ছেলের চেয়ে ভালো ফল করলেন মা

সাইফুল ইসলাম, নাটোর
| আপডেট : ০৫ মে ২০১৭, ১৪:৫০ | প্রকাশিত : ০৫ মে ২০১৭, ১৩:৪৪

একই ঘরে দুই জন পরীক্ষার্থী হয়ত বিরল নয়, তবে নাটোরের বাগাতিপাড়ায় দুই পরীক্ষার্থীর মধ্যে যে সম্পর্ক তাতে তারা কী ফল করে সে নিয়ে আগে থেকেই আগ্রহ ছিল পরিচিত জনদের। আর ফল প্রকাশের দুই জনের বিষয়টি খবর হয়ে এসেছে জাতীয় গণমাধ্যমে। দুই পরীক্ষার্থী যে সম্পর্কে মা-ছেলে। দুই জনের ফলাফলই প্রায় একই রকম। তবে কিছুটা এগিয়ে আছেন মা।

মা মলি রাণী জিপিএ ৪.৫৩ এবং ছেলে মৃন্ময় কুমার কুণ্ড জিপিএ ৪.৪৩ পয়েন্ট পেয়ে এসএসসি পাস করেছেন।। দুই জনেই কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে পরীক্ষায় অংশ নেন। এদের মধ্যে মা মলি বাগাতিপাড়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ড্রেস মেকিং অ্যান্ড টেইলারিং ট্রেড এবং ছেলে মৃন্ময় বাগাতিপাড়া মডেল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের বিল্ডিং মেইনটেনেন্স ট্রেড বিষয়ের শিক্ষার্থী ছিলেন। এক সঙ্গে পাস করায় মা-ছেলে উভয়ে বাঁধ ভাঙা উচ্ছ্বাসে মেতেছেন।

সংসারের বাঁধনে বাঁধাপড়া মলি রাণীর পড়াশোনা আগায়নি। তবে ছেলে যখন বড় হয়েছে, তখন তিনি সুযোগ বুঝে পড়াশোনায় ফিরেছেন। আর লোকলজ্জা বা ট্যাবুকে মাড়িয়ে ৩৫ বছর বয়সে এসএসসি পরীক্ষায় বসার সিদ্ধান্তও নেন। তার এই চেষ্টা মুখরোচক খবর হয় এলাকায়।

উদ্যোমী এই নারীকে নিয়ে পরীক্ষা চলাকালেই খবর হয় বিভিন্ন জাতীয় গণমাধ্যমে। সে সময় মলি রাণী জানিয়েছিলেন, নবম শ্রেণিতে পড়ার সময় তার বাবা বাবা নওগাঁ জেলার মান্দা উপজেলার প্রসাদপুরের অসিত কুণ্ডু তার বিয়ে দিয়ে দেন। এরপর আর পড়ালেখা করার সুযোগ হয়নি। সংসারের চাপে পিষ্ট হয়ে গৃহিনীই রয়ে যান। এরই মধ্যে দুটি সন্তানের জন্ম দেন। বড় ছেলে মৃন্ময় কুমার কুণ্ডু এবং ছোট ছেলে পাপন কুণ্ডু। ছেলেদের পড়ালেখা করাতে গিয়ে তিনি অনুভব করেন তার নিজের পড়ালেখা জানা দরকার। সেই ভাবনা থেকেই স্কুলে ভর্তি হন।

নিজের ফলাফলে মলি রাণী খুশি। তবে আবার এক দিক থেকে বেজারও। সন্তানকে হারাতে চান কোন মা? তার আক্ষেপ, ছেলেটা যদি আরও একটু ভাল ফলাফল করতে পারত!

এখানেই কি থেমে যাবেন মলি রাণী? জানতে চাইলে আত্মবিশ্বাস ভরা কণ্ঠে বললেন, থেমে যাওয়ার জন্য এই বয়সে পড়াশোনা আবার শুরু করেননি তিনি। ঢাকাটাইমসকে তিনি বলেন, ভবিষ্যতেও তিনি পড়ালেখা অব্যাহত রাখবেন। আপাতত এইচএসসিকে কোথায় ভর্তি হবেন সেই বিষয়টি নিয়েই ভাবছেন।

মলি রাণী পড়াশোনা শুরু করতে পারতেন না যদি না তার স্বামী উপজেলার গালিমপুরের মিষ্টি ব্যবসায়ী দেবব্রত কুমার মিন্টু তাকে সহযোগিতা না করতেন। স্ত্রী এ গ্রেডে পাস করেছে-এতে তিনি যারপরনাই আনন্দিত। বলেন, স্ত্রীর পড়াশোনায় আগ্রহ দেখে তিনিও উৎসাহ দিয়েছেন। ভবিষ্যতেও তার পাশে থেকে একইভাবে উৎসাহ জুগিয়ে যাওয়ার কথা বলেছেন দেবব্রত।

পলির ছেলে মৃন্ময় কুমার কুণ্ডু নিজে পাস করায় যতটা না আনন্দিত, তার চেয়ে বেশি উচ্ছ্বসিত তার মায়ের ফলাফলে। বৃহস্পতিবার ফলাফল জানার পর মায়ের মুখে মিষ্টি তুলে দেন তিনি। বলেন, মায়ের চেয়ে কম নম্বর পাওয়ায় তিনি খুশিই। কারণ, মা যেমন তার সন্তানকে হারাতে চান না, তেমনি সন্তানও কোনো মাকে হারাতে চান না।

ঢাকাটাইমস/০৫মে/প্রতিনিধি/ডব্লিউবি

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

ফেসবুক আইডি ক্লোন করে প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ, যুবক গ্রেপ্তার

ফরিদপুর প্রেসক্লাবের নবনির্বাচিত নেতৃবৃন্দের সঙ্গে পুলিশ সুপারের মতবিনিময়

পতেঙ্গায় ফিশিং বোটের ইঞ্জিন বিস্ফোরণে ৪ জন দগ্ধ

চট্টগ্রামে ঈদকে সামনে রেখে জালনোট চক্রের ৩ সদস্য গ্রেপ্তার

বরিশালে নামাজের সময় মসজিদের এসি বিস্ফোরণ

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে দ্রুতগতির লেনে যাত্রী নামানোর অপরাধে ৩৩ যানবাহনকে মামলা 

বরগুনা প্রেসক্লাব দখলের মামলায় ৭ জন কারাগারে  

পর্যটকদের আকৃষ্ট করছে তাহিরপুরের শহীদ সিরাজ লেক

ঝিনাইদহে ভর্তুকি মূল্যে টিসিবির পণ্য বিক্রি শুরু

ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়কে বেতন বৃদ্ধির দাবিতে শ্রমিকদের বিক্ষোভ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :