শিবচরে ‘আতঙ্ক’ ভদ্রাসন পুলিশ তদন্ত কেন্দ্র
এলাকার মানুষের নিরাপত্তার জন্য স্থাপন করা হয়েছিল পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রটি। এখন সেটি সাধারণ মানুষের জন্য এক আতঙ্ক হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর। একজন নারী ইউপি সদস্য একে বলছেন এলাকার বিষফোঁড়া। আর এ জন্য তারা দুষছেন ওই তদন্ত কেন্দ্রের একজন উপপরিদর্শক ও একজন কনস্টেবলকে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার ভদ্রাসন পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের উপপরিদর্শক নূরুল ইসলাম ও কনস্টেবল (গাড়ির চালক) জাবেদ হোসেন যখন-তখন নিরীহ মানুষকে ভয় দেখিয়ে, আটক করে টাকা আদায় করেন। টাকা দিতে না পরলে নির্যাতন, মাদক মামলায় ফাঁসানো ও সন্দেহভাজন হিসেবে থানায় চালান করে দেন। ফলে শত বছরের পুরনো ভদ্রাসন বাজারে আসতে ভয় পায় মানুষ। সন্ধ্যার পর অনেকটা শূন্য হয়ে যায় বাজারটি।
সরেজমিনে গেলে এই প্রতিবেদকের কাছে নানা অভিযোগ তুলে ধরেন বাজারের দোকানিসহ সাধারণ মানুষ। পরে এ ব্যাপারে জানতে চাইলে পুলিশ সুপার সরোয়ার হোসেন জানান, তিনি বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করছেন।
সাংবাদিকদের কাছে ভদ্রাসন বাজারের ব্যবসায়ী আব্দুল খালেক অভিযোগ করেন, একটি মামলায় চার্জশিট থেকে তার নাম বাদ দেয়ার জন্য এসআই নূরুল ইসলাম ও কনস্টেবল জাভেদ দেড় লাখ টাকা দাবি করেন। টাকা দিতে রাজি না হওয়ায় তার দোকান বন্ধ করে দেয়ার হুমকি দিচ্ছেন তারা।
বাজারে মাছ বিক্রি করে বাড়ি ফেরার পথে আটক করা হয়েছিল মাছ ব্যবসায়ী সিরূপ দাসকে। এই অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘এসআই নূরুল ইসলাম ও ড্রাইভার জাভেদ আমাকে আটক করে বলেন, তোর কাছে ইয়াবা আছে। আমি অবাক হয়ে অস্বীকার করলে আমাকে মারধর করে শিবচর থানায় পাঠিয়ে দেয়। পরে আমি ৩০ হাজার টাকা দিলে সন্দেহভাজন হিসেবে আমাকে জেল হাজতে চালান দেয়।’
দীর্ঘ দিন ধরে ভদ্রাসন বাজারে ব্যবসা করছেন ইলেকট্রিক ব্যবসায়ী সরোয়ার হোসেন। তার দাবি, কোনো দিন তার নামে কেউ দুর্নাম করেনি। ‘অথচ পুলিশ আমাকে আটক করে ব্যাপক নির্যাতন করে। আমার আত্মীয়-স্বজনদের কাছ থেকে ১ লাখ ৪ হাজার টাকা আদায় করে পরে ৫০ পিস ইয়াবা দিয়ে চালান দেয় আমাকে।’
বাজারে আজিম নামের এক ব্যবসায়ীকে উলঙ্গ করে শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগ রয়েছে বলে জানান বাজারের ব্যবসায়ীরা। গনি নামের এক ব্যক্তিকে টাকার জন্য আড়ার সঙ্গে ঝুলিয়ে মুখে গামছা বেঁধে নির্যাতন করার কথা জানান ভুক্তভোগীরা।
বাজারের শাকসবজি বিক্রেতা এক নারী বলেন, ‘এই তদন্ত কেন্দ্রের পুলিশদের ভয়ে আমরা বাজারে আসতে ভয় পাই। তাদের কথা না শুনলে আমাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করে।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক নারী বলেন, ‘আমার স্বামী ঢাকা থাকে। এই তদন্ত কেন্দ্রের এসআই রাতে আমার বাসায় এসে গালাগালি করে। ওর ভয়ে আমি এই বাজারে যেতে পারি না। ভয়ে ভয়ে থাকি।’
ভদ্রাসন ইউনিয়ন পরিষদের মহিলা সদস্য নাছিমা বেগম এই পুলিশ কেন্দ্র এখন এলাকার বিষফোঁড়া হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে মন্তব্য করেন। তার ভাষ্য, পুলিশের নির্যাতনে ভয়ে এলাকায় নিরীহ মানুষ রাতে ঘুমাতে পারে না। যখন-তখন যাকে ইচ্ছে তাকে মাদক, অস্ত্র মামলার ভয় দেখিয়ে টাকা আদায় করে। এ ব্যাপারে আইজিপি ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নজর কামনা করেন তিনি।
এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে এসআই নূরুল ইসলাম সাংবাদিকের সঙ্গে অশ্লীল ভাষা প্রয়োগ করেন।
তবে পুলিশ সুপার সরোয়ার হোসেন বলেন, ‘এ ব্যাপারে কেউ লিখিত অভিযোগ করলে তদন্ত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে আমি চেষ্টা করছি, বিষয়টি সমাধানের।’
(ঢাকাটাইমস/২৮এপ্রিল/মোআ)
মন্তব্য করুন