এক পরিবারে পাঁচ ফুটবল তারকা

সৈয়দ মাহফুজ রহমান, পিরোজপুর থেকে
 | প্রকাশিত : ০৩ মে ২০১৭, ১১:৪৫

সময়টা আশির দশক। পিরোজপুর জেলা সদর উপজেলার কলাখালী গ্রামের ইদ্রিস আলী সরদারের ফুটবলই ছিল ধ্যান জ্ঞান। ভালো খেলোয়াড় ও সেই সুনাম থাকায় পুরো দেশ চষে বেড়িয়েছেন ইদ্রিস আলী। তিনি কখনো পড়ালেখা, চাকরির কোনো কিছুরই তোয়াক্কা করেনি। ডাক পেলেই ছুটে চলতেন এ প্রান্ত থেকে অপর প্রান্ত।

বাবা ইদ্রিস আলীর পথেই হেঁটেছেন পাঁচ পুত্র। এখন ইদ্রিস আলীর হয়ে খেলছেন তারই পাঁচ ছেলে। তারাই পিরোজপুরের একই পরিবারের পাঁচ ফুটবল তারকা লিটন, এমিলি, শাকিল, এমেকা ও সাব্বির। তারা আজ দেশসেরা ফুটবলার। এ পরিবারটি এলাকার মানুষের কাছে ফুটবল পরিবার নামে পরিচিত।

পাঁচ ছেলেকে নিয়ে আজ গর্ব করেন তাদের পিতা ফুটবলার মো. ইদ্রিস আলী। পিতার প্রিয় খেলা ছেলেরা ধারণ করেছে তাতেই তিনি আনন্দিত। ছেলেদের পায়ে বল দেখলে, ওদের পায়ে গোল হলে সবাই যখন উল্লাস করে, বাবা হিসেবে তিনিও আনন্দিত হন, ভরে উঠে বুক এমনটাই জানা গেছে।

ইদ্রিস আলীর ছেলে লিটনের মতো অন্য ছেলেরাও আজ দেশসেরা ফুটবলার। বড় ছেলে লিটন তার বাবা ইদ্রিস আলীর ইচ্ছানুযায়ী অন্য চার ভাইকে ফুটবলার হিসেবে গড়ে তুলতে উৎসাহ দিয়েছেন।

জানা গেছে, ১৯৯৩-৯৪ সালে লিটন ঢাকার শান্তিনগর ক্লাব থেকে খেলা শুরু করেন। পরে ব্রাদার্স ইউনিয়নের হয়ে দীর্ঘ ১২ বছর সুনামের সঙ্গে ফুটবল খেলেছেন। সেই থেকেই (প্রথম) লিটনের নাম ছড়িয়ে পড়ে সর্বত্র। এমিলি ও শাকিল বর্তমানে জাতীয় দলের খেলোয়াড় এবং সেইসাথে অন্য দেশের সেরা ক্লাবগুলোতে জায়গা করে নিয়েছেন। এদের মধ্যে এমিলি দেশসেরা স্ট্রাইকার। এমেকা আছেন মোহামেডানে এবং সাব্বির বিকেএসপির হয়ে আন্ডার সিক্সটিন জাতীয় দলের হয়ে খেলছেন। এই পাঁচ সন্তান নিয়ে গর্বের শেষ নেই বাবা ইদ্রিস আলী সরদারের।

ফুটবলার লিটন ঢাকাটাইমসকে বলেন, বাবা পাশে ছিলেন বলেই আমরা পাঁচভাই আজ খেলোয়াড় হতে পেরেছি। বাবাকে কখনোই বলতে শুনিনি তার ছেলেদের (আমাদের) ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার হতে হবে। বরং খেলার মধ্য দিয়েই আমাদের বড় হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন বাবা।

দেশসেরা স্ট্রাইকার এমিলি ঢাকাটাইমসকে বলেন, বাবা ও বড় ভাইয়ের মাধ্যমে চেষ্টা করছি কিছু খেলোয়াড়কে বিকেএসপি ও ঢাকায় সুযোগ করে দেয়ার। বলতে লজ্জা লাগে, খেলাধুলার চর্চার অভাবে আমাদের জেলার ছেলেমেয়েরা নেশার জগতে জড়িয়ে পড়ছে। তিনি আরও বলেন, জেলা ক্রীড়া সংস্থা খেলাধুলার বিকাশে তেমন কাজ করছে না। এ জেলায় দুই একটি টুর্নামেন্ট ছাড়া দীর্ঘ ১৮-২০ বছর ফুটবল লিগ হয় না। জেলা ক্রীড়া সংস্থাকে অনুরোধ জানাব একটু উদ্যোগী হতে।

মো. ইদ্রিস আলী সরদার ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘ফুটবল খেলা আমার নেশা ছিল। এ কারণে আমাকে চাকরি পর্যন্ত হারাতে হয়েছে। তখন বিকেএসপির সুযোগ ছিল না। কিন্তু বড় ছেলে লিটনকে নিয়ে চেষ্টা করেছি। লিটন তার মেধা-যোগ্যতার ভিত্তিতেই জায়গা করে নিয়েছে।’

অপর চার সন্তানের কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘তারা তাদের বড় ভাই লিটনের দেখাদেখি ফুটবল খেলায় উৎসাহী হয়। দুই ছেলে এমিলি ও শাকিল জাতীয় দলসহ অন্যরা দেশের সেরা ক্লাবগুলোতে জায়গা করে নিয়েছে। এদের মধ্যে এমিলি দেশসেরা স্ট্রাইকার। ওদের পায়ে যখন গোল হয়, সবাই উল্লাস করে, বাবা হয়ে আমার তখন যে কী আনন্দ- আমি তা ভাষায় বলে বোঝাতে পারব না। আমার প্রিয় খেলা ছেলেরা ধারণ করেছে। সুনাম অর্জন করেছে। আমি মনে করি আল্লাহ আমায় পরিপূর্ণ বাবার গৌরব দিয়েছেন।’

সাবেক ক্রীড়া সংগঠক নুরুল হুদা বলেন, ‘ইদ্রিস ভাই শুধু আমাদের এলাকার নন তিনি গোটা দক্ষিণাঞ্চলের গর্ব। সবাই মিলে তাঁর স্বপ্ন প্রতিষ্ঠায় এ জেলাতে একটি ফুটবল একাডেমি গড়ে তোলা দরকার। ইদ্রিস আলী বেঁচে থাকতেই গড়ে উঠুক ফুটবল একাডেমিটি। এই পরিবার যুগ যুগ ধরে মানুষের মাঝে বেঁচে থাকবে।’

(ঢাকাটাইমস/০৩মে/প্রতিনিধি/জেবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

খেলাধুলা বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

খেলাধুলা এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :