ফুটপাতও খুঁড়ে ফেলছে সিটি কর্পোরেশন; দুর্বিষহ নগর জীবন

আউয়াল খাঁন, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ২৫ এপ্রিল ২০১৭, ০৮:১৯ | প্রকাশিত : ২৫ এপ্রিল ২০১৭, ০৮:০৮

রাজধানীর মালিবাগ-মগবাজার ফ্লাইওভার নির্মাণে তৈরিতে অস্বাভাবিক ধীর গতির জন্য জনমানুষের ভোগান্তি বাড়ছে। ফ্লাইওভার এর নির্মাণ সামগ্রী ও ভারী যন্ত্রপাতি দিয়ে বিগত কয়েক বছর ধরে মুল সড়ক দখল করে রাখার ফলে মানুষ ফুটপাতকেই বেছে নিয়েছিল চলাচলের একমাত্র পথ হিসেবে। এখন সেই ফুটপাতও হারাতে শুরু করেছে জনগণ। পয়ঃনিষ্কাশন পাইপ বসানোর জন্য ফুটপাতে খোঁড়াখুঁড়ি শুরু করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন।

যানজট, এখানে সেখানে খানা-খন্দক, ময়লা পানি, বৃষ্টি, ফ্লাইওভারের ভারী যন্ত্রপাতি সব মিলে দুর্বিষহ জীবন কাটছে মৌচাক, মালিবাগ, শান্তিনগর এর হাজার হাজার মানুষের। অথচ ফ্লাইওভার নির্মাণের সময় শুধু বাড়ছেই। কী কারণে, সাধারণ মানুষ কেউ জানেনা। কিন্তু কষ্ট ভোগ করতে হচ্ছে তাদেরকেই।

মূল সড়কের যতটুকা ফাঁকা জায়গা ছিল, ততটুকু দিয়েই চলাচল করছে মালিবাগ রেলগেট বা মগবাজার থেকে আসা শান্তিনগরমুখি গাড়িগুলো। ধীরগতির বাস, প্রাইভেট কার, রিক্সা সব, পাশেই বিশাল বিশাল গর্ত, খোলা ডাস্টবিন, সব মিলে অবর্ণনীয় সে কষ্ট।

কষ্টের ধরন এবং মাত্রায় নতুন বৈশিষ্ট যোগ করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন। পয়ঃনিষ্কাশন প্রণালী ঠিক করার জন্য খুঁড়তে শুরু করেছে ফুটপাতগুলো। শুরু করেছে ঠিকই, শেষ হওয়ার খবর নেই। এর মধ্যে গত কয়েকদিনের বৃষ্টি এসে খুঁড়ে রাখা ফুটপাতগুলোকে বানিয়েছে যেন গভীর খাদ। যে খাদে পড়লে বেঁচে ফিরে আসার সম্ভাবনা খুব কম।

মৌচাক মোড় থেকে মালিবাগ রেলক্রসিং পর্যন্ত সড়কের একপাশ পয়ঃনিষ্কাশনের পাইপ বসানোর জন্য খুঁড়ে রাখা গর্তের মাটি রাস্তায় মাটি ফেলে রাখায় সড়কের এই অংশের মানুষের চলাচল সম্পুর্ণ বন্ধ।

ফুটপাত সংলগ্ন ডিএসসিসি এই অসমাপ্ত খোঁড়াখুঁড়ির জন্য মালিবাগ রেলগেট থেকে ডানপাশ ধরে মৌচাক পর্যন্ত ফুটপাত নেই বললেই চলে। কোথাও এক হাত আবার কোথাও দেড় হাত পরিমাণ ফাঁকা জায়গা পেয়ে ঝুঁকি নিয়ে সেটাকেই ফুটপাত হিসেবে ব্যবহার করতে বাধ্য হচ্ছে সাধারণ মানুষ। অথচ এই এক-দেড় ফুট ভালো অংশের সাথে প্রায় দশ ফুট পরিমাণ ড্রেনের জন্য খুড়ে রাখা অসমাপ্ত গর্ত রয়েছে। গত কয়েক মাসে ধরে এই গর্তগুলোতে বাঁশ, রডসহ নানা বিপদজনক বস্তু এমন ভাবে ফেলে রাখা হয়েছে যে, কোনো মানুষ পা হড়কে ঐ গর্তে পড়ে গেলে জীবননাশের সম্ভাবনাও রয়েছে।

যানজট নিরসনে বাংলা মোটর, সাতরাস্তা, মগবাজার, মৌচাক, রামপুরা, মালিবাগ ও শান্তিনগর এলাকা নিয়ে ২০১৩ সালে শুরু হয় ফ্লাইওভার নির্মাণকাজ। মোট আট দশমিক ৭০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এই ফ্লাইওভারের একটি অংশ বাংলামোটর থেকে শুরু করে সাতরাস্তা এবং মৌচাক হয়ে শান্তিনগর ও রামপুরার দিকে যাবে। তমা কন্সট্রাকশন লিমিটেডের অধিনে নির্মিত এই ফ্লাইওভার নির্মাণ কাজ ২০১৫ সালের মধ্যে শেষ করার কথা থাকলেও বারবার নকশা পরিবর্তনসহ নানা জটিলতায় বিলম্ব হয়। ২০১৭ সালে এসেও কাজ শেষ হওয়ার কোন লক্ষণ নেই । ফলে তিন দফায় দুইবছর সময় বাড়িয়ে এ বছরের জুনের মধ্যে পুরো প্রকল্পের কাজ শেষ করার কথা। কিন্তু বাস্তবে কাজের গতি দেখে স্পষ্টই ধারণা করা যায়, ফ্লাইওভার এর অসমাপ্ত কাজ শেষ করতে অনেক বাড়তি সময় লাগবে।

ফ্লাইওভার নির্মাণের তিন বছরের মাথায় সাতরাস্তা থেকে রমনার হলি ফ্যামিলি হাসপাতাল পর্যন্ত অংশ পরিবহন চলচলে খুলে দেয়া হয়। ফ্লাইওভারের সড়কের এই অংশটি খুলে দেয়ার আগে মাগবাজর মোড় থেকে সাতরাস্তার মূল সড়কটির অবস্থা দীর্ঘদিন বেহাল ছিল। এদিকের ফ্লাইওভারের সড়কটি খুলে দেয়ার আগে নিচের সড়কটি মসৃণ করা হয়। কিন্তু মৌচাক-মগবাজার ফ্লাইওভার সেতুর কাজ শুরু হওয়ার পর মৌচাক-মালিবাগ-শান্তিনগর ও মালিবাগ রেলগেট সংলগ্ন ডিআইটির ব্যস্ততম মূল সড়কটিতে কোন ধরনের সংস্কারের ছোঁয়া পড়েনি। বরং ডিএনসিসি সুয়ারেজ লাইনসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান একের পর এক গ্যাস, বিদ্যুতের লাইনের জন্য সড়কটির ফুটপাত সংলগ্ন অংশে খোঁড়াখুড়ি করে গেছে। তবে খোঁড়াখুড়ি ও কাজ শেষে জায়গাটি ভরাট করে দেয়া এই পর্যন্তই তাদের কর্তব্য শেষ। খুঁড়ে রাখা অংশের মেরামতের উদ্যোগ আর কাউকেই নিতে দেখা যায়নি।

যদিও গত নভেম্বরে মগবাজর থেকে মৌচাক পর্যন্ত অশেংর মূল সড়কটি মেরামত করে মসৃণ করা হয়েছিল। কিন্তু মাস যেতে না যেতেই মাটির নিচ দিয়ে উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন বৈদ্যুতিক তার নিযে যাওয়ার জন্য আবারে মগবাজার থেকে মৌচাক পর্যন্ত অংশটি খোঁড়া হয়। কিন্তু সামন্য ইটের গুঁড়া ফেলেই এই রাস্তার পনুরায় মেরামতের কাজ শেষ করা হয়েছে। ফলে এই সড়কটিতে ভারী যান চলাচলের কারণে নিউ সার্কুলার রোড থেকে মৌচাক যেতে সড়কের বাম পাশটিতে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। তবে অপরিকল্পিত খোঁড়াখুঁড়ি ও মেরামতের অভাবে মৌচাক হয়ে হয়ে আবুল হোটেল এবং শান্তিনগর পর্যন্তও সড়কের খানাখন্দক এতোটাই ভয়াবহ হয়েছে যে প্রায় প্রতিদিনই সড়কগুলোর কোন না কোন অংশে দুর্ঘটনা ঘটছেই।

এই সড়কগুলোর পয়ঃনিস্কাশনের সিস্টেম ভালো না হওয়ায় শুষ্ক মৌসুমেও সড়কটিগুলো দুর্ঘন্ধময় পানিতে তলিয়ে থাকতো। আর এখনতো অনাকাঙ্খিত বৃষ্টির মৌসুম। গত একসপ্তাহের টানা বর্ষণ সড়ক গুলোতে হাঁটু সমান জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। সঙ্গে সড়কে তৈরি হয়েছে অসংখ্য খানাখন্দক, যাতে প্রায়ই যানবাহন বিকল হচ্ছে, ঘটছে দুর্ঘটনা। কয়েকদিনের ভারি বর্ষনে হাঁটু সমান জমে থাকা পানিতে মৌচাক মোড় থেকে শুরু হওয়া খানাখন্দকময় রাস্তায় কোথায় গর্ত আছে বা কোথায় নাই সেটা অনুমান করার কোন উপায় নেই। কিন্তু চলতে হবে বলে ঝুঁকি নিয়েই এগিয়ে যাচ্ছেন পথচারী ও পরিবহন চালকরা।

অদৃশ্য গর্তে পড়ে অনেকে রিকশা বা মটরসাইকেল নিয়ে হুমড়ি খেয়ে সড়কে পড়ে যাচ্ছেন। গণ পরিবহনগুলো প্রচন্ড ঝাঁকুনিতে এগিয়ে যাচ্ছে গন্তব্যের দিকে। ঝাঁকুনির কারণে খুব গতিতেও গাড়িগুলো টানতে পারছেনা চালকরা।

শান্তিনগর থেকে মালিবাগ চৌরাস্তা পর্যন্ত সড়কের দুপাশে কোনো কোনো অংশে হাঁটু পানি জমে আছে। পানি আছে মালিবাগ চৌরাস্তা থেকে মৌচাক পর্যন্ত। এছাড়া মৌচাক থেকে মালিবাগ রেলক্রসিং হয়ে আবুল হোটেল পর্যন্ত সড়কের কোথাও কোথাও হাঁটু পানি।

মৌচাক থেকে মালিবাগ রেলগেটের মধ্যবর্তী কয়েকজন ব্যবসায়ি বলেন, ‘ফ্লাইওভারের কাজ শুরু হওয়ার পর ব্যবসায় এমনিতেই মন্দা। সিটি করপোরেশন এই গাতা (গর্ত) করা শুরু করার পর এহন তো ব্যবসা গুটানের সময় আইসে।’

রঞ্জন মুখার্জি নামের এক পথচারী বলেন, ‘দরকারি কাজে এইখানে আসছি। মাথার উপর ফ্লাইওভারের কাজ আর নিচে বড় গর্ত। ঝুঁকি নেয় ছাড়া আর কিছু করার নাই। ভোগান্তির কথা নাই কইলাম।’

বিষয়টি নিয়ে ডিএসসিসির প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা কামরুল ইসলাম চৌধুরির সাথে কথা বললে তিনি ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আজ (সোমবার মোয়র স্যার শান্তিনগরের জলবদ্ধতা পরিদর্শন করে বলেছেন আগামী আগস্টের মধ্যে জলাবদ্ধতার চিত্র একেবারেই থাকবে না।’ তিনি বলেন, ‘এরই মধ্যে আমরা বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছি। বিভিন্ন জায়গায় নির্বাহী কর্মকর্তাদের দায়িত্ব দিয়েছে, ধরেন কোথাও যদি কোন ম্যানহোলের ঢাকনা না থাকে বা এরকম কোন সমস্য থাকলে আমাদের কাছে রিপোর্ট করবে। আমরা সে অনুযায়ি ব্যবস্থা নিব।’

কামরুল ইসলাম বলেন, ‘মৌচাক থেকে শান্তিনগর বা রামপুরার দিকের সড়কে এখন আসলেই মানুষের জন্য ভোগান্তির। তবে এই পথে আমাদের ড্রেন নির্মাণের কাজ আশাকরি শিগগির শেষ হবে। এখনো আমাদের অনেক কাজ বাকি আছে। ফ্লাইওভার নির্মান শেষ না হওয়া পর্যন্ত আমরা সেগুলোতে হাত দিতে পারছিনা।’

(ঢাকাটাইমস/২৫এপ্রিল/এএকে/এসএএফ/)

সংবাদটি শেয়ার করুন

রাজধানী বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

রাজধানী এর সর্বশেষ

পাঁচ বছরেও শেষ হয়নি বনানীর এফআর টাওয়ারে অগ্নিকাণ্ডের বিচার

এক হাতে ইফতারের পানির বোতল, আরেক হাতে যান চলাচলের ইশারা ডিসির

এলিফ্যান্ট রোডে বাসা থেকে শিক্ষার্থীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার

ঢাকাস্থ কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা কল্যাণ সমিতির ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত

অসুস্থতার যন্ত্রণা সইতে না পেরে ছুরিকাঘাতে রিকশাচালকের আত্মহত্যা

রাজধানীর ধোলাইপাড়ে পুলিশ কনস্টেবলের স্ত্রীর ‘আত্মহত্যা’

বুধবার থেকে এক ঘণ্টা বাড়ছে মেট্রোরেল চলাচলের সময়

ঈদকে সামনে রেখে ডিবি-সাংবাদিক পরিচয়ে অপহরণের ফাঁদ

ভবিষ্যৎ নগর উন্নয়নে জাইকা ও ইঞ্জিনিয়ার ইনস্টিটিউটের সঙ্গে রাজউকের সভা

২৭ মার্চ থেকে রাত ৯টার পরও চলবে মেট্রোরেল

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :