নবম-দশম শ্রেণির ১২ বই সংশোধন হবে

নবম ও দশম শ্রেণির ১২টি পাঠ্যবই সংশোধন ও পরিমার্জন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। আগামী শিক্ষাবর্ষে এই বই শিক্ষার্থীদের হাতে দেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ।

বৃহস্পতিবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে মাধ্যমিক শিক্ষার মান উন্নয়ন নিয়ে শিক্ষাবিদদের সঙ্গে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের এক বৈঠক শেষে প্রেস ব্রিফিংয়ে মন্ত্রী এ কথা জানান।

শিক্ষামন্ত্রী জানান, বাংলা সাহিত্য, ইংলিশ ফর টুডে, বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়, বাংলাদেশ ও বিশ্বসভ্যতা, গণিত, উচ্চতর গণিত, সাধারণ বিজ্ঞান, পদার্থ, রসায়ন, জীববিজ্ঞান, হিসাববিজ্ঞান ও অর্থনীতি বই পরিমার্জন করা হবে। একেকজন শিক্ষাবিদের তত্ত্বাবধানে এসব বই পরিমার্জনের কাজ হবে বলে জানান তিনি।

একই মানের উত্তর লিখে শিক্ষার্থীরা যেন একই ধরনের নম্বর পেতে পারে সে বিষয়েও একটি গাইডলাইন তৈরির কথা জানিয়েছেন মন্ত্রী।

নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, ‘এই ১২টি বই আরও উন্নত, মার্জিত এবং সহজবোধ্য করে ছেলে মেয়েদের কাছে আমরা পৌঁছাবো। পাঠ্যবই নিয়ে আরেকটা বড় অভিযোগ হলো এটার মান সম্পর্কে। বইগুলো আরও সহজ ভাষায় সুন্দরভাবে উপস্থাপন করা হবে। যাতে শিক্ষার্থীরা আরও সুন্দরভাবে শিখতে পারে বা পড়ে বুঝতে পারে।’

মন্ত্রী বলেন, ‘বিজ্ঞান ও অর্থনীতির বইয়ের ছবিগুলো চার কালারের করে দেয়ার চেষ্টা করব। চার কালার না হলে বুঝতে সমস্যা হয়। আমরা নম্বরটা দেয়ার ব্যাপারেও একটা গবেষণা করেছি। দেখা যাচ্ছে, দুজন (পরীক্ষক একই উত্তরপত্রে) নম্বর দিচ্ছেন, পার্থক্য অনেক হয়ে যাচ্ছে। সেখানে আমরা একটা গাইড লাইন তৈরি করেছি।’

নাহিদ বলেন, ‘খাতা নেয়ার সময় একটা মডেল উত্তর থাকবে, যেখানে কেমন লিখলে কি রকম নম্বর পাবে তার গাইডলাইন থাকবে। নম্বর বেশি দেন, কম দেন, এ রকম গাইড লাইন দেয়া হচ্ছে না। সঠিকভাবে যেন দেন, সেটা বলা হচ্ছে।’ শিক্ষকতার অন্য সব বিষয় নিয়ে একটি শিক্ষক-গাইডলাইন দেয়া হয়েছে বলেও জানান মন্ত্রী।

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘প্রশ্নপত্র ফাঁসরোধে বিজি প্রেসসহ যেসব জায়গা সবচেয়ে ভালনারেবল সেসব জায়গায় পাঠানো, নিরাপদে পৌঁছে দেয়া হচ্ছে। এখন দেখা যাচ্ছে, শেষ ধাপে এসে কিছু অসৎ শিক্ষকের কারণে প্রশ্ন ফাঁস হয়ে যাচ্ছে। সেই সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে, ‍কিছু কোচিং সেন্টার। আমরা অনেক লোককে গ্রেপ্তার করেছি। যাদের মধ্যে অধ্যক্ষ, প্রধান শিক্ষক, শিক্ষকও রয়েছেন। এটা অব্যাহত থাকবে। কেউ ছাড়া পাবেন না।’

তিনি জানান, ‘ক্লাসরুমে এসে উত্তর বলে দিচ্ছেন এই ধরনের শিক্ষক আমরা রাখব না। সেটা করার প্রক্রিয়া চালিয়ে যাচ্ছি। দুঃখের বিষয় হচ্ছে, অভিভাবকরাও সন্তানের জন্য প্রশ্ন খোঁজেন। তার সন্তানকে কুশিক্ষা দিচ্ছেন, তার নৈতিকতাকে ধ্বংস করে দিচ্ছেন। আমরা চাই সামাজিক আন্দোলন গড়ে উঠুক- আমরা আমাদের ছেলে মেয়েদেরকে ভুল শিক্ষা দেব না। এক সময় সে বাবা-মার মর্যাদাকে ঘৃণা করবে। শিক্ষকতাকে ঘৃণা করবে। যারা দায়ী-তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব। আমরা সার্বিকভাবে আমাদের শিক্ষার সমস্যাকে সমাধান করে আরও উন্নতমানের সহজ শিক্ষা দেয়ার ব্যবস্থা করবো।’

পাঠ্যপুস্তকের বোঝা কমিয়ে আনার চেষ্টা করছি জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘শিক্ষা-জ্ঞানের প্রতিনিয়তই বিকাশ ঘটছে। আমাদের শিক্ষার একটা মৌলিক পরিবর্তনেও যেতে হবে। আমরা একসঙ্গেই সব পারি, তা না। এটা ধারাবাহিক কাজ। আমরা এটা চালিয়ে যাচ্ছি।’

বিষয়ভিত্তিক কাজ নিয়ে আজকে কথা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের পঞ্চম শ্রেণিতে ৫ থেকে ৬টা বই পড়ে। হঠাৎ করেই ষষ্ঠ শ্রেণিতে ১৩টা বই হয়ে যায়। এটা আমরা চাইলেই কালকে বদলে দিতে পারব না। এর উপর কাজ চলছে। আলাদা কমিটি আছে। কীভাবে এই পর্যায়ে সঠিক জ্ঞান দেয়া যাবে-তারা সে বিষয়ে কাজ করছেন। কীভাবে শিক্ষার্থীদের বোঝা কমিয়ে আনতে পারি-কমিটি সে বিষয়ে অনেকদূর অগ্রসর হয়েছে।’

মন্ত্রী জানান, ‘আমাদের পরীক্ষা লম্বা হয়ে যায়। অনেক বিষয় বেড়ে গেছে। কমিয়ে আনতে কাজ হচ্ছে। ইতিমধ্যে তিনটা বিষয়ে পাবলিক পরীক্ষা নেব না। এগুলো হচ্ছে পারফরমেন্স ভিত্তিক, ধারাবাহিক মূল্যায়নের মাধ্যমে এটা করব। শারিরীক শিক্ষা, ড্রয়িং কমিয়ে নিয়ে আসব।’

সভায় অন্যদের মধ্যে মোহাম্মদ ফরাস উদ্দিন, মঞ্জুর আহমেদ, রাশেদা কে চৌধুরী, মুহম্মদ জাফর ইকবাল, মোহাম্মদ কায়কোবাদ, মো. আখতারুজ্জামান, এমএম আকাশ, শ্যামলী নাসরিন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

(ঢাকাটাইমস/২৭এপ্রিল/এমএম/মোআ/জেডএ)