সবুজ অর্থনীতি গড়তে সমুদ্রসম্পদ কাজে লাগানোর তাগিদ
সবুজ অর্থনীতি গড়তে সমুদ্রসম্পদকে কাজে লাগানোর তাগিদ দিয়েছেন বিশিষ্টজনেরা। তারা বলছেন, পরিবেশের ক্ষতি না করে অর্থনৈতিক উন্নয়ন করতে হবে। আর এ ধরনের উন্নয়নে সবুজ অর্থনীতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
বৃহস্পতিবার ঢাকা চেম্বার অডিটোরিয়ামে সবুজ অর্থনীতি বিষয়ক এক কর্মশালয় বক্তারা এসব কথা বলেন। ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) এ কর্মশালার আয়োজন করে। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন পানিসম্পদ মন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ।
প্রাকৃতিক ভারসাম্য এবং পরিবেশের ক্ষতিসাধন না করে অর্থনৈতিক উন্নয়নই সবুজ অর্থনীতি। মানুষের উন্নয়নের পাশাপাশি পরিবেশগত ঝুঁকি কমায় এবং অভাব দূর করে এই অর্থনীতি।
কর্মশালায় বক্তারা বলেন, বঙ্গপোসাগর থেকে মৎস আহরণ, সমুদ্র সৈকতকে মনোরম পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলা, গভীর সমুদ্রবন্দর স্থাপন, সমুদ্রে তেল ও গ্যাস কূপ খননের উপর গুরুত্ব দিতে হবে। সবুজ অর্থনীতি গড়তে সমুদ্রের এ সম্পদ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
পানিসম্পদ মন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, পরিবেশের ক্ষতিসাধন না করে অর্থনৈতিক উন্নয়ন করতে হবে। ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি মধ্যম আয়ের দেশ ও ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নতদেশে পরিণত করতে হলে আমাদের জিডিপির প্রবৃদ্ধির হার সাত থেকে আট শতাংশ উন্নীত করতে হবে। এক্ষেত্রে আমাদের সমুদ্র সম্পদ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
সেমিনারে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মেরিটাইম ইউনিট-এর সচিব রিয়ার অ্যাডমিরাল (অব.) খুরশেদ আলম মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। তিনি জানান, বাংলাদেশের সমুদ্র সীমার পরিমাণ এক লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গকিলোমিটার। তিনি বঙ্গপোসাগর এলাকার সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর জন্য মৎস আহরণ, পর্যটন, গভীর সমুদ্রবন্দর স্থাপন, তেল ও গ্যাস কূপ খনন প্রভৃতি কার্যক্রমের উপর আরও বেশি করে গুরুত্বারোপ করার আহ্বান জানা।
খুরশেদ আলম বলেন, সমুদ্রের অপার সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে হলে আমাদের দক্ষতা বাড়ানোর পাশপাশি দক্ষ মানব সম্পদ তৈরির কোনো বিকল্প নেই। তিনি জানান, গভীর সমুদ্র এলাকায় মৎস আহরণে সক্ষম কোনো নৌযান আমাদের নেই। সমুদ্রে ‘কেইস কালচারিং’ এর মাধ্যমে আমরা ইলিশ উৎপাদান দ্বিগুন করতে পারি।
তিনি বলেন, জাহাজ ভাঙ্গা শিল্প বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত সম্ভাবনাময় এবং এটি প্রায় দুশো বিলিয়ন ডলারের একটি শিল্পে পরিণত হয়েছে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ জাহাজ ভাঙ্গা শিল্পে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে। তিনি সমুদ্র এলাকায় পর্যটনের প্রতি আরও বেশি মনোযোগী হওয়ার উপর গুরুত্বারোপ করেন।
স্বাগত বক্তব্যে ডিসিসিআইয়ের সভাপতি আবুল কাসেম খান মিয়ানমার এবং ভারতের উদাহারণ টেনে বলেন, এ সব দেশের মতো আমাদেরও গভীর সমুদ্র এলাকায় গ্যাসক্ষেত্র অনুসন্ধানে কার্যক্রম জোরদার করতে হবে।
ডিসিসিআই সভাপতি জানান, বঙ্গোপোসাগর এলাকায় প্রতিবছর আটশ মিলিয়ন মেট্রিক টন মাছ ধরা হয়, যার বেশির ভাগই করে থাকে মিয়নামার ও ভারত। ঢাকা চেম্বারের সভাপতি দেশের সমুদ্র সম্পদ আহরণ ও যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে ‘ন্যাশনাল ব্লু ওশান ইকোনোমি ডেভেলপমেন্ট পলিসি’ প্রণয়নের জন্য সরকারের প্রতি আহবান জানান।
ডিসিসিআই’র সমন্বয়কারী পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার আকবর হাকিম সমুদ্র এলাকাকে দূষণের হাত হতে রক্ষা করা এবং দক্ষ মানবসম্পদ তৈরির প্রতি গুরুত্বারোপ করেন। তিনি জানান, থাইল্যান্ডের জিডিপিতে কোস্টাল ট্যুরিজমের অবদান প্রায় ১৯শতাংশ। তাই বাংলাদেশের উচিত এ বিষয়ে আরও মনোযোগী হওয়া।
চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্সটিটিউট অব মেরিন সাইন্স অ্যান্ড ফিশারিজের অধ্যাপক সাইদুর রহমান চৌধুরী বলেন, দেশের বিপুল জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থান সৃষ্টি, অর্থনীতির চাকাকে বেগবান করার জন্য সমুদ্র অর্থনীতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। তিনি জানান, আমাদের সমুদ্র এলাকায় ৪৭৫ প্রজাতির মাছ থাকলেও ১০০টি প্রজাতির মাছের চাহিদা রয়েছে। তাই কোন ধরনের মাছের চাহিদা রয়েছে তা জানার জন্য গবেষণা পরিচালনা করা একান্ত আবশ্যক।
ব্লু ইকোনোমি সেল-এর অতিরিক্ত সচিব গোলাম সফিউদ্দিন জানান, গভীর সমুদ্র এলাকায় সম্পদ আহরণের বিষয়টির গুরুত্ব অনুধাবন করে সরকার ‘ব্লু ইকোনোমি সেল’ গঠন করেছে। তিনি জানান, সরকার সমুদ্র এলকায় মৎসসহ অন্যান্য সম্পদের বিষয়ে তথ্য পেতে জরিপ পরিচলনায় সক্ষম নৌযান কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সমুদ এলাকায় সম্পদ আহরণের পাশপাশি যেকোনো ধরনের কর্মকাণ্ড পরিচালনা তুলনামূলক ভাবে জটিল ও প্রযুক্তি নির্ভর। তাই আমাদেরকে অবশ্যই এ বিষয়ে প্রযুক্তিগত দক্ষতা অর্জন করতে হবে। পাশাপাশি দক্ষ মানবসম্পদ তৈরির বিষয়ে আরও নজর দিতে হবে।
বাংলাদেশ নিযুক্ত থাইল্যান্ডের রাষ্টদূত পানপিমুন সোয়ানাপুনসে, মালয়েশিয়ার হাইকমিশনার নূর আসহিকিন বিনতে মোহা তাইয়িব এবং ব্রনাই দারুসসালাম-এর হাইকমিশনার কর্মশালায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
(ঢাকাটাইমস/২৭এপ্রিল/জেআর/জেডএ)