প্রধানমন্ত্রী, চলুন একটা বোনম্যারো ট্রান্সপ্ল্যান্ট সেন্টার বানাই

ঢাকাটাইমস ডেস্ক
| আপডেট : ২৬ এপ্রিল ২০১৭, ১৯:৩৪ | প্রকাশিত : ২৬ এপ্রিল ২০১৭, ১৯:১৬

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি ছোট্ট অহনের প্রস্তাব- প্রধানমন্ত্রী, চলুন একটা বোনম্যারো ট্রান্সপ্ল্যান্ট সেন্টার বানাই। এই প্রস্তাবের পেছনে অবশ্য আরো একটি চিঠির প্রেরণা কাজ করেছে। তার এক চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে স্বাস্থ্যমন্ত্রী খুলনায় রক্তের রেডসেল আলাদা করার নষ্ট মেশিনটি ঠিক করে দিয়েছেন। এখন আর আহনের মতো শিশুদের কষ্ট করে খুলনা থেকে ঢাকায় আসতে হয় না।

জন্মের পর থেকেই মাসে মাসে রক্ত নিয়ে বেঁচে আছে অহন। চতুর্থ শ্রেণির অহনকে বাঁচতে হলে এখন বোনম্যারো ট্রান্সপ্ল্যান্ট ছাড়া বিকল্প নেই। শৈশব থেকে ব্লাড ক্যান্সারের সঙ্গে লড়াই করতে করতে এত দিনে সে জেনে গেছে বোনম্যারো ট্রান্সপ্ল্যান্ট কত ব্যয়বহুল। নন্দিত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের জনপ্রিয় চরিত্র হিমুর ভক্তদের সংগঠন ‘হিমু পরিবহণ’-এর ছোট্ট সদস্য অহনের চিকিৎসার জন্য সাহায্য তুলছে তার স্বজন-শুভাকাঙ্ক্ষীরা। হয়তো মানুষের ভালোবাসায় বিদেশ গিয়ে চিকিৎসা হবে অহনের।

কিন্তু দেশের হাজারো ব্ল্যাড ক্যান্সার রোগীর জন্য কি এভাবে সাহায্য তুলে চিকিৎসা দেয়া সম্ভব? এই প্রশ্নটিই শিশু অহনের ভেতরে আন্দোলিত করে। তার ধারণা, দেশে বোনম্যারো ট্রান্সপ্ল্যান্ট সেন্টার হলে কম খরচে চিকিৎসা নিয়ে বেঁচে যাবে হাজারো অহন। দেশে পদ্মা সেতুসহ হাজার হাজার কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। অহনের কচি মনের বিশ্বাস, প্রধানমন্ত্রী চাইলে একটি বোনম্যারো ট্রান্সপ্ল্যান্ট সেন্টার হওয়া কঠিন কিছু নয়। তাই প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে লেখে একটি খোলা চিঠি।

‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, সালাম নিবেন। ভালবাসা রইল। আপনি কেমন আছেন? আমি জানি আপনি ব্যস্ত, তাই সংক্ষেপে আপনাকে আমার কথাটা বলে ফেলি। স্যাটেলাইট, সাবমেরিন, পারমাণবিক কেন্দ্র, পদ্মা সেতুর মত হাজার হাজার কোটি টাকার প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন হতে দেখে আমার সাহস করে আপনাকে বলতে ইচ্ছে হয়, প্রধানমন্ত্রী একটা ভালো মানের বোনম্যারো ট্রান্সপ্ল্যান্ট সেন্টার বাংলাদেশে বানিয়ে ফেলুন না।

আপনি হয়ত জানেন না, আমার বেঁচে থাকার জন্য বোনম্যারো ট্রান্সপ্লান্ট-এর বিকল্প নেই। প্রতি বছর আমার মত দেশের শত শত মানুষের বোনম্যারো ট্রান্সপ্ল্যান্টের প্রয়োজন হয়। কিন্তু আমাদের দেশে ভালো মানের বোনম্যারো ট্রান্সপ্ল্যান্টের সুবিধা নেই। যাদের সুযোগ হয়, আর্থিক অবস্থা ভালো, তারা ভারতে চিকিৎসা করাতে চলে যান।

আমার অবশ্য ভাগ্য ভালো। আমি ভাগ্যবান সারা দেশ থেকে একদল মানুষ আমায় ভালোবেসে আমার চিকিৎসার জন্য টাকা সংগ্রহ করছেন। হয়ত আগামী কয়েক মাসের মধ্যে আমার টাকা সংগ্রহ হয়ে যাবে। আমি চিকিৎসা করাতে ভারত যাব। কিন্তু যারা আমার মত ভাগ্যবান নয়, তাদের মৃত্যুর বিকল্প নেই। হয়ত আপনার কলমের এক খোঁচাতে হয়ে যাবে একটা ভালো মানের বোনম্যারো ট্রান্সপ্ল্যান্ট সেন্টার। বেঁচে যাবে আমার মত হাজার হাজার অহন। আপনাকে বলতে ভুলে গেছি আমার এক চিঠির প্রেক্ষিতে স্বাস্থ্যমন্ত্রী খুলনায় রক্তের রেডসেল আলাদা করার নষ্ট মেশিনটি ঠিক করে দিয়েছেন। এখন আমার মত শিশুদের আর কষ্ট করতে হয় না। আগে কত যে কষ্ট হত আমার আর মায়ের। প্রতি মাসে যশোর কিংবা ঢাকায় যেতে হত। এরপর আমার সাহস আরো বেড়ে গেছে। মায়ের সঙ্গে কথা বলে, সাহস করে আপনাকে চিঠিটা লিখে ফেললাম। আমি অহন বাঁচতে চাই, ডাক্তার যতই ভয় দেখাক। আমার নাকি কয়েক মাস সময় আছে, বড়জোর চলতি বছরটা। কিন্ত আমি স্বপ্ন দেখি, স্বপ্নের পদ্মা সেতু উদ্বোধনের সময় আমি আপনার সঙ্গে থাকব। খুলনা থেকে তখন আর সারারাত জেগে ঢাকায় আসতে হবে না ডাক্তার দেখাতে।

প্রধানমন্ত্রী বোনম্যারো ট্রান্সপ্ল্যান্ট সেন্টারটা খুলে ফেলেন না। প্লিজ। আপনি তো চাইলেই পারেন। বাবা বলেছিল, সবাই নাকি ভেবেছিল পদ্মা সেতু হবে না, বিদেশি সাহায্য ছাড়া এত বড় সেতু তৈরি অসম্ভব। আমি বাবাকে বলি, বাবা তোমাকে আমি পদ্মা সেতু দিয়ে ঢাকায় নিয়ে যাব।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, কত টাকা দরকার একটা বোনম্যাররো ট্রান্সপ্ল্যান্টের সেন্টার বানাতে? আমার চিকিৎসার পর যত টাকা থাকবে আমি তা দিয়ে দিব। আমিও দেশবাসী থেকে টাকা সংগ্রহ করে দিব। হাজার হাজার ভাইয়া-আপু আমার সঙ্গে আছে। প্লিজ প্রধানমন্ত্রী একটা উদ্যোগ নিন না। আমাদের তো বোনম্যারো ট্রান্সপ্ল্যান্ট ছাড়া বেঁচে থাকার কোনো বিকল্প নেই। বলতে ভুলে গেছি আমার নাম অহন। থাকি খুলনায়। চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ি। আপনি ভাল থাকুন। সুস্থ থাকুন। ভালবাসা রইল আপনার প্রতি। ইতি- অহন, খুলনা।’

অহনকে নিয়ে এর আগে গত বছরের ২৬ সেপ্টেম্বর ‘বাঁচতে চায় অহন’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল ঢাকাটাইমস।

(ঢাকাটাইমস/২৬এপ্রিল/এসআই/মোআ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

মতামত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :