ধাপে ধাপে হাদিসের সংকলন
পবিত্র কোরানের পর ইসলামের প্রধানতম উৎস হাদিস। রাসুলের কথা, কাজ, আদেশ, নিষেধ, চুপ থাকা, সমর্থন সবই হাদিসের মধ্যে গণ্য। মূলত কোরানের ব্যাখ্যাই হলো হাদিস। হাদিসের সাহায্যেই আমরা দীনের বিশ্লেষণ জানতে পেরেছি। রাসুলের জীবদ্দশায় হাদিসগুলো অত্যন্ত আগ্রহভরে মুখস্থ করে স্মৃতিপটে রাখতেন সাহাবায়ে কেরাম। তাদের কেউ কেউ কিছু হাদিস লিখেও রাখতেন।
রাসুলের ইন্তেকালের পর হাদিস সংকলনের প্রয়োজন দেখা দেয়। প্রথম খলিফা হজরত আবু বকর (রা.)-এর যুগে কোরান লিপিবদ্ধ হওয়ার পর হাদিস সংকলনের ব্যাপারেও সাহাবায়ে কেরাম ঐকমত্য পোষণ করেন। তবে হাদিস আনুষ্ঠানিকভাবে লিপিবদ্ধ করার সরকারি নির্দেশ আসে উমাইয়া খলিফা উমর ইবনে আবদুল আজিজের যুগে। এই আদেশ জারির পর মক্কা, মদিনা, সিরিয়া, ইরাক এবং অন্যান্য অঞ্চলে হাদিস সংকলনের কাজ শুরু হয়। সে যুগের ইমামরা কেবল দৈনন্দিন জীবনে প্রয়োজনীয় হাদিসগুলো ও স্থানীয় হাদিস শিক্ষাকেন্দ্রে প্রাপ্ত হাদিসসমূহ লিপিবদ্ধ করেছিলেন। তাদের কেউই বিষয়বস্তু হিসেবে বিন্যাস করে হাদিসগুলো লিপিবদ্ধ করেননি।
ইমাম মালিকের ‘মুয়াত্তা’ সর্বপ্রথম ও সর্বপ্রধান প্রমাণ্য হাদিসগ্রন্থ। হিজরি তৃতীয় শতাব্দীতে বিভিন্ন মনীষী মুসলিম বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে প্রচুর হাদিস সংগ্রহ করেন। এর মধ্যে বিখ্যাত হলেন ইমাম বুখারি, মুসলিম, আবু দাউদ, তিরমিজি, নাসায়ি, ইবনে মাজাহ ইত্যাদি। এদের সংকলিত হাদিস গ্রন্থগুলো হলো সহিহ বুখারি, সহিহ মুসলিম, সুনানে আবু দাউদ, জামে তিরমিজি, সুনানে নাসায়ী এবং সুনানে ইবনে মাজাহ। এই ছয়টি হাদিসগ্রন্থকে সম্মিলিতভাবে ‘সিহাহ সিত্তাহ’ বা ছয়টি বিশুদ্ধ হাদিসগ্রন্থ বলা হয়।
এভাবে মহানবী (সা.) এর জীবদ্দশায় যে হাদিসগুলো প্রধানত সাহাবায়ে কেরামের স্মৃতিপটে মুখস্থ ছিল তা ধীরে ধীরে লিখিত রূপ নেয়। আর আব্বাসীয় যুগে হাদিস লিপিবদ্ধের কাজ পরিসমাপ্তি ঘটে। হাদিসে সংকলনের মাধ্যমে পরবর্তীদের জন্য ইসলামকে জানা এবং বোঝা অনেক সহজ হয়ে যায়।
যুগে যুগে হাদিসের ওপর প্রচুর গবেষণা ও লেখালেখি হয়েছে। হাদিসের ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণে বিভিন্ন ভাষায় অসংখ্য বইপত্র লিখিত হওয়ার কারণে হাদিস অনেকাংশে মানুষের হাতের নাগালে চলে আসে। বর্তমানে হাদিস আমাদের কাছে এতটাই সহজলভ্য হয়ে গেছে যে, একটি সিডি বা সামান্য মেমোরিতে লাখ লাখ হাদিস সংরক্ষণ করা সম্ভব হচ্ছে। এতে হাদিসের চর্চা ও গবেষণার কাজ অনেক সহজ হয়ে গেছে।
(ঢাকাটাইমস/২৫এপ্রিল/জেবি)
মন্তব্য করুন