বীরশ্রেষ্ঠের রউফনগরে বিদ্যুৎ সংযোগ
মধুখালী উপজেলার কামারখালী ইউনিয়নের রউফনগর। বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফের জন্মস্থান। এতকাল বিদ্যুতের আলো পৌঁছেনি মধুমতি তীরের গ্রামটিতে। গত মঙ্গলবার আঁধার ঘুচলো। বিদ্যুৎ পৌঁছেছে মুন্সী আব্দুর রউফের গ্রামে। তাঁর স্মৃতিতে গড়ে তোলা জাদুঘর ও গ্রন্থাগারে দেয়া হয় বিদ্যুৎ সংযোগ। আলো পৌঁছেছে বীরশ্রেষ্ঠের ভিটাতেও। যেখানে জন্মেছিলেন জাতির এই সাহসী সন্তান। ওই বাড়িতে এখন থাকেন আব্দুর রউফের বড় বোন জোহরা বেগম।
পল্লী বিদ্যুৎ সূত্র বলছে, রউফনগর (সাবেক সালামাতপুর) ছাড়াও কমরপুর, হাসনা, গন্ধখালীতেও বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হচ্ছে। গ্রাম চারটিতে গ্রাহক আছে একহাজার দুইশো। রউফনগরে আছে একশজন গ্রাহক। পুরো ইউনিয়নে সাড়ে ২২ কিলোমিটার বিদ্যুতের তার টানা হয়েছে।
বিদ্যুতের আলো পৌঁছে যাওয়ায় উৎসবভাব ওই অঞ্চলের মানুষের মাঝে। বিদ্যুৎ তাদের নিত্যদিনের জীবনযাত্রায় স্বস্তি ফেরাচ্ছে। এই উন্নয়নে তারা খুশি।
জানতে চাইলে কামারখালী ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান লুৎফর রহমান ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘সারাদেশে এত উন্নয়ন হয়েছে অথচ বীরশ্রেষ্ঠের গ্রাম এতদিন ছিল বিদ্যুৎ বঞ্চিত। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার আমাদের দিকে তাকিয়েছেন, এজন্য তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা।’ তিনি বলেন, ‘এর পেছনে আলফাডাঙ্গার কৃতিসন্তান আরিফুর রহমান দোলনের প্রচেষ্টা ছিল। তিনি এখানে এসে বলে গিয়েছিলেন বিদ্যুৎ সংযোগের বিষয়টি যেন দ্রুত হয় এটা দেখবেন। তিনি কথা রেখেছেন। এজন্য তাকে ধন্যবাদ।’
বীরশ্রেষ্ঠ আব্দুর রউফ স্মৃতি পাঠাগারের গ্রন্থাগারিক মুন্সী সাইদুর রহমান সৈকত ঢাকাটাইমসকে জানান, গত মঙ্গলবার বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফ গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর এবং তার বাড়িতে প্রাথমিকভাবে বিদ্যুতের দুটি লাইন সংযোগ দেয়া হয়েছে। পরদিন বুধবার ফরিদপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার রাম শংঙ্কর রায় বীরশ্রেষ্ঠের বাড়ি পরিদর্শন করে গেছেন। আস্তে আস্তে চার গ্রামেই সংযোগ দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
এ ব্যাপারে কামারখালী ইউনিয়ন যুবলীগ নেতা তারেক মুন্সী ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘কামারখালী ইউনিয়নের মানুষ দীর্ঘদিন বিদ্যুতের প্রতিক্ষায় ছিল। বিদ্যুৎ সংযোগ তাদের প্রতিক্ষার অবসান ঘটিয়েছে।’
এ ব্যাপারে মুক্তিযুদ্ধ প্রজন্ম লীগের মধুখালী থানা শাখার সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলী ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আরিফুর রহমান দোলন ভাইয়ের কাছে আমরা কৃতজ্ঞ। কারণ বীরশ্রেষ্ঠের গ্রামের ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিতে তাঁর অক্লান্ত প্রচেষ্টা ছিল।’
বিদ্যুৎ সংযোগে খুশি স্থানীয় তরুণরাও। মুন্সী আব্দুর রউফ ক্লাবের সভাপতি মো. রানা ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘বিদ্যুতের কারণে অনেক হতদরিদ্র ঘরের সন্তান ঠিকমতো লেখাপড়া করতে পারতো না। কারণ প্রদীপ জ্বালিয়ে কিংবা ব্যাটারির সাহায্যে বাতি জ্বালানোর সাধ্য সবার নেই। পড়াশোনা ছেড়ে দিতো। এখন বিদ্যুৎ আসায় কম খরচে শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা করতে পারবে।
অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে স্থানীয় প্রবীণ লাভলু মিয়া বলেন, ‘পিছিয়ে পড়া রউফনগর এখন এগিয়ে যাবো। বিদ্যুতের আলো এই গ্রামের মানুষকে এগিয়ে নেবে।
গত ৬ এপ্রিল বীরশ্রেষ্ঠের স্মৃতি পাঠাগারে তিন শতাধিক বই দিয়েছে কাঞ্চন মুন্সী ফাউন্ডেশন। বই বিতরণ অনুষ্ঠানে ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান, ঢাকাটাইমস ও সাপ্তাহিক এই সময় সম্পাদক আরিফুর রহমান দোলন বলেছিলেন, বীরশ্রেষ্ঠের গ্রামে বিদ্যুৎ সংযোগ পৌঁছে দেয়ার ব্যাপারে তিনি যথাসাধ্য চেষ্টা করবেন। ফিরে এসে তিনি বিষয়টি নিয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরে কথা বলেছেন।
ঢাকাটাইমস/২৮এপ্রিল/জেএ/এইচএফ
মন্তব্য করুন