আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে রাস্তা নির্মাণের অভিযোগ

প্রকাশ | ০৫ মে ২০১৭, ১৫:০৫

শরীয়তপুর প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস

আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার সিরঙ্গল গ্রামে একটি পারিবারিক কবরস্থানের ওপর দিয়ে রাস্তা নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে। এতে এলাকাবাসীর মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও উত্তেজনা বিরাজ করছে। যেকোনো মুহূর্তে বড় ধরনের সংঘাতের আশঙ্কা করছে এলাকাবাসী।

তবে এলজিইডি দাবি করছে, আদালতের আদেশের পর তারা ঠিকাদারকে কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে। ঠিকাদার কোনো কাজ করছে না সেখানে। যদিও রাস্তার কাজ বন্ধ হয়নি বরং পুরোদমে চলছে বলে জানায় এলাকাবাসী।

মামলার বিবরণ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার নড়িয়া উন্নয়ন প্রকল্প নামে ফতেজঙ্গপুর ইউনিয়ন পরিষদ পাকা সড়ক থেকে দীঘিরপাড় জামে মসজিদ পর্যন্ত ৭৬০ মিটার দীর্ঘ একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। যা প্রথম কারিগরি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। এ প্রজেক্টটি পরবর্তী সময়ে অপর একটি কারিগরি প্রতিবেদনে দীঘিরপাড় জামে মসজিদের নাম বাদ দিয়ে ডান দিক দিয়ে সিরঙ্গল মৌজার আর এস ৪৯৪, এস এ ৪৩৭ নং খতিয়ানের ১৫০৮ ও ১৫০৯ নং দাগের হাসেম ছৈয়াল ও বাবুল ছৈয়ালের পৈত্রিক বাড়ি ও পারিবারিক কবর স্থানের উপর দিয়ে এবং লোকমান মাদবর গংদের পৈত্রিক আবাদী জমির উপর দিয়ে জলিল মাদবরের মৎস খামার পর্যন্ত প্রতিবেদন করা হয়। দ্বিতীয় প্রতিবেদনে সড়কের দৈর্ঘ্য ৮২৫ মিটার উল্লেখ করা হয়েছে।

শরীয়তপুর এলজিইডি গত ফেব্রুয়ারি মাসের ১ তারিখে ৬২ লাখ টাকা নির্মাণ ব্যয় নির্ধারণ করে কাজটির টেন্ডার আহ্বান করে। সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে সিফাত এন্টারপ্রাইজ নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজটি পায়। কাজটি আগামী ২৮ জুনের মধ্যে শেষ করার কথা রয়েছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কার্যাদেশ পাওয়ার পর কাজ শুরু করে। স্থানীয় বাবুল ছৈয়াল, লোকমান মাদবর ও হাসেম ছৈয়াল গংদের পৈত্রিক বাড়ি, কবর স্থান আবাদি জমির ওপর দিয়ে পাকা সড়ক নির্মাণের বিষয়টি জানতে পেরে তারা একটি মামলা করেন। এ মামলার পর অজ্ঞাত কারণে নড়িয়া থানা পুলিশ বাদীকে বারবার মামলাটি প্রত্যাহারের তাগিদ দেয়। এরপর বাবুল ছৈয়াল, লোকমান মাদবর ও হাসেম ছৈয়াল গংরা স্থায়ী নিষেধাজ্ঞা চেয়ে শরীয়তপুর সহকারী জজ আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। স্থায়ী নিষেধাজ্ঞার পরিপ্রেক্ষিতে আদালত গত ৩০ মার্চ শরীয়তপুর এলজিইডি নির্বাহী প্রকৌশলী বরাবর নোটিশ প্রাপ্তির ১৫ দিনের মধ্যে কারণ দর্শানোর জন্য একটি নোটিশ দেয়। এরপর এলজিইডি নির্বাহী প্রকৌশলী সাজ্জাদ আহম্মেদ নড়িয়া উপজেলা প্রকৌশলীর মাধ্যমে চিঠি দিয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন। কিন্তু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ বন্ধ না করে জলিল মাদবরের লোকজনের সহায়তায় নালিশি জায়গায় নির্মাণ কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। বাদীপক্ষ কাজ করার জন্য নিষেধ করলে উল্টো জলিল মাদবরের লোকজন বিভিন্ন হুমকি ধমকি দিচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

সরেজমিনে মাটি কাটার সময় জলিল মাদবরের ছেলে শাহিন মাদবর ঢাকাটাইমসকে জানান, তারা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের শ্রমিক হিসেবে মাটি কাটার কাজ করছেন। এ কাজের জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মজুরি পরিশোধ করবে।

সিরঙ্গল দিঘীরপাড় গ্রামের রিপন ছৈয়াল, কাইউম ছৈয়াল ও লোকমান মাদবর বলেন, আমাদের পৈত্রিক বাড়ি, আবাদি জমি ও পারিবারিক কবরস্থানের ওপর দিয়ে জোরপূর্বক রাস্তা নির্মাণ করছে। আমরা আদালতে মামলা করার পর আদালত নিষেধাজ্ঞা ও ১৪৪ ধারা জারি করলেও তা তারা মানছেন না। বরং উল্টো আমাদের হুমকি ধমকি দিচ্ছে এবং রাস্তা নির্মাণ কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।

এ ব্যাপারে সিফাত এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মো. খোকন মোল্যাকে তার ব্যক্তিগত নাম্বারে একাধিক বার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।

এ ব্যাপারে নড়িয়া উপজেলা প্রকৌশলী আব্দুর রশিদ মিয়া ঢাকাটাইমসকে বলেন, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে চিঠি দিয়ে কাজ না করার জন্য বলা হয়েছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ করছে না। এলাকার লোকজন কাজ করছে। এ ব্যাপারে আমাদের কিছু করার নেই।

নড়িয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ইকরাম আলী মিয়া ঢাকাটাইমসকে বলেন, রাস্তা নির্মাণের ব্যাপার এলজিইডির। এটা আমাদের কাজ নয়। মামলা তুলে নিতে চাপ সম্পর্কে ওসি বলেন, বিষয়টি ঠিক নয়, মিথ্যা এবং বানোয়াট। আমি কোনো বাদীকে মামলা তুলে নিতে তাগিদ দিইনি।

শরীয়তপুর এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী সাজ্জাদ আহম্মেদ ঢাকাটাইমসকে বলেন, আদালতে মামলা হওয়ার পর আমরা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছি। আমরা আদালতের নির্দেশের প্রতি শ্রদ্ধাশীল।

(ঢাকাটাইমস/০৫মে/প্রতিনিধি/জেবি)