ভয়ংকর হয়ে উঠছে বরিশালের নৌপথ

বরিশাল প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ২৬ এপ্রিল ২০১৭, ০৮:২৩

প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা কারণে ভয়ংকর হয়ে উঠছে বরিশালের নৌপথ। নৌপথের ঝুঁকি নিয়ে একাধিকবার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানো হলেও কোনো ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না বলে অভিযোহ করেছেন অনেকে।

তবে আধুনিক প্রযুক্তি ও দক্ষ চালক থাকলেও নদীপথের পরিবর্তন, ডুবোচর-চর ও ভাঙা-গড়ার খেলাকেই এখন দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে দেখছেন নৌপথে যাত্রীদের সেবার দায়িত্বে থাকা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। বিআইডব্লিউটিএর কর্মকর্তারা বলছেন আগের তুলনায় কমেছে নৌ দুর্ঘটনা।

মধ্যরাতে প্রতিযোগিতার নামে দুই লঞ্চের পাশাপাশি ও সামনে-পেছনে সংঘর্ষ বা ধাক্কা লাগার ঘটনাও ঘটছে হরহামেশা।

নৌ-দুর্ঘটনায় গত এক বছরে প্রাণ হারিয়েছে অন্তত অর্ধশত মানুষ। আর প্রায় ২৪টি নৌ দুর্ঘটনায় আহতের হিসাব রয়েছে অগণিত।

এ নিয়ে যাত্রী থেকে শুরু করে লঞ্চ স্টাফদেরও মধ্যে এখন ভীতির সৃষ্টি হয়েছে নৌপথে।

এসব দুর্ঘটনার মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ ছিল বানারীপাড়ার সন্ধ্যা নদীতে ঐশী নামের লঞ্চের ডুবে যাওয়া। অবৈধ নৌযান ঐশী অর্ধশত যাত্রী নিয়ে ডুবে গেলে প্রাণ হারায় ২৭ জন, আহত হয় ১২ জনের মতো। এদিন বিকেলে একই স্থানে লঞ্চের ধাক্কায় নৌকাডুবিতে মারা যায় আরো একজন। ২০১৬ সালের ৪ জুলাই ঢাকা বরিশাল রুটের সুরভী ৭ লঞ্চের সঙ্গে স্টিমার পিএস মাহসুদের সংঘর্ষে ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারায় পাঁচ যাত্রী। আহত হয় নয়জন।

নৌকা বা ট্রলার ডুবে নিখোঁজ ও নিহত হওয়ার খবরও কম নয়। ২০১৬ সালের ২৭ এপ্রিল বানারীপাড়ার সন্ধ্যা নদীতে ট্রলারের ধাক্কায় নৌকা ডুবে নানা-নাতির মৃত্যু হয়। ৫ জুলাই মুলাদীর আড়িয়াল খাঁ নদীতে লঞ্চের ধাক্কায় ট্রলার ডুবে এক শিশু নিঁখোজ হয়। ১৫ সেপ্টেম্বর হিজলার মেঘনা নদীতে ট্রলারের ধাক্কায় ট্রলার ডুবে ভাই-বোনের মৃত্যু হয়। ৫ অক্টোবর মুলাদীতে লঞ্চের ধাক্কায় নৌকা ডুবে জেলে নিহত হয়। ১২ ডিসেম্বর মেহেন্দিগঞ্জের গজারিয়া নদীতে লঞ্চের ধাক্কায় নৌকা ডুবে জেলে নিঁখোজ হয়। চলতি বছরের ১০ জানুয়ারি হিজলার দুর্গাপুর ঘাটে লঞ্চের ধাক্কায় ব্যবসায়ীর ও ১১ মার্চ বানারীপাড়ার সন্ধ্যা নদীতে নৌকা ডুবে এক নারীর মৃত্যু হয়।

এ ছাড়া সূত্র মতে, আরো বেশ কয়েকটি দুর্ঘটনার খবর পাওয়া যায় বিভিন্ন সময়ে। ২০১৬ সালের ১৭ মার্চ হিজলার মেঘনা নদীতে ডুবে যাওয়া বালুবাহী বাল্কহেডের ধাক্কায় ৫০০ যাত্রী নিয়ে সুন্দরবন-৯ লঞ্চের তলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ৩১ অক্টোবর উজিরপুরে সন্ধ্যা নদীতে দুই শতাধিক যাত্রী নিয়ে এমভি যুবরাজ ও বালুর কার্গোর মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। সর্বশেষ গত ২২ এপ্রিল কীর্তনখোলায় ৪০০ যাত্রীসহ গ্রীনলাইন-২ এর সাথে কয়লাবাহী কার্গো মাসুদ-মামুন-১ এর মুখোমুখি সংঘর্ষে দুটিই ডুবে যায়। আর প্রতিটিতেই অল্পের জন্য বেঁচে যায় এসব লঞ্চের শত শত যাত্রী ও আরোহী।

সুন্দরবন নেভিগেশনের চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান রিন্টু জানান, এখন মাস্টার চালকরা অনেক অভিজ্ঞ, তবে অবৈধ নৌযান রোধ ও চরসহ নদীপথের বিভিন্ন সমস্যা গুরুত্ব দিয়ে দেখা উচিত। বেশির ভাগ দুর্ঘটনা অবৈধ নৌযান ও ডুবোচরের কারণেই হচ্ছে।

বিআইডব্লিউটিএ বরিশালের নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের উপপরিচালক আজমল হুদা জানান, নৌপথে অবৈধ ট্রলার, বাল্কহেড চলাচলও নিয়ম ও নিয়ন্ত্রণের মধ্যে আনার কাজ চলছে। এ ছাড়া প্রথমে দরকার সচেতনতা। আর এই সচেতনতার কারণে বিগত দিনের চেয়ে কমেছে নৌ দুর্ঘটনা।

বরিশাল জেলা প্রশাসক ড. গাজী মো. সাইফুজ্জামান বলেন, এ পর্যন্ত যেসব দুর্ঘটনা ঘটেছে, সেগুলো ভৌগোলিক কারণে হচ্ছে কি না সেদিকে খেয়াল রাখা হচ্ছে।

(ঢাকাটাইমস/২৬এপ্রিল/মোআ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :