি করতে কৃষি বিভাগ কাজ করছে।

শরীয়তপুরে ফসলের ক্ষতির আশঙ্কা

শরীয়তপুরে পাঁচ দিনের টানা বর্ষণে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। সেই সাথে রবি শস্যের ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা করছেন কৃষকেরা।

সোমবার সকাল থেকেই থেমে থেমে গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি আর হিমেল হাওয়া বইছে। নিম্নচাপের কারণে আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকায় দিনের বেলায় যেন আঁধার নেমে এসেছে। সেই সাথে বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে।

বৃহস্পতিবার থেকে সোমবার পর্যন্ত পাঁচ দিনের টানা বর্ষণে সাধারণ মানুষ জরুরি কাজ ছাড়া ঘর থেকে বের হতে দেখা যায়নি। সবচেয়ে বিপদে পড়েছে খেটে খাওয়া চরাঞ্চলের নিম্ন আয়ের দিনমজুর, কৃষকসহ স্কুল কলেজগামী ছাত্র-ছাত্রীরা। এতে করে তাদের জীবনযাত্রার মান ব্যাহত হয়ে পড়েছে।

এছাড়া, বর্ষণের কারণে শরীয়তপুরের মঙ্গলমাঝির ঘাট ও ইব্রাহিমপুর ঘাটের নৌচলাচল বন্ধ রয়েছে।

কোর্ট এলাকার ব্যবসায়ী দিন ইসলাম বলেন, সকাল থেকে থেমে থেমে বৃষ্টির কারণে শীতের তীব্রতা বৃদ্ধি পেয়েছে। বেশ কিছুদিন ধরে বৃষ্টিপাতের কারণে বোর ধান, ভুট্টা, রসুন ও কিছু রবি শস্যের ক্ষতি আশঙ্কা আছে।

আংগারিয়ার দাসপাড়ার বিমল বলেন, আমাদের বাড়িতে বৃষ্টিতে হলে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। সেই পানি এর থেকে আমরা স্থায়ী সমাধান চাই।

লক্ষীপুরে ক্ষতির মুখে ১০ হাজার হেক্টর জমির ফসল

লক্ষ্মীপুরে বিগত কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে নিন্মাঞ্চলের ফসলি মাঠ। এতে ১০ হাজার হেক্টর জমির ইরি-বোরো ধান, সয়াবিন, বাদাম, শাক-সবজিসহ অন্যান্য শস্য নষ্ট হয়ে গেছে।

সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার হয়েছে সদর উপজেলার ভবানীগঞ্জ, মিয়ারবেড়ি, সুতারগুপ্তা, তোরাবগঞ্জ, পেয়ারাপুরসহ দক্ষিণ অঞ্চলের বিস্তীর্ণ ফসলি মাঠ। ফসল হারিয়ে চরম হতাশ হয়ে পড়েছেন এসব এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা। ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে কয়েক কোটি টাকার লোকসান গুনতে হবে তাদের। আর তাই ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকেরা সরকারী সহযোগিতার দাবি জানিয়েছেন।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সরকার সব ধরনের সহযোগিতা দিবে। আপাতত এসব ক্ষতি পুষিয়ে নিতে আউশ ধানের আবাদ ও গ্রীষ্মকালীন সবজি চাষের পরামর্শ দিচ্ছি আমরা কৃষকদের।’

দিশেহারা ভোলার কৃষকেরা

গত দুই দিনের ভারী বৃষ্টিতে ভোলায় কয়েক হাজার হেক্টর উপকূলীয় রবিশস্য জমি পানিতে ডুবে কৃষকরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।

এর আগে মৌসুমের প্রথম জোয়ারের পানি রবিশস্যের ক্ষেতে প্রবেশ করে কৃষকের ব্যাপক ক্ষতি হয়। তখন কৃষক ফসলের মাঠের পানি সরানোর জন্য নিজ উদ্যোগে সেচ ও বাঁধ দিয়ে কোনো মতে রক্ষা পায়। কিন্তু টানা দুই দিনের বৃষ্টির পানিতে পুরো ফসলের ক্ষেত ডুবে যাওয়ায় কৃষকের স্বপ্ন ভেসে গেল বৃষ্টির পানিতে।

কৃষক মনির জানান, ৬০ হাজার টাকা সুদের ওপর লোন এবং সার ও ওষুধ বাকিতে নিয়ে প্রায় ৫ একর জমিতে আলু, মরিচ, মুগ ও বাদামের চাষ করেছিলাম, কিন্তু মৌসুমের প্রথম জোয়ারের পানি প্রবেশ করে আংশিক ক্ষতি হলেও এবার দুই দিনের বৃষ্টিতে পুরো ফসলের মাঠ পানিতে ডুবে সম্পূর্ন ফসল ক্ষতি হয়েছে।

তার মতো ওই এলাকার কৃষক সোলেমান, জব্বার, আলমগীর এবং হাফেজসহ অনেকেরই ফসলের ক্ষেত পানিতে তলিয়ে গেছে।

ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার ঘোসের হাট বাজারের বিক্রেতা মনিরুজ্জামান মোহন জানান, কৃষকেরা মৌসুমের শুরুতে সার ও কীটনাশক বাকিতে নিয়ে যায় এবং মৌসুম শেষে ফসল বিক্রি করে তারা বাকি টাকা পরিশোধ করে। কৃষক ও ব্যবসার স্বার্থে আমরা অধিক হারে ব্যাংক ও মাল্টিপারপাস কোম্পানি থেকে লোন নিয়ে থাকি। যখন কৃষকের স্বপ্ন ঝড়ে উড়ে যায়, তখন আমরাও হতাশায় ভোগী এই ভেবে যে, কিভাবে, কখন, তারা আমাদের টাকা পরিশোধ করবে।

কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, বৃষ্টির পানিতে মুগ, বাদাম, মিষ্টি আলু, ডাল, মরিচ, তরমুজ ইত্যাদি ফসল সম্পূর্ন ক্ষতি হয়েছে।

শেরপুরে পাহাড়ি ঢলে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত

শেরপুরে পাহাড়ি ঢলের পানিতে নতুন করে প্লাবিত হচ্ছে নিম্নাঞ্চল। বিশেষ করে জেলার সীমান্তবর্তী নালিতাবাড়ী ও ঝিনাইগাতী উপজেলার বেশকিছু এলাকা নতুন করে প্লাবিত হয়েছে। নালিতাবাড়ী উপজেলার চেল্লাখালী নদীর বাঁধ ভেঙে ৫০০ একর উঠতি বোরো ধান পানির নিচে তলিয়ে গেছে। আরও এক হাজার একর ক্ষেতের ফসল ডুবে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন এলাকার কৃষক। দেড় শতাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এছাড়া ঢলের পানি নিম্নাঞ্চলে নেমে যাওয়ায় উপজেলার দক্ষিণ সন্ন্যাসীভিটা, নাকশি, বালুঘাট, তারাকান্দি, সূর্য নগর এলাকায় নতুন করে প্লাবিত হয়েছে।

অপরদিকে ঝিনাইগাতী উপজেলার সদর ও বাজারের পানি নেমে গেলেও নিম্নাঞ্চলের বগাডুবি, ছুড়ি হারা, হাঁসলি গাঁ, হাতিবান্ধা, ঘাঘড়া গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ফলে ওইসব এলাকার কয়েকশ হেক্টর জমির বোরো ক্ষেত একেবারে তলিয়ে গেছে।

নালিতাবাড়ী উপজেলার উত্তর সন্ন্যাসীভিটা গ্রামের কৃষক আবু হানিফ বলেন, '৩০ হাজার টেহা (টাকা) দিয়া দেড় কুর জমি মেদি (বছর চুক্তি) নিছি। আরও ২৫ হাজার টেহা (টাকা) খরচ কইরা বোরো ধান আবাদ করছি। ৫-৬ দিন পরে ধান কাটার কতা (কথা)। কিন্ত ভাঙ্গা দিয়া পানি আইয়া আমার খেত (ক্ষেত) ডুইবা গেছে।'

উত্তর সন্ন্যাসীভিটা গ্রামের কৃষাণী বিউটি বেগম বলেন, 'পাঁচ কাঠা জমি বোরো আবাদ করছিলাম। এই ভাঙার কারণে আমগর ফসল পানির নিচে তলিয়ে গেছে। পুকুরের মাছ ভাইসা গেছে। ঘরবাড়িতে পানি উঠছে এহন কি করুম ভাইবা পাইতাছিনা সব হারাইয়া আমরা এহন ফহিরের মত হইয়া গেছি। এই ভাঙনের একটা স্থায়ী সমাধান হওয়া দরকার।'

ইতোমধ্যে কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মনোয়ারুল ইসলাম, রাবার ড্যাম প্রকল্প পরিচালক ধীরেন্দ্র চন্দ্র দেবনাথ, শেরপুরের জেলা প্রশাসক ড. মলি্লক আনোয়ার হোসেন ভাঙন অংশ পরিদর্শন করেছেন। বিএডিসির পক্ষ থেকে ভাঙন অংশে বালুর বস্তা ফেলা হলেও পাহাড়ি ঢলের প্রবল পানির স্রোতে ওই বালুর বস্তা ভেসে যায়।

দুশ্চিন্তায় কুড়িগ্রামের কৃষকেরা কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার শতাধিক বিলের শত শত একর ইরি-বোরো ক্ষেত পানিতে তলিয়ে গেছে। জমির পাকা ও আধাপাকা ধান ক্ষেত দীর্ঘ সময় পানির নিচে তলিয়ে থাকায় তা পচে যাওয়ার আশঙ্কায় দুশ্চিন্তায় পড়েছেন কৃষকরা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ব্রহ্মপুত্র নদের অববাহিকার রৌমারী উপজেলার লাঠিয়াল ডাঙ্গা কালাপানির বিল, বেকরিবিল, সীমান্তঘেঁষা আলগারচর দর্নির বিল, ডিসি সড়কের দুদিকের খালবিলসহ শতাধিক বিল তলিয়ে গেছে। এই বিলগুলো বছরে মাত্র ৩ মাস শুকনো থাকে। সেখানে বছরে একটি মাত্র ফসল হয় ইরি-বোরো। কিন্তু এ বছর কৃষকের বিধি বাম। আবহাওয়া অনুকূলে না থাকায় অবিরাম বৃষ্টির ফলে তলিয়ে গেছে এসব বিলের ফসল। এ অবস্থায় দ্রুত পানি নিষ্কাষণের ব্যবস্থা না ফসল নষ্টের আশঙ্কা কৃষকদের।

ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক লাঠিয়ালডাঙ্গা গ্রামের আলাল মিয়া, বাবুল, জালাল, বেকরিবিলের ছাত্তার, কুদ্দুস, লিচু, নাছির, আলগার চরের জলিল, রবিউল, আব্বাস আলী, মাহুবর, উত্তর আলগার চরের সামছুল, রহিমুদ্দিন জানান, বিলের যে ধান দিয়ে তাদের সংসার চলে, সেই ধান এবার সব পচে গেছে। বিলের পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় এ অবস্থা হয়েছে। আমরা সরকারের নিকট ক্ষতিপূরণ দাবি করছি। খেয়ারচরের জবেদ আলী, নইমুদ্দিন, খয়রুদ্দিন, নজরুল বলেন, হালের বলদ গহনা বিক্রি করে ইরি-বোরো চাষ করেছিলাম। এক সপ্তাহ পরেই ধান কাটা শুরু হতো। অকাল বৃষ্টিতে সব ধান তলিয়ে গেছে। আগামী দিন গুলো ছেলেমেয়েদের নিয়ে কি খেয়ে বাঁচব।

(ঢাকাটাইমস/২৪এপ্রিল/জেবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

জাতীয় এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :