বউ ফেলে পালালেন স্বামী ও শ্বশুর-শাশুড়ি

প্রকাশ | ২৭ এপ্রিল ২০১৭, ২৩:০৬ | আপডেট: ২৭ এপ্রিল ২০১৭, ২৩:১৬

ফরিদপুর প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস

ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলার চরযোশরদী ইউনিয়নের মধ্য জগদিয়া গ্রামে এক গৃহবধূকে ফেলে স্বামী ও শ্বশুর বাড়ির লোকজন পালিয়ে গেছে বলে খবর পাওয়া গেছে। তারা বাড়িতে তালা লাগিয়ে চলে গেছেন। ফলে দরজার সামনে তাদের ফিরে আসার অপেক্ষা করছেন ওই গৃহবধূ। তাকে গ্রহণ করা না হলে আত্মহত্যা ছাড়া আর কোনো পথ থাকবে না বলে হুঁশিয়ারি দেন এই গৃহবধূ।

জানা গেছে, গত সাত দিন আগে প্রেমিক ও স্বামী সুদর্শণ বিশ্বাস প্রথম বিয়ে গোপন করে অন্যথায় বিয়ে করছেন- এমন সংবাদের ভিত্তিতে হঠাৎ শ্বশুর বাড়িতে অবস্থান নেন নগরকান্দা পৌর এলাকার বিনয় চন্দ্র মন্ডলের মেয়ে চম্পা রানী মন্ডল। তাতেই বাড়ি থেকে উধাও হন প্রেমিক স্বামী, শ্বশুর ও শাশুড়ি। তারপর থেকে স্ত্রীর মর্যাদার দাবিতে ওই বাড়িতেই অবস্থান করছেন চম্পা।

সরজমিনে ওই বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, শ্বশুর বাড়িতে তালাবদ্ধ ঘরের সামনে অবস্থান নিয়ে বসে আছেন চম্পা। আর রাতের বেলা চাচা শ্বশুর রুহি দাস বিশ্বাস তার বাড়িতে থাকতে ও খেতে দিচ্ছেন।

চম্পা জানান, স্কুল জীবন থেকে তারা একে অপরকে পছন্দ করেন। ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষার পরে চম্পার পরিবার একাধিক বার বিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলে সুদর্শন বাধা হয়ে দাড়ান।

এরপরে ২০১৪ সালের ৯মার্চ নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে সুদর্শন চম্পাকে বিবাহ করেন।  তারপর তারা দীর্ঘদিন স্বামী-স্ত্রীর মতো করে সময় কাটিয়ে আসছেন। 

চম্পা জানান,  কিছুদিন ধরে সুদর্শন তার সাথে যোগাযোগ কমিয়ে দেন। এরই মধ্যে বন্ধুদের মাধ্যমে জানতে পারে সুদর্শন অন্যত্র বিয়ে করছে। সেই খবর পেয়ে ঢাকা থেকে বাড়ি এসে স্ত্রীর মর্যাদা দাবিতে শ্বশুর বাড়িতে অবস্থান করছেন চম্পা।

চম্পা বলেন, ‘আমি খুবই দরিদ্র পরিবারের মেয়ে, অর্থের অভাবে আমাদের পরিবারের কেউ পড়াশুনা করতে পারেনি। আমি অনেক কষ্টে অনার্স-মাস্টার্স করছি। আমি হিন্দু মেয়ে। আমাদের ধর্ম মতে একবারই বিয়ে হয়। আমার বিয়ে হয়ে গেছে। এখন আমি আমার শ্বশুর শাশুড়ি স্বামী নিয়ে সংসার করতে চাই। নইলে আমার মৃত্যু ছাড়া কোনো পথ নাই।’

এদিকে চম্পার অবস্থানের পর থেকেই পলাতক সরকারি চাকরিজীবী শ্বশুর, শাশুড়ি সুকুমার বিশ্বাস ও রীনা বিশ্বাস। আর সুদর্শন পেশায় সফটওয়ার ইঞ্জিনিয়ার। তিনি ঢাকাতে একটি বেসরকারি ফার্মে চাকরি করেন। ঘটনার পর থেকে তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি বন্ধ করে রেখেছেন। তাই তাদের সাথে যোগাযোগ করা যায়নি।

চম্পার নানী আশালতা মন্ডল ঢাকাটাইমসকে জানান, এই ছেলে দুইবার আমার নাতির বিয়ে ভাঙছে। ফরিদপুরে নিয়া বিয়া করছে তিন বছর আগে। এখন কয় বিয়ে করবে না। আপনারাই বলেন একটা মেয়ের ইজ্জত, জীবনের কি কোনো দামই নাই।

চরযোশরদী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আরিফুর রহমান তালুকদার ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে ঢাকাটাইমসকে বলেন, মেয়েটিকে নোটারি পাবলিক এর মাধ্যমে বিয়ে করছে এবং ঘর সংসারও করছে যার সত্যতা পেয়েছি। আমরা চেষ্টা করছি বিষয়টির সমাধান করতে।

বিষয়টি নিয়ে ফরিদপুরের নারী নেত্রী ও ব্লাস্টের সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট শিপ্রা গোস্বামী বলেন, নোটারি বিয়ে না হলেও বিয়ের ঘোষণা। ওইখানে স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে কোথায় কিভাবে বিয়ে হয়েছে। সে ক্ষেত্রে মেয়েটি ছেলেটির বৈধ স্ত্রী। আইনগতভাবে ছেলেটি মেয়েটিকে স্ত্রীর অধিকার ও ভরন পোষণ দিতে বাধ্য। এই বিষয়ে মেয়েটির কোনো সহায়তার প্রয়োজন হলে ব্লাস্ট তার পাশে থাকবে বলে জানান তিনি।

(ঢাকাটাইমস/২৭এপ্রিল/প্রতিনিধি/ইএস)