ভুয়া সনদে চাকরির মেয়াদ বাড়াতে চান দুই অধ্যক্ষ!
পাবনার বেড়া ও সাঁথিয়া উপজেলার দুই কলেজ অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদে চাকরি ও ভাতা উত্তোলনের অভিযোগ উঠেছে। অভিযুক্তদের একজন কাশীনাথপুর শহীদ নূরুল হোসেন ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুল বাতেন ও অপরজন মাশুন্দিয়া-ভবানীপুর কেজেবি ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুল গণি। জাল সনদধারী এই দুই অধ্যক্ষ এখন নিজ নিজ কলেজে চাকরির মেয়াদ বাড়াতে তদবির করছেন।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, বেড়া উপজেলার মাশুন্দিয়া-ভবানীপুর কেজেবি ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুল গনি নাটোর জেলার গুরুদাসপুর থানার বিলসা গ্রামের অসিমুদ্দিনের ছেলে। ১৯৮৮ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর তিনি এ কলেজে অধ্যক্ষ হিসেবে যোগদান করেন এবং বিয়ে করার সুবাদে এই এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা হন।
স্থানীয়রা জানান, এই কলেজে যোগদানের আগে কখনও তাকে এ অঞ্চলে দেখা যায়নি। অথচ আট থেকে দশ বছর আগে হঠাৎ করেই তিনি নিজেকে বীর মুক্তিযোদ্ধা বলে জাহির করতে থাকেন। তিনি প্রমাণ হিসেবে একটি মুক্তিযোদ্ধা সনদও দেখিয়ে থাকেন। সেই সনদে তিনি নিয়মিত ভাতা তুলছেন, মুক্তিযোদ্ধা কোটায় তার ছেলেকে পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করিয়েছেন। আর এখন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে কলেজে অধ্যক্ষের চাকরির মেয়াদ বর্ধিত করার চেষ্টা করছেন।
স্থানীয় কয়েকজন বীর মুক্তিযোদ্ধা জানান, এর আগে মুক্তিবার্তা এবং সাধারণ ও বিশেষ গেজেট যাচাই-বাছাই করে তার সম্মানি ভাতা বাতিলের জন্য আবেদন করা হয়েছিল। তখন যথাযথ তদন্ত হয়নি বলে তারা অভিযোগ করেন।
মাশুন্দিয়া ইউনিয়ন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মাজেদ আলী খান মাস্টার বলেন, ‘অধ্যক্ষ আব্দুল গনি এ ইউনিয়নে মুক্তিযুদ্ধ করেননি। তিনি হয়ত কারো মাধ্যমে একটি সনদ সংগ্রহ করেছন। সনদটি জাল হতে পারে। নিরপেক্ষ তদন্ত হলে আসল ঘটনা বেরিয়ে আসবে।’
অপরদিকে সাঁথিয়া উপজেলার কাশীনাথপুর শহীদ নুরুল হোসেন ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুল বাতেন একই কৌশলে মুক্তিযোদ্ধা সেজেছেন। তিনি সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুর উপজেলার গালা ইউনিয়নের গোবিন্দপুর গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন। ১৯৮৩ সালের ১০ এপ্রিল পাবনার কাশীনাথপুর শহীদ নুরুল হোসেন ডিগ্রি কলেজে যুক্তিবিদ্যা বিভাগের প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন। চাকরির সুবাদে নব্বই দশকে সাঁথিয়া উপজেলার কলেজপাড়া মরিচপুরান গ্রামে জায়গা কিনে স্থায়ী বাসিন্দা হন। তিনিও কয়েক বছর আগ থেকে নিজেকে বীর মুক্তিযোদ্ধা বলে পরিচয় দিতে থাকেন। ২০১২ সালের ৯ এপ্রিল তিনি মুক্তিযোদ্ধার সনদ ব্যবহার করে কলেজের অধ্যক্ষের চেয়ারে বসেন। তার সনদে দেখা যায়, তিনি বেড়া উপজেলার জাতসাখিনী ইউনিয়নে মুক্তিযুদ্ধ করেছেন।
আগামী ডিসেম্বর মাসে আব্দুল বাতেনের অবসের যাওয়ার কথা। তিনি মুক্তিযোদ্ধার সনদ ব্যবহার করে চাকরির মেয়াদ বর্ধিত করার চেষ্টা করছেন বলে তার কয়েকজন সহকর্মী জানান।
জাতসাখিনী ইউনিয়ন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার এসএম ফজলুল হক মাস্টারের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পরে কেউ মুক্তিযুদ্ধে নাম লেখাতে চাইত না। তাই ওই সময় যারা আগ্রহ প্রকাশ করেছেন, তাদেরকে আমরা তালিকায় নামভুক্ত করেছি। তিনি সাংবাদিকদের এ নিয়ে লেখালেখি না করতে অনুরোধ করে বলেন, তিনি একজন কলেজের অধ্যক্ষ। তাকে নিয়ে পত্রিকায় লেখালেখি করলে তার মান ক্ষুণ্ন হবে।
কাশীনাথপুর শহীদ নুরুল হোসেন ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুল বাতেন ও মাশুন্দিয়া-ভবানীপুর কেজেবি ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুল গনির সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তারা এই প্রতিবেদককে পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ না করতে অনুরোধ করেন।
(ঢাকাটাইমস/৩০এপ্রিল/প্রতিনিধি/জেডএ)