কোথাও ভাটার টান থাকবে না: দোলন

প্রকাশ | ০৬ মে ২০১৭, ০০:০০ | আপডেট: ০৬ মে ২০১৭, ১৭:৪৩

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

আগামী দেড় থেকে পৌনে দুই বছরে আলফাডাঙ্গা, বোয়ালমারী ও মধুখালীর কোথাও উন্নয়নে ভাটার টান থাকবে না বলে জানিয়েছেন মূলধারার অনলাইন নিউজ পোর্টাল ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকম ও সাপ্তাহিক ‘এই সময়’ সম্পাদক এবং কাঞ্চন মুন্সী ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান আরিফুর রহমান দোলন।

শুক্রবার বিকালে রাজধানীর কাকরাইলের জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের মিলনায়তনে সাবেক সচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা মরহুম গোলাম মোস্তফা মোল্যার স্মরণসভায় এ কথা বলেন তিনি। কাঞ্চন মুন্সী ফাউন্ডেশন ওই স্মরণসভা ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করে। 

আরিফুর রহমান দোলনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়া, সাবেক সংসদ সদস্য কাজী সিরাজুল ইসলাম, রূপালী ব্যাংকের চেয়ারম্যান মনজুর হোসেন, সাবেক এসপি মালিক খসরু, পর্যটন করপোরেশনের সাবেক চেয়ারম্যান হেমায়েত উদ্দীন তালুকদার, ফরিদপুর জেলা পরিষদ সদস্য শেখ শহীদুল ইসলাম, শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম, ডিএমপি ট্রাফিক ডিসি (দক্ষিণ) খান মোহাম্মদ রেজোয়ান, র‌্যাবের মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক উইং কমান্ডার ফরহাদ হোসেন মাহমুদ, মরহুমের ছেলে আমির খসরু প্রমুখ।

আলফাডাঙ্গা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা আরিফুর রহমান দোলন বলেন, ‘অনেকে বলেন আমাদের এই অঞ্চলে ভাটার টান রয়েছে। বর্তমান সরকার আমাদের এই অঞ্চলের জন্য আগের চেয়ে অনেক বেশি অবকাঠামোগত উন্নয়নে মনোযোগ দিচ্ছে। ইনশা আল্লাহ আমি দায়িত্ব নিয়ে বলছি, আগামী দেড় বা পৌনে দুই বছরের মধ্যে এই ভাটার টান থাকবে না।’

তার এই আস্থা পোষণের প্রেক্ষাপট হিসেবে দোলন বলেন, ‘ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় কিছু রাস্তা ও ব্রিজ যেন করা যায় এ ব্যাপারে আমরা সরকারের ঊর্ধ্বতন মহলের সঙ্গে কথা বলছি, যোগাযোগ রাখছি। ব্যক্তিগতভাবে স্থানীয় কিছু সরকারি প্রতিনিধির সঙ্গে আমার নিয়মিত যোগাযোগ ও কথা হয়, সে জন্যই আমি এটি বলতে পারছি।’

নানা ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত প্রতিযোগিতা থাকলেও এলাকার উন্নয়নে সবার ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টার ওপর জোর দেন কাঞ্চন মুন্সী ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান দোলন। তিনি বলেন, ‘আমাদের অঞ্চল শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও অবকাঠামোর দিক থেকে যেভাবে পিছিয়ে ছিল, ভবিষ্যতে যেন সেটি না থাকে এ জন্য আমাদের আরো বেশি করে ঐক্যবদ্ধ হওয়া প্রয়োজন। কে জনপ্রতিনিধি হবেন, কে বড় পদে যাবেন- এই প্রতিযোগিতা অবশ্যই থাকবে। কিন্তু প্রতিযোগিতাটি যেন ভালো কাজে হয়। আর তাহলে আমাদের অঞ্চল অনেক দিক দিয়ে এগিয়ে থাকবে।’

দোলন বলেন, ‘এভাবে আমরা যদি প্রত্যেকে যার যতটুকু সামর্থ্য আছে তা নিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করি, তাহলে আমার মনে হয় ওই অঞ্চল বেশি করে আলোকিত হওয়া সম্ভব।’

এ সময় তিনি এলাকার শিক্ষার প্রসারে কাঞ্চনএকাডেমীর ভূমিকা ও অবদানের কথা তুলে ধরেন। একই সঙ্গে স্মরণ করেন গোলাম মোস্তফা মোল্যার কথাও।

কাঞ্চন মুন্সী একাডেমী ঘিরে এলাকার শিক্ষা ও উন্নয়নের যাত্রার কথা তুলে ধরে ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান দোলন বলেন, ‘কাঞ্চন মুন্সী সাহেবের উত্তরসূরি হিসেবে আমি বলব, আজকে যদি কাঞ্চন মুন্সী একাডেমি না হতো, কলেজ হতো না। কলেজ যদি না হতো, সেখানে সরকার আজ যে ৭০ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি ট্যাকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টার করছে সেটা হতো না। কারণ এই টিটিসি যেখানে হচ্ছে সেই জমিটা কাঞ্চন মুন্সীর বড় ছেলের। আজকে কাঞ্চন মুন্সীর একটি প্রতিষ্ঠান থেকে বড় বড় অনেক প্রতিষ্ঠান হচ্ছে। পরবর্তী সময়ে গোলাম মোস্তফা ও অন্যান্য গুণিজন কলেজসহ নানা প্রতিষ্ঠান গড়েছেন।’ এরই ধারাবাহিকতায় এই অঞ্চলে হয়তো একদিন বিশ্ববিদ্যালয়ও প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

কাঞ্চন মুন্সীর পৌত্র বলেন, ‘আমরা গুণীজনকে তার জীবদ্দশায় প্রাপ্য সম্মান-শ্রদ্ধা জানাতে কার্পণ্য করি। জনাব গোলাম মোস্তফা মোল্যাকে তার জীবদ্দশায় আমরা আরো বেশি সম্মান দেখাতে পারতাম। তাকে হয়তো আমরা সম্মাননা বা সংবর্ধনা দিতে পারতাম।’

গোলাম মোস্তফার উদার হৃদয়ের কথা বলতে গিয়ে তার সঙ্গে নিজের একটি স্মৃতির কথা তুলে ধরেন দোলন, ‘কলেজে থাকতে একবার একই গাড়িতে আমি আর গোলাম মোস্তফা সাহেব বাড়ি যাচ্ছিলাম। তিনি তখন অত্যন্ত প্রতিষ্ঠিত এবং প্রভাবশালী। কিন্তু তার কথায় ও আচরণে আমাকে আপন করে নেন। আমাদের অঞ্চলে শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং অবকাঠামোগত অনুন্নয়নকে কীভাবে উন্নয়নে আনা যায় তিনি তার দর্শন আমার সঙ্গে শেয়ার করছিলেন।’

‘উনি তখন বলেছিলেন, কামারগ্রাম অঞ্চলে যদি কাঞ্চন মুন্সী একাডেমি না হতো তাহলে আমি আজকের গোলাম মোস্তফা মোল্যা ঢাকার সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার হতে পারতাম না। আমি কাঞ্চন মুন্সীকে সেভাবেই দেখি।’

আলফাডাঙ্গা আদর্শ ডিগ্রি কলেজ প্রতিষ্ঠায় গোলম মোস্তফা মোল্যার অনেক অবদান রয়েছে বলে জানান আরিফুর রহমান। তিনি বলেন, ‘কামারগ্রাম কলেজের যাত্রা শুরু হয় কাঞ্চন একাডেমির একটি ঘর দিয়ে। যেকোনো কারণেই হোক তখন একটি ঘর তাড়াতাড়ি প্রতিষ্ঠা করা হয়তো সম্ভব হচ্ছিল না। আমার দাদু মরহুম কাঞ্চন মুন্সীর বড় ছেলের সঙ্গে কথা বলেন মরহুম গোলাম মোস্তফাসহ কয়েকজন। তখন স্কুলের ঘর ভেঙে সেখানে কামারাগ্রাম কলেজের যাত্রা শুরু করার কথা বলেন তিনি।’

দোলন বলেন, ‘একটি প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠায় উদ্যোগ গ্রহণ এবং সেই উদ্যোগ কীভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে, সে জন্য সরকারি চাকরি করেও পাবলিক ফাংশানের জন্য নিজের বাসা সাধারণ মানুষের জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছিলেন তিনি।’

গোলাম মোস্তফা মোল্যার মতো যারা এভাবে সমাজের অগ্রযাত্রার জন্য কাজ করেছেন, করছেন, তাদের ভালো কাজের স্বীকৃতি দেয়ার তাগিদ দিয়ে ঢাকাটাইমস সম্পাদক বলেন, ‘তাদের প্রাপ্য সম্মান দেখানো গেলে বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্ম ভালো কাজে উৎসাহিত হবে বলে আমার বিশ্বাস।’

দোলন বলেন, ‘ভবিষ্যতে আমরা গুণীজনদের তাদের জীবদ্দশায় স্বীকৃতি দিতে পারলে, সম্মাননা জানাতে পারলে আজকে আমরা যাদের স্মরণ করছি সেটা সফল হবে।’

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আগের মতো গুণীজনের বিষয়ে চর্চা হয় কি না- অনেকে এমন প্রশ্ন তোলেন উল্লেখ করে আলফাডাঙ্গা কলেজ পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি দোলন বলেন, ‘আমি স্কুল ও কলেজের সভাপতি হিসেবে জানি, হয় না। এর দায় আমাদের সবার। কিন্তু দুঃখের সঙ্গে বলতে হয় এখনকার যে প্রযুক্তির অগ্রগতি, আমরা চাইলেও সেই চর্চা রাখতে পারি না।’

সংস্কৃতিচর্চার কথা যখন আসে, সেটাও আগের মতো পারা যাচ্ছে না মন্তব্য করেন ঢাকাটাইমস সম্পাদক। তিনি বলেন, ‘এ জন্য শুধু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে দায়ী করলে চলবে না। পারিবারিকভাবেও কিন্তু এই চর্চাটা শুরু করতে হবে। প্রতিটি ঘরে যদি সংস্কৃতির চর্চা হয়, প্রগতির শিক্ষা হয়, তাহলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পক্ষে সহজ হবে সেই চর্চাটা জারি রাখা।’

(ঢাকাটাইমস/৫মে/এএকে/মোআ)