বিজ্ঞান শিক্ষায় আগ্রহ ফিরছে

প্রকাশ | ০৫ মে ২০১৭, ১০:০৬ | আপডেট: ০৬ মে ২০১৭, ১৭:০২

তানিম আহমেদ, ঢাকাটাইমস

চলতি বছর এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার সার্বিক ফলাফল গত বছরের তুলনায় খারাপ হলেও এক দিন থেকে তা আশাপ্রদ। বিজ্ঞান শাখায় এবার পরীক্ষার্থীর সংখ্যা যেমন অন্য শাখাগুলোর তুলনায় বেশি বেড়েছে, তেমনি বেড়েছে পাসের হারও। আবার অন্যান্য শাখায় জিপিএ ফাইভ পাওয়া সংখ্যা কমলেও বেড়েছে বিজ্ঞানে। শিক্ষামন্ত্রী একে দেখছেন বিজ্ঞানে আগ্রহ ফেরা হিসেবে। তার কাছে এটাই চলতি বছর এসএসসিতে সবচেয়ে ইতিবাচক দিক।

চলতি বছর এসএসসিতে সব মিলিয়ে যেখানে পাসের হার ৮০.৩৫ শতাংশ সেখানে বিজ্ঞান শিক্ষার্থীরা পাস করেছেন ৯৩.৩৫ শতাংশ।

মন্ত্রী জানান, গত বছরের তুলনায় এবার এ বছর বিজ্ঞান শাখায় পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ৪৪ হাজার ৬৮১ জন বৃদ্ধি পেয়েছে। পাস বেশি করেছে ৩২ হাজার ১২৬ জন। জিপিএ ফাইভের সংখ্যা বেড়েছে দুই হাজার ৬৫৪ জন। মন্ত্রীর ভাষায়, ‘বিজ্ঞানের শিক্ষার্থী বেড়েছে, পাস করা বেড়েছে এবং জিপিএ ফাইভ সবই বেড়েছে। এটা আমাদের আশার দিক।’

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যে লক্ষ্যটা সবসময় বলেন যে, আমাদের জ্ঞান-বিজ্ঞানের চর্চা বাড়াতে হবে এবং বিজ্ঞান শিক্ষা এগিয়ে নিতে হবে। বিজ্ঞান শিক্ষার মাধ্যমে তারা গবেষণা করবে, নতুন জ্ঞান সৃষ্টি করবে এবং দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। সেই ক্ষেত্রে আমাদের অগ্রগতি অব্যাহত আছে।’

মন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য বিজ্ঞানী সৃষ্টি করা, গবেষণা করা, জ্ঞান সৃষ্টি করা। আমরা কেবল জ্ঞান আমদানি করবো না, আমরাও জ্ঞান তৈরি করবো, আমরা কেবল প্রযুক্তি আমদানি করবো না, আমরাও প্রযুক্তি তৈরি করবো। এ জন্য বিজ্ঞান শিক্ষায় আমাদের অগ্রগতি অব্যাহত আছে।’

বিজ্ঞানের শিক্ষার্থী বৃদ্ধির এই ধারাটি একেবারেই সাম্প্রতিক। বাংলাদেশ ব্যুরো অব এডুকেশন ইনফরমেশন অ্যান্ড স্টাটিকসটিক্স-ব্যানবেইজের তথ্য মতে সারা দেশে মাধ্যমিক পর্যায়ে ১৯৯০ সালে এসএসসিতে মোট পরীক্ষার্থীর মধ্যে বিজ্ঞান বিভাগে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল শতকরা ৪২ দশমিক ২১ ভাগ। ২০১১ সালে এ হার ছিল ২১ দশমিক ৯০ শতাংশে। এরপর থেকে সংখ্যাটা আবার বাড়তে থাকে। চার বছরে সাত শতাংশ বেড়ে ২০১৫ সালে তা দাঁড়ায় ২৮ দশমিক ৯৭ শতাংশে। চলতি বছর এসএসসি পরীক্ষায় এই হার বেড়ে ছাড়িয়েছে ৩০ শতাংশ।

বিজ্ঞান জনপ্রিয়করণ সমিতির সহসভাপতি মুনির হাসান ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘২০১০ সাল পর্যন্ত বিজ্ঞান বিভাগে শিক্ষার্থীর সংখ্যা টানা কমেছে। এরপর দেশের সচেতন শিক্ষাবিদের দাবির কারণে এবং সরকারের পদক্ষেপের কারণে বিগত পাঁচ বছর ধরে এক দুই শতাংশ করে বিজ্ঞান বিভাগে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়ছে। তবে এখনও তা আশানুরূপ নয়।’

মুনির হাসান বলেন, বিজ্ঞানে শিক্ষার্থী বাড়ছে, কিন্তু সেটা আরও বেশি হারে বাড়া উচিত। তিনি বলেন, ‘দেশে বিজ্ঞান শিক্ষাটা মুখস্থনির্ভর হয়ে গেছে। বিজ্ঞান ও গণিত যদি মুখস্থনির্ভর হয় তাহলে কেউ পড়তে চাইবে না। বিজ্ঞান বই আকারে বড়, তাই শিক্ষার্থীর মধ্যে মুখস্থ ভীতি কাজ করে। কিন্তু শিক্ষার্থী যদি আনন্দের সাথে বিজ্ঞানের মূল বিষয়টা বুঝতে পারতো, তাহলে আকারে বড় বই পড়তেও তার মধ্যে ভীতি কাজ করতো না।’

ঢাকা বিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক আবদুল আউয়াল খান ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘এখনও তুলনামূলকভাবে বিজ্ঞান বিভাগে শিক্ষার্থীর সংখ্যা কম। বিজ্ঞানের যুগে এ বিভাগে শিক্ষার্থীর সংখ্য হতাশাজনক।’

এই শিক্ষাবিদও মনে করেন, বিজ্ঞানের শিক্ষার্থী আর বেশি হওয়া উচিত। তিনি বলেন, ‘সংখ্যার দিক থেকে বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীর সংখ্যা হয়তো কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু ব্যবসা শিক্ষা ও মানবিক বিভাগের চেয়েও বিজ্ঞানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা সেভাবে বাড়েনি।’

ঢাকা বিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক এস এম হাফিজুর রহমান বলেন, বিজ্ঞান শিক্ষার বিকাশের জন্য শিক্ষক প্রশিক্ষণ জরুরি। সেই সঙ্গে তাদেরকে আলাদা প্রণোদনা দিতে হবে। তিনি বলেন, বিজ্ঞানে আগে নবম শ্রেণিতে যা পড়াত এখন তা পড়ানো হয় ষষ্ঠ শ্রেণিতেই। আবার আগে এখনও গ্রামে বিজ্ঞান শিক্ষকের সংকট রয়েছে। সাধারণ শিক্ষকরাই সেখানে বাংলা পড়ান। এটা পরিবর্তন জরুরি। পর্যাপ্ত বিজ্ঞান শিক্ষক নিয়োগ প্রথম অগ্রাধিকার হওয়া উচিত।’

এই তিন বিশেষজ্ঞই আরও একটি বিষয়ের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। তারা বলেছেন, বিজ্ঞান যে আসলে ভয়ের না, মজার বিষয়, সেটা শিক্ষার্থীদের কাছে তুলে ধরতে হবে। আধুনিক পরীক্ষাগার স্কুলে নিশ্চিত হলে শিক্ষার্থী আগ্রহ নিয়ে বিজ্ঞানের মজার খেলা উপভোগ করতে চাইবে।

ঢাকাটাইমস/০৪মে/টিএ/ডব্লিউবি