বাঁধ যমুনায় বিলীন, সিরাজগঞ্জে ভাঙন আতঙ্ক

রানা আহমেদ, সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি
| আপডেট : ০৫ মে ২০১৭, ১৪:৫০ | প্রকাশিত : ০৫ মে ২০১৭, ১৪:৩৭

সিরাজঞ্জে গত দুই দিনে কাজিপুর ও চৌহালী উপজেলায় ২১০ মিটার বাঁধ যমুনা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এ ঘটনায় এলাকাবাসী শঙ্কায় দিন কাটাচ্ছে। গত দুই দিনে এই দুটি উপজেলায় চারশ একরেরও বেশি ঘরবাড়ি, আবাদী জমি, স্কুল-মাদ্রাসা নদী ভাঙনের শিকার হয়েছে।

এসব এলাকার প্রায় তিনশ ঘরবাড়ি এর মধ্যেই নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙনের মুখে পড়েছে অন্তত পাঁচশ পরিবার। এখনই ভাঙন ঠেকানোর উদ্যোগ না নিলে যে কোন সময় বাঁধ ভেঙে শুভগাছা, বাহুকা, বেড়ের চর, চিলগাছা রতনগান্ধি খুকশিয়া, গজারিয়া, সড়াতৈলসহ অন্তত ১০ টি গ্রাম নদীতে বিলীন হয়ে যাবে।

ভাঙন থেকে রক্ষা পেতে নদী তীরবর্তী এলাকার মানুষেরা ঘর ও আসবাপত্র অন্য জায়গায় সরিয়ে নিচ্ছেন। তারা বাড়ির আঙ্গিনায় গাছপালা পর্যন্ত কেটে নিয়ে যাচ্ছেন। অনেকে খোলা আকাশের নিচে জীবন যাপন করছেন। যদিও স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড ভাঙন ঠেকাতে (জিওটেক্স) বালির বস্তা নিক্ষেপ শুরু করেছে, কিন্তু তাতেও কমেনি এলাকাবাসীর শঙ্কা।

ভাঙন কবলিত এসব এলাকার বাসিন্দারা বলেন, ঘর পুড়লে ভিটে-মাটি টুকু থাকে, কিন্তু নদী ভাঙলে সেটাও থাকে না। প্রত্যেক বছর মন্ত্রী, সচিব নদী ভাঙন পরিদর্শনে আসেন কত কথা বলেন, কত প্রতিশ্রুতি দেন, কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয় না।

এদিকে গত ২ মে চৌহালীতে খগেনের ঘাট এলাকায় যমুনার তীর রক্ষার জন্য নির্মাণাধীন বাঁধে ধস দেখা দিয়েছে। ধসের বিস্তৃতি একদিনে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭০ মিটারে। তবে বালি বোঝাই জিওব্যাগ ডাম্পিং করে ধস ঠেকানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।

গত মঙ্গলবার দুপুরে নদীর জাজুরিয়া খগেনের ঘাট অংশে ধস শুরু হয়। বিকেল পর্যন্ত প্রায় ৭০ মিটার ধসে যায়। আকষ্মিক এ ধ্বসের ফলে তীরবর্তী মানুষের মাঝে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, ১০৯ কোটি টাকা ব্যয়ে চৌহালী ও টাঙ্গাইলের নাগরপুর সাত কিলোমিটার নদীতীর সংরক্ষণ বাঁধের নির্মাণকাজ ২০১৫ সালের ২৪ নভেম্বর শুরু হয়। তা এখনও শেষ হয়নি। এসব এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে ইউনিয়ন পরিষদ বা জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে আর্থিক সাহায্য কিংবা ত্রাণ-খাদ্য সরবরাহ করা হয়নি। বৃহস্পতিবার দুপুরে ভাঙনকবলিত এলাকা ঘুরে এসব খবর জানা গেছে।

ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত আব্দুল আলীম বলেন, ‘ভাঙনের পর থেকে আজ পর্যন্ত অন্তত ১৫ বার বাড়ি ঘর নদীর পানিতে মিশে গেছে। সর্বশেষ বাড়ি ঘর হারিয়ে বাঁধের পূর্ব পাশে আশ্রয় নিয়েছি।’

আরেক ভুক্তভোগী ফিরোজ আহমেদ বলেন, ‘এখানে নদী গত এক মাস ধরে ভাঙছে। বুধবার দুপুরে বাঁধ ধসে পড়লো। বাড়ি ঘর সরিয়ে নেয়ার সময়ও পাওয়া যায়নি। যাওয়ার কোন জায়গা নেই। পরিবার পরিজন নিয়ে এখন খোলা আকাশের নিচে থাকছি। কেউ কোনো ত্রাণ সাহায্যও দেয়নি।’

রতনকান্দি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা খোকন বলেন, ‘নদীর পানি বেড়ে যাওয়ার কারণে গত কয়েকদিন আকস্মিক ভাবে বাঁধও ধসে পড়েছে। এ কারণে এলাকার প্রায় শতাধিক বাড়ি সরিয়ে নেয়া হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধানে সার্বিক কাজ শুরু হয়েছে। দ্রুত গতিতে কাজ চলছে। ভাঙন রোধ করার জন্য আমরা আপ্রাণ চেষ্টা করছি। তবে ভাঙনকবলিত মানুষের জন্য আমি এখনও পর্যন্ত কোন বরাদ্দ পাইনি। স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সাথে আমার কথা হয়েছে আশা করছি তাড়াতাড়ি বরাদ্দ পাবো।’

স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ডেও নির্বাহী প্রকৌশলী সৈয়দ হাসান ইমাম বলেছেন, ‘পানি উন্নয়ন বোর্ডের একটি পজিশন এসে গেছে। তখন আর ভাঙন থাকবে না।’

ঢাকাটাইমস/০৫মে/প্রতিনিধি/ডব্লিউবি

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :