মাঠে ঠকছে কৃষক বাজারে ভোক্তা

প্রতীক ওমর, বগুড়া থেকে
| আপডেট : ০১ মে ২০১৭, ১১:৩৭ | প্রকাশিত : ০১ মে ২০১৭, ১১:০৮

কোনো কারণ ছাড়াই অস্থিরতা দেখা দিয়েছে দেশের সবজি বাজারে। মধ্যসত্ত্বভোগীদের দৌরাত্মে দিনে দিনে অস্থির হয়ে উঠেছে বাজার। ফলে গ্রামে ঠকছেন কৃষক আর শহরে ভোক্তারা। গ্রামের বাজারে বিক্রি হওয়া ১১ টাকা কেজির দরের বেগুন ১১ কিলোমিটার দূরেই গিয়েই বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকায়।

উত্তরাঞ্চলের অন্যতম সবজি বাজার মহাস্থানগড়ে একজন কৃষক যে দামে সবজি বিক্রি করছেন সেই সবজির দাম বগুড়া শহরে এসেই তিনগুণ থেকে চারগুণ হয়ে যায়। সরেজমিনে পাইকারি এবং খুচরা বাজার ঘুরে চোখে পড়েছে এমন বৈষম্য। বর্তমান মহাস্থানের পাইকারি বাজারে কৃষক সরাসরি বেগুন ১১ টাকায় বিক্রি করছেন। পাইকারদের হাত বদল হয়ে শহরে এসে সেই বেগুন বিক্রি করছে ৪০ টাকা। ঢেঁরস বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ১৫ টাকা, খুচরা বাজারে এর দাম ৩০ টাকা। কৃষকরা করলা বিক্রি করছেন ১৫ টাকা কেজি, খুচরা ব্যবসায়ীরা বিক্রি করছেন ৪০ টাকা কেজি। মুলার দাম পাঁচ টাকা কেজি হলেও ভোক্তারা কিনছেন ১৫ টাকা।

এসব সবজি ঢাকার বাজারে গিয়ে আরও একধাপা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। এতে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী আর্থিক সুবিধা হাসিল করলেও কৃষক এবং সাধারণ ভোক্তারা বরাবরই ঠকছেন। উন্নতি হচ্ছে না কৃষকের ভাগ্যের।

কথা হয় রায়মাঝিরা এলাকার বেগুন চাষি রফিকুল ইসলামের সাথে। তিনি এবার পাঁচ বিঘা জমিতে বেগুন চাষ করেছেন। ইতোমধ্যেই তিনি দশ হাজার টাকার বেগুন বিক্রি করেছেন। বর্তমান বাজারে বেগুন ১১ টাকায় বিক্রি করছেন। এতে তেমন কোনো লাভ হচ্ছে না। খরচ বেড়ে যাওয়ায় মুনাফা কম হচ্ছে। পাইকাররা এই দামের বেশি কিনছেন না। শহরে গিয়ে বেগুন কত টাকায় বিক্রি হচ্ছে সেই খবর তার জানা নেই।

গ্রামের সহজ সরল কৃষক সংসারদীঘি এলাকার মোখলেছার রহমানেরও জানা নেই মাত্র কয়েক কিলোমিটার দূরের শহরে তার জমির করলা কত টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তাকে জিজ্ঞেস করলে জানান, পাইকাররা ১৫ টাকা কেজিতে করলা কিনছে। এতে নূন্যতম লাভ থাকে। অথচ তাদের সেই করলা খুচরা বাজারে ৪০ টাকার নিচে বিক্রি হচ্ছে না।

মহাস্থান সবজি বাজারের মূল ক্রেতা কুষ্টিয়া, যশোর, ঢাকা, ফরিদপুরসহ দেশের বিভিন্ন জেলার পাইকাররা। তারা এ বাজার থেকে প্রতিনিদ বিভিন্ন ধরনের সবজি পাইকারি কেনেন। তারা তাদের মোকামে নিয়ে এই সবজি তিনগুণ থেকে চারগুণ বেশি দামে কিক্রি করছেন। ফলে কৃষকের পাশাপাশি কিনে খাওয়া সাধারণ মানুষ প্রতিনিয়তই ঠকছে। পণ্য বাজারের মতোই সবজি বাজারে সরকারি কোনো মনিটরিং নেই। ফলে কিছু ব্যক্তির কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে এই বাজার।

শহরের ফতেহ আলী বাজার, রাজাবাজার, গোদারপাড়া বাজার, খান্দার বাজার ঘুড়ে দেখা গেছে খুচরা ব্যবসায়ীরা বেগুন ৪০ টাকা, পটল ৪০ টাকা, শসা ৪০ টাকা, ঢেড়স ৩০ টাকা থেকে ৪০ টাকা, দুধকুশি ও ঝিঙা ৪৫ টাকা, কাকরোল ৪০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ২৫ টাকা থেকে ৩০ টাকা, জালি কুমড়া ৩০ টাকা থেকে ৪০ টাকা প্রতিপিস বিক্রি হচ্ছে। চিচিঙ্গা ৪০ থেকে ৪৫, পেঁপে ২৫, ধোন্দুল ৪০ থেকে ৪৫, আলু ১৪ থেকে ১৮ টাকায় খুচরা বিক্রি হচ্ছে।

অপর দিকে এদিকে ডিম, ব্রয়লার মুরগির মাংসের দামেও বৃদ্ধির ছোঁয়া লেগেছে। খুচরা বাজারে প্রতি হালি ব্রয়লার মুরগির ডিম ৩২ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এছাড়া বাজারে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি (সাদা) ২২০ থেকে লাল মুরগি ২৫০ টাকায় বিক্রি হয়। গরুর মাংস ৪৬০ টাকা কেজি এবং খাসির মাংস ৬০০ টাকা কেজি পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। স্বাভাবিক নেই মাছের দাম। সব ধরনের দেশি বিদেশি মাছ বিক্রি হচ্ছে চড়া দামে। বেলে, চিংড়ি, বাইম আইড়, বোয়াল, কোরাল, জাতীয় মাছের দাম প্রতি কেজি ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা, তেলাপিয়া ২৩০ থেকে ২৫০, পাঙ্গাশ ১৭০ এবং কৈ মাছ বিক্রি হচ্ছে ২৮০ টাকায়।

তবে পাইকারি বাজার নিয়ন্ত্রণে না থাকায় খুচরা বাজারে অস্থিরতা বিরাজ করছে বলে মনে করছেন খুচরা ব্যবসায়ীরা।

খুচরা ব্যবসায়ী জামাল উদ্দিন শেখ বলেন, পাইকারিতে অনেক বেশি টাকায় কিনতে হয় প্রত্যেক পণ্য। সঙ্গত কারণেই খুচরাতে বেশি বিক্রি করতে হচ্ছে।

ক্রেতারা জানান, বাজার নিয়ন্ত্রণে সুষ্ঠু মনিটরিং থাকলে এভাবে হয়তো দাম বৃদ্ধি হতো না। বাজার ঊর্ধ্বগতিতে ক্রেতারা ক্ষোভ প্রকাশ করে অনেকেই বলেন, জীবনযাত্রার মান যেখানে নিচে নেমে গেছে সেখানে বাজারে সব পণ্যের দাম বাড়ায় আমরা এখন হতাশ। অনেকের অভিযোগ ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে সবসময় ক্রেতাদের ঠকিয়ে আসছে। সাধারণ মানুষও তাদের কাছে জিম্মি। এ বিষয়ে সরকারেরও নেই কার্যকরী কোনো পদক্ষেপ।

মহাস্থান সবজি বাজারের ইজারাদার আজমল হাজী ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আমাদের দেশের কৃষককে বেশি লাভবান জন্য সরকারিভাবে কৃষিবাজার নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি। এতে মধ্যসত্ত্বভোগীদের দৌরাত্ম কমবে। তাতে কৃষক ভোক্তা সবার জন্য বাজার সহনীয় হবে।’

(ঢাকাটাইমস/০১মে/প্রতিনিধি/জেবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :