দুই মাস পর পদ্মা-মেঘনায় জেলেরা

শওকত আলী, চাঁদপুর থেকে
 | প্রকাশিত : ০১ মে ২০১৭, ০৯:৩৬

মার্চ-এপ্রিল দুই মাস নিষেধাজ্ঞা শেষে সোমবার (১ মে) থেকে পদ্মা-মেঘনায় মাছ ধরতে নদীতে নামছে জেলেরা। ৩০ এপ্রিল মধ্যরাত পর্যন্ত এই নিষেধাজ্ঞা বলবৎ ছিল। দীর্ঘ দুই মাস অলস সময় কাটানোর পর আজ থেকে নদীতে মাছ ধরতে নদীতে নামছে প্রায় ৪১ হাজার জেলে। এ কারণে স্বস্তি ফিরে এসেছে জেলে পরিবারগুলোতে। কর্তৃপক্ষের দাবি জাটকা রক্ষার কর্মসূচি সফল হওয়ায় এবার ইলিশের উৎপাদন বাড়বে।

জাটকা সংরক্ষণের জন্য সরকার গত দুই মাস চাঁদপুরসহ দেশের আর কয়েকটি স্থানে অভয়াশ্রম কেন্দ্র ঘোষণা করে। এ সময় নদীতে যেকোনো ধরনের মাছ আহরণ, পরিবহন, মজুদ, ক্রয়-বিক্রয় নিষিদ্ধ ছিল। ইলিশসহ অন্যান্য মাছ ধরতে জেলেরা এখন প্রস্তুত।

জাতীয় মাছ ইলিশ রক্ষায় সরকার প্রতি বছরের অক্টোবর মাসে মা ইলিশ রক্ষায় ১১ দিন ও জাটকা ইলিশ রক্ষায় মার্চ এপ্রিল দুই মাস নদীতে মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে আসছে। নিষেধাজ্ঞা চলাকালে মেঘনা নদীর মতলব উত্তরের ষাটনল থেকে লক্ষ্মীপুরের চর আলেকজেন্ডার পর্যন্ত যার ৬০ কিলোমিটার পড়েছে চাঁদপুর এলাকায়। আর এ কারণে চাঁদপুর সদর, হাইমচর, মতলব দক্ষিণ ও উত্তর উপজেলার ৪১ হাজার ১৮৯ জন জেলে কর্মহীন হয়ে পড়ে। বাধাহীন নদীতে মাছ ধরতে পারবে তাই জেলেদের মনে কর্মদ্দীপনা ফিরে এসেছে। ইতোমধ্যে তারা সব প্রস্তুতিও সম্পন্ন করেছে।

গতকাল রবিবার দুপুরে চাঁদপুর সদর উপজেলার হরিনা, বহরিয়া, লক্ষ্মীপুরসহ বেশ কয়েকটি স্থানে ঘুরে দেখা যায়, জেলেরা জাল ও নৌকা মেরামত করে আজ মধ্যরাত থেকে নদীতে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছে। প্রকৃত জেলেদের ধারণা খুব একটা ইলিশের উৎপাদন বাড়বে বলে মনে হয় না।

চাঁদপুর সদর উপজেলার আনন্দবাজার এলাকায় জেলেপাড়া ঘুরে দেখা গেছে, প্রায় জেলেরা এখন তাদের নৌকা ও জাল প্রস্তুত করছে। অনেকেই নৌকায় আলকতারা দিচ্ছে, আবার অনেক নৌকা মিস্ত্রি মেরামত করছে।

ইলিশ ধরার জন্য নৌকা ও চান্দি জাল নিয়ে প্রস্তুত ওই জেলেপাড়ার মোস্তফা বেপারী। তিনি ঢাকাটাইমসকে জানান, গত ১০ দিন পূর্বে পদ্মা-মেঘনার পানি ছিল পরিষ্কার। কিন্তু এখন গোলা। এ কারণে চাঁদপুর নৌ-সীমানায় ইলিশ না পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। তবে আমরা ভোলা জেলার দৌলত খাঁ এলাকায় বেশির ভাগ সময়ে ইলিশ ধরতে যাই।

যারা নদীতে নেমেছে তাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিল প্রশাসন। যদিও আটককৃতদের অধিকাংশই হচ্ছে অন্যান্য জেলার। আগামী বছর ইলিশ উৎপাদনের ওপর নির্ভর করবে কর্মসূচির সফলতা। যদিও এ কর্মসূচি সফল করায় ইলিশের উৎপাদন বেড়েছে বলে দাবি করেন চাঁদপুর জেলা মৎস্য কর্মকতার মো. সফিকুর রহমান। তিনি আরও জানান, নভেম্বর থেকে জুন মাস পর্যন্ত ১০ ইঞ্চির নিচের সাইজের ইলিশ ধরা নিষেধ।

প্রবীণ জেলে ইমান হোসেন বেপারী জানান, পদ্মা-মেঘনা নদীতে অনেক চর জেগেছে। নদীর নাব্য সংকটের কারণে ইলিশের বিচরণ কমে যাচ্ছে। অন্যান্য প্রজাতির মাছ ধরা পড়লেও বড় সাইজের ইলিশের দেখা নেই। তারপরেও দুই মাস বেকার থাকার পর জীবন জীবিকার তাগিদে নদীতে নামবে জেলেরা।

সরকার জেলেদের খাদ্য সহায়তা প্রতি মাসে ৪০ কেজি করে চাউল দিলেও জেলেরা এ বছর প্রচুর পরিমাণে জাটকা নিধন করেছে। যার ফলে এ বছর জাটকা নিধনের কারণে ইলিশের আকাল দেখা দেবে বলে মনে করছেন তিনি।

দুই মাসে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে জাটকা নিধন করার অপরাধে ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ প্রশাসন, কোস্টগার্ড এবং মৎস্য বিভাগ ইলিশ সংরক্ষণে এবং জাটকা রক্ষায় ৪৭৬টি অভিযান মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে, ১৯৬ জেলেকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেয়া হয়েছে। ২০৩ লাখ বর্গমিটার কারেন্ট জাল জব্দ করে ধ্বংস করা হয়েছে। অভিযান চালিয়ে ১০ মেট্রিক টন জাটকা আটক করে গরিব-দুঃস্থ ও এতিমদের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে।

(ঢাকাটাইমস/০১মে/প্রতিনিধি/জেবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :