আহসান উল্লাহ মাস্টারের খুনিদের ফাঁসি কার্যকর চান স্বজনরা
গাজীপুরের সাবেক এমপি ও শ্রমিকনেতা আহসান উল্লাহ মাস্টারের ১৩তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। নৃশংস এ হত্যাকা-ের পর উচ্চ আদালত ছয়জনের ফাঁসি বহাল রেখে ১১ জনকে খালাস দেয়। কিন্তু হত্যাকা-ের ১৩ বছরেও খুনিদের বিচারের রায় কার্যকর না হওয়ায় হতাশ স্থানীয় নেতাকর্মী ও স্বজনরা। এ কারণে আদালতের দেয়া ফাঁসির রায় অবিলম্বে কার্যকর দেখতে চায় নিহতের স্বজন ও এলাকাবাসী।
২০০৪ সালের ৭ মে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে গাজীপুরের টঙ্গীর নোয়াগাঁও এম এ মজিদ মিয়া উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে স্বেচ্ছাসেবক লীগের সম্মেলনে দিনদুপুরে সন্ত্রসীদের গুলিতে নিহত হন সাবেক এমপি ও শ্রমিকনেতা আহসান উল্লাহ মাস্টার। নৃশংস এ হত্যাকা-ের পর বিক্ষোভে ফুঁসে ওঠে পুরো গাজীপুর। বিভিন্ন স্থানে হত্যাকা-ের প্রতিবাদে চলে সাধারণ মানুষের আন্দোলন।
৮ মে নিহতের ভাই মতিউর রহমান টঙ্গী থানায় ১৭ জনের নামোল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও ১০-১২ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। ওই মামলায় ২০০৪ সালের ১০ জুলাই অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। বিচার শেষে ২০০৫ সালের ১৬ এপ্রিল ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১-এর বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিন রায়ে বিএনপি নেতা নুরুল ইসলাম সরকারসহ ২২ জনকে মৃত্যুদ- এবং ছয়জনকে যাবজ্জীবন কারাদ- দেন। এ ছাড়া দুজনকে খালাস দেওয়া হয়। পরে আপিল বিভাগে এ মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আসামিদের জেল আপিলের শুনানি শেষে ৬ জনের ফাঁসি, ৮ জনকে যাবজ্জীবন এবং ১১ জনকে বেকসুর খালাস দেন আদালত। গত বছরের ১৫ জুন বিচারপতি ওবায়দুল হাসান এবং বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেয়।
১২ বছরেও বিচার না পেয়ে হতাশ ও মর্মাহত নিহতের মা বেগম রুসমুতুন্নেছা। বিচারের রায় কার্যকর করার জন্য সরকারের কাছে দাবি করে তিনি বলেন, ‘আহসান উল্লাহ মাস্টারের বাবা মারা গেছেন, আমিও অসুস্থ। এ অবস্থায় মরার আগে সন্তান হত্যার বিচার দেখে যেতে চাই।’
একই দাবি করে এলাকাবাসী বলছে, শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার একজন আদর্শ শিক্ষক ছিলেন, গরিব খেটে খাওয়া মানুষের জন্য তিনি কাজ করতেন। তিনি ছিলেন অনুকরণীয় একজন শ্রমিক নেতা।
আর বাবার হত্যাকারীদের বিরুদ্ধে আদালতের দেয়া রায় অবিলম্বে কার্যকর দেখতে চান স্থানীয় সংসদ সদস্য জাহিদ আহসান রাসেল। তিনি বলেন, ‘আমার বাবা ছিলেন গরিব-দুঃখী মানুষের আপনজন। তিনি এলাকার উন্নয়নে যে কাজ করে গেছেন, সে পথ ধরে এলাকার উন্নয়নে নিজেকে নিয়োজিত রেখেছি। তবে শহীদ সন্তান হিসেবে আমি দাবি করব, আদালতে যে রায় হয়েছে তা যেন অবিলম্বে কার্যকর করা হয়।’
আহসান উল্লাহ মাস্টারের ১৩তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে গাজীপুর ও টঙ্গীতে নানা কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনসহ বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনের উদ্যোগে মিলাদ, দোয়া ও খাবার বিতরণ করা হবে। এসব কর্মসূচিতে কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতারাসহ সর্বস্তরের মানুষ অংশ নেবেন।
রবিবার জেলার বিভিন্ন উপজেলায় দলীয় কার্যালয়ে পবিত্র কোরআনখানি, শোক পতাকা, জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন, নেতাকর্মীদের কালো ব্যাজ ধারণ, সকালে শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টারের গ্রামের বাড়ি হায়দরাবাদের কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ, আলোচনা সভা, মিলাদ মাহফিল ও দোয়া অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।
দুপুরে টঙ্গীর শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টারের বাসভবন সংলগ্ন নোয়াগাঁও এম.এ মজিদ মিয়া উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে তার বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করে দোয়া ও আলোচনা সভা, খাবার বিতরণ করা হবে। যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টারের পুত্র মো. জাহিদ আহসান রাসেল এমপি তার পিতার ১৩তম শাহাদত বার্ষিকীর বিভিন্ন কর্মসূচীতে সর্বস্তরের মানুষের অংশগ্রহণের জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন।
১৯৫০ সালের ৯ নভেম্বর গাজীপুরের সাবেক পূবাইল ইউনিয়নের হায়দরাবাদ গ্রামে শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা শাহ্ সুফী আলহাজ আব্দুল কাদের, মাতা বেগম রুসতুমুনন্নেছা। তিনি গাজীপুর ২ (গাজীপুর সদর, টঙ্গী) আসন হতে ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে পর পর দুইবার আওয়ামী লীগ মনোনীত সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৯০ সালে গাজীপুর সদর উপজেলা চেয়ারম্যান এবং ১৯৮৩ ও ১৯৮৭ সালে দুই দফা পূবাইল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এ ছাড়া তিনি আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটির সদস্য, শিক্ষক সমিতিসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন, আন্তর্জাতিক শ্রমিক সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িত ছিলেন। তিনি ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। স্বাধীন হওয়ার পর একদিকে শিক্ষক অন্যদিকে রাজনীতি ও সমাজসেবায় আমৃত্যু নিয়োজিত ছিলেন।
(ঢাকাটাইমস/৭মে/মোআ)
মন্তব্য করুন