দুর্দিন চলছে হাসিকিং চাল কলে

প্রতীক ওমর, বগুড়া
 | প্রকাশিত : ০১ মে ২০১৭, ১২:৪৪

সরকারের বেঁধে দেয়া দামে চাল দিলে কেজিতে দুই টাকা ভুর্তকি দিতে হবে মিল মালিকদের। ফলে এবারে মৌসুমেও তালা ঝুলতে পারে উত্তরাঞ্চলের অধিকাংশ মিলের দরজায়। এমন আশঙ্কার কথাই জানিয়েছেন হাসকিং চাল কল মালিকরা।

উত্তরজনপদের নওগাঁ, জয়পুরহাট, গাইবান্ধা, দিনাজপুর, বগুড়া ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। এ অঞ্চলের কৃষকরা স্বল্প পরিসরে ধান কাটা শুরু করলেও সরকারের বেঁধে দেয়া ধান চালের দামের সাথে সমন্বয় করতে হিমশিম খাচ্ছেন মিলাররা। তারা ভুর্তকি দিয়ে কিভাবে সরকারকে চাল দেবে- এই নিয়ে মহাবিপাকে আছেন।

ইতোমধ্যেই হাসকিং চাল কল মালিক সমিতির কেন্দ্রীয় নেতারা ১৮ এপ্রিল খাদ্যমন্ত্রীর সাথে বৈঠকে দাবি তুলে ধরেন। এতে চালের নির্ধারিত দাম ৩৪ টাকার জায়গায় নূন্যতম ৩৬ টাকা নির্ধারণ করার দাবি জানান। কিন্তু অদ্যাবধি কোন অগ্রগ্রতি নেই।

উত্তরাঞ্চলের একাধিক হাসকিং চালকল মালিকরা বলছেন, বর্তমান বাজারে মোটা চালে সর্বসাকুল্যে খরচ পড়বে কেজিপ্রতি ৩৬ টাকা। আর সরকার দাম নির্ধারণ করছে ৩৪ টাকা। এতে মিল মালিকদের প্রতিকেজি চালে কমপক্ষে ২ টাকা লোকসান গুণতে হবে। নিশ্চিত এই লোকসানের মুখে ফেলার জন্য মিল মালিকরা সরকারকে দুষছেন।

তাদের অভিযোগ, সরকার দাম নির্ধারণের ক্ষেত্রে চাল কল মালিকদের সঙ্গে কোন ধরনের আলোচনা করেনি।

অপর দিকে চাল কল মালিকরা ১১০ শতাংশ জামানত দিয়ে ধান নিয়ে চাল সরবরাহ করতে হয়। সরকারের বেঁধে দেয়া জামানত এবং নির্ধারিত দামে চাল সরবরাহ সরকার পক্ষ থেকে অলিখিত চাপ মনে করছেন মিলাররা।

এদিকে বগুড়া জেলার সবচেয়ে বেশি চালকল রয়েছে দুপচাঁচিয়া, নন্দীগ্রাম, সান্তাহার, নসরৎপুর, আদমদীঘি, শাজাহানপুর, গাবতলী, সোনাতলা, শিবগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন জায়গায়। এছাড়া নওগাঁ জেলার রাণীনগর, আত্রাই, মহাদেবপুর, সাপাহারে। দিনাজপুরের চিরিরবন্দর, জয়পুরহাট জেলার বিভিন্ন উপজেলায়। মূলত এসব এলাকায় গড়ে উঠেছে চাল কল মিল যা হাসকিং মিল নামে পরিচিত।

বগুড়া জেলায় প্রায় ছোট-বড় ১ হাজার ৭শ চাল কল রয়েছে। আর সারাদেশে রয়েছে প্রায় ১৭ হাজার চাল কল মিল। এরই মধ্যে প্রায় সাড়ে ৫শ অটো চালকল গড়ে উঠলেও বেশির ভাগ হাসকিং কল।

এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে আড়াই লাখ চাতাল শ্রমিকের ভাগ্য। এসব মিল বন্ধ হলে শ্রমিক বেকার হয়ে পড়বে। অনিশ্চয়তায় পড়বে এদের সঙ্গে জড়িত পরিবারগুলোর ভাগ্য।

মৌসুম শুরুর আগে ব্যাংকগুলো মিলারদের ঋণ দিয়ে থাকে। ব্যবসায়িকভাবে ক্ষতিগ্রস্তের পাশাপাশি ব্যাংকের উচ্চ সুদের ঋণ, সরকারের নির্ধারিত রেটে ভর্তুকি দিয়ে চাল সরবরাহের ফলে দেশের উত্তরাঞ্চলের এসব হাসকিং চাল কলের অধিকাংশই বন্ধ হতে বসেছে।

সরেজমিনে এসব মিলের দেয়ালে ব্যাংকের দায়বদ্ধতার সাইনবোর্ড ঝুলতে দেখা যায়। দেনার দায়ে ইতোমধ্যেই বন্ধ হয়েছে বগুড়ার হাসকিং চাল কলগুলোর মধ্যে মাজেদ আলীর মামুন চাল কল, আবদুল আলীমের কল্পনা চাল কল, মাহফিন চাল কল, মীম চাল কল, তানিয়া চাল কল, ভাইভাই চাল কল, মাজেদা চাল কল, বাপ্পি চাল কলসহ প্রায় দেড় শতাধিক।

এদিকে বহুদিন ধরে চাল কলকে শিল্প ঘোষণার দাবি জানিয়ে আসলেও সরকারের পক্ষ থেকে সুদৃষ্টি পায়নি মিলাররা।

মালিকদের ভাষ্য, এ খাতকে শিল্প ঘোষণা করলে তারা ব্যাংক থেকে অল্প সুদে শিল্প ঋণ নিয়ে ব্যবসাকে এগিয়ে নিতে পারত।

গাইবান্ধার বোনারপাড়া এলাকার হাসকিং চালকল মালিক মোকছেদুর রহমান সাফ জানিয়ে দিলেন, সরকারের নির্ধাতির মূল্যে আমরা জিম্মি। ওই দামে চাল না দিলে মিলের লাইসেন্স বাতিল হবে। আর চাল দিলে চলতি মৌসুমে আনুমানিক বরাদ্দ ২৫ টনে তাকে ৫০ হাজার টাকা লোকসান গুণতে হবে।

বগুড়ার দুপচাঁচিয়া উপজেলা চাল কল মালিক সমিতির সভাপতি মোবারক হোসেন বলেন, অন্যকোন ব্যবসা জানা থাকলে মিল ব্যবসা ছেড়ে দিতাম। শেষ বয়সে কষ্ট করে কোনমতে টিকে থাকার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। সরকারের বেঁধে দেয়া দাম মিলারদের উপর মরার উপড় খাড়ার ঘা হিসেবে দেখছেন প্রবীন এই ব্যবসায়ী।

এদিকে এখনো এই মৌসুমের ধান উঠা শুরু হয়নি এরই মধ্যে ২৪ টাকা কেজি দরে ধান এবং ৩৪ টাকা কেজি দরে চাল কেনার ঘোষণা দিয়েছে সরকার। এ বছরের সরকার ৮ লাখ মেট্রিক টন চাল এবং ৭ লাখ মেট্রিক টন ধান গুদামজাত করার ঘোষণা দিয়েছে সরকার। চালের পুরোটাই সরবরাহ করতে হবে মিলারদের।

চাল কল মালিক সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির কোষাধ্যক্ষ ও বগুড়া জেলা চাল কল মালিক সমিতির সভাপতি আমিনুল ইসলাম বলেন, ব্যাংক ঋণের কারণে জেলার দেড় শতাধিক হাসকিং মিল ইতোমধ্যেই বন্ধ হয়েছে। যেসব মিল চালু আছে, তারাও দেনার বোঝা মাথায় নিয়ে ধুকে ধুকে চলছে। এই খাতকে টিকিয়ে রাখতে সরকারে সরাসরি হস্তক্ষেপ প্রয়োজন। সরকার যদি মিলারদের জন্য সহায়ক না হয়, তাহলে টিকে থাকা অসম্বভ বলে জানান এই নেতা।

মালিক সমিতির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক কেএম লায়েক আলী বলেন, আমরা খাদ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেছি এবং চালের দাম নূন্যতম ৩৬ টাকা করার দাবি জানিয়েছি। তবে আমাদের দাবি না মানলে আমরা সারাদেশের মিলাররা এক সাথে অনশনে যাব। বিষয়টি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর শরণাপন্ন হওয়ার কথাও জানান তিনি।

(ঢাকাটাইমস/১মে/প্রতিনিধি/এলএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :