উপবৃত্তি না থাকায় ভর্তিতে অনাগ্রহী শিক্ষার্থীরা

রেজাউল করিম, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ২৭ এপ্রিল ২০১৭, ১১:১৮

প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করতে সরকার শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি দিয়ে আসছে। এই কারণে কোমলমতি শিশুরা স্কুলমুখী হওয়ায় শিক্ষার এই স্তরে শিক্ষার হারও অনেক বেড়েছে। স্কুলে পাঠাতে অভিভাবকের পক্ষ থেকেও নেই তেমন কোনো নিষেধাজ্ঞা। মোটামুটিভাবে প্রাথমিক শিক্ষা থেকে ঝরে পড়া রোধ হয়েছে।

সরকারিভাবে শতভাগ শিশুদের উপবৃত্তি দেয়ার কথা থাকলেও নিয়মে নিষেধাজ্ঞা থাকায় পৌর এলাকার প্রাথমিক স্কুলগুলোর শিক্ষার্থীরা পাচ্ছে না উপবৃত্তি। বিশেষ করে পৌর ও ইউনিয়ন সীমান্ত এলাকার পৌর স্কুলগুলোকে পড়তে হচ্ছে বিপাকে। পৌর এলাকার স্কুলগুলোর শিক্ষার্থীরা উপবৃত্তি না পেয়ে অস্বচ্ছল পরিবারের শিশুরা পাশের ইউনিয়নের স্কুলগুলোর প্রতি ঝুঁকে পড়ছে। অনেকে পড়ালেখা থেকেই ছিটকে পড়ছে। স্বচ্ছল পরিবারের শিশুরা ঝুঁকছে প্রাইভেট স্কুলের দিকে।

এ ধরনের আলোচনা থাকলেও প্রমাণ মিলে টাঙ্গাইল সদরে কাজিপুর গ্রামের একটি স্কুলে গিয়ে। ১৯১২ সালে প্রতিষ্ঠিত কাজিপুর পূর্ব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঁচজন শিক্ষক-শিক্ষিকা কর্মরত। আর বিদ্যালয়টিতে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৮৬ জন। ৮৬ জনের মধ্যে অনেকে ওই বিদ্যালয়ে ভর্তি থেকে বিভিন্ন কিন্ডার গার্টেন স্কুলে ক্লাস করছে। বিদ্যালয়ে যাওয়ার আগেই সামনে থেকে এক ভদ্রলোক বললেন, ছাত্রছাত্রী ভর্তি করাব কি না? উত্তরে না বলে তার সঙ্গে আলোচনায় উঠে আসল- আগে ৩৫ জন শিক্ষার্থী ছিল। শিক্ষক-শিক্ষিকার প্রচেষ্টা এর পরিচালনা পরিষদের তৎপরতায় ৩৫ থেকে ৮৬ তে উন্নীত হয়েছে। তবে স্কুলের পাশের অনেকেই বললেন, শিক্ষার্থীর সংখ্যা পঞ্চাশের বেশি হবে না।

সরজমিন পরিদর্শনে শিক্ষক-শিক্ষিকা, শিক্ষার্থীসহ এলাকাবাসী শোনাল নানা আক্ষেপ। বিদ্যালয়টির তিন দিকে লৌহজং নদী। ক্যাচমেন্ট এড়িয়ার তিন দিকেই রয়েছে ইউনিয়ন এলাকা। স্কুলটি ক্যাচমেন্টের পাশেই রয়েছে ইউনিয়ন পর্যায়ে দেওজান-চিনাখোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চিনাখোলা-বরটিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কাজিপুর পশ্চিম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পুটিয়াজানি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এসকল বিদ্যালয় ভৌগলিকভাবে ইউনিয়ন পর্যায়ে পড়ায় এখানকার শিক্ষার্থীরা উপবৃত্তি পেয়ে আসছে। অথচ ওই বিদ্যালয়টি পৌরসভার আওতায় থাকায় শিক্ষার্থীরা উপবৃত্তি থেকে বঞ্চিত হয়ে পাশের বিদ্যালয়ে ভর্তি হচ্ছে। এছাড়া পাশেই রয়েছে একটি মাদ্রাসা ও একটি কিন্ডার গার্টেন স্কুল। সেখানেও শিক্ষার্থীর একটি অংশ ভর্তি হচ্ছে। ফলে ৮৬ জন মতান্তরে এর চেয়ে কম শিক্ষার্থীর জন্য বরাদ্দ রয়েছে ৫ জন শিক্ষক শিক্ষিকা। ৮৬ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে (প্রাক-প্রাথমিক) শিশু শ্রেণিতেই ১৫ জন। এবছর সমাপনী পরীক্ষায় অংশ নেবে ১১ জন শিক্ষার্থী। গত সমাপনীর ফলাফলে তিনজন শিক্ষার্থীর বৃত্তি প্রাপ্তিসহ শিক্ষার মান উন্নয়ন হলেও উপবৃত্তি না থাকায় বিদ্যালয়টিতে শিক্ষার্থীদের স্কুলমুখী করা যাচ্ছে না।

বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা রওশন আরা আক্তার বলেন, শিক্ষার্থীর সংখ্যা কম প্রাইভেট পড়ানোর মতো করে পাঠদান হচ্ছে। প্রতিবছরই প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনীতে বৃত্তি পাচ্ছে বিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীরা। এর ধারবাহিকতায় এবারও নির্ধারিত কোঠার বৃত্তির চার জনের মধ্যে তিনজনই এই বিদ্যালয় থেকে বৃত্তি পেয়েছে। শিক্ষার্থী বাড়ানোর জন্য হোম ভিজিটসহ নানা প্রচেষ্টা নেয়ার পরও শুধুমাত্র উপবৃত্তি না থাকায় শিক্ষার্থী বাড়ছে না।

বিদ্যালয়টির পরিচালনা পর্ষদের সহ-সভাপতি হাসনা বেগম বলেন, বিদ্যালয়ের পাশে বিভিন্ন ইউনিয়নের সরকারি স্কুল রয়েছে। তারা উপবৃত্তি পাচ্ছে। ক্যাচমেন্ট এড়িয়ার সবচেয়ে বেশি শিক্ষার্থীর গ্রাম বাছরাকান্দি। ওই গ্রামের অধিকাংশ পরিবার হতদরিদ্র। উপবৃত্তি না থাকায় ওসব পরিবারের শিক্ষার্থীরা যেসকল বিদ্যালয়ে উপবৃত্তি পাচ্ছে সেখানে ভর্তি হচ্ছে।

বিদ্যালয়টির পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি আব্দুল্লাহ তালুকদার বলেন, শিক্ষার্থী বাড়ানো জন্য প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানের মতো নানা রকম খেলার সামগ্রী কিনে দিয়েছি। এক বছর নিজ খরচে টিফিনের ব্যবস্থা করেছিলাম। তবুও ছাত্রছাত্রী বাড়েনি। শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা নগদ টাকার প্রতি আগ্রহী। স্কুলটাকে টিকিয়ে রাখতে যেকোনভাবে যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে স্কুলে উপবৃত্তি চালু করার জোর দাবি জানান তিনি।

টাঙ্গাইল সদর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আলমগীর হোসেন জানান, এ বিদ্যালয়ের বিষয়টি তার জানা রয়েছে। তিনি বলেন, পৌর এলাকার স্কুলগুলোর তিন ভাগের এক ভাগ স্কুলেই এরকম সমস্যা রয়েছে। সরকার বিষয়টি বিবেচনায় রেখেছে। আমরা এধরনের স্কুলগুলো একটি তালিকা তৈরি করছি। শিগগিরই এরাও উপবৃত্তির আওতায় আসবে। তবে তিনি এ সমস্যা সমাধানের জন্য যত্রতত্র কিন্ডার গার্টেন স্কুলকে অনেকটা দায়ি করলেন।

তিনি বলেন, স্বচ্ছল পরিবারের শিশুদের ভর্তি করা হচ্ছে বিভিন্ন প্রাইভেট স্কুলে। আর অস্বচ্ছল পরিবার রয়েছে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। পৌর এলাকায় যেসকল শিক্ষার্থী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি রয়েছে তাদের অধিকাংশই দরিদ্র। তাই এদের সবার জন্য উপবৃত্তির দরকার।

(ঢাকাটাইমস/২৭এপ্রিল/প্রতিনিধি/এলএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

শিক্ষা বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিক্ষা এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :