ময়মনসিংহে সেই শিশু ধর্ষণের ঘটনা এবার ভিন্ন পথে

ময়মনসিংহ ব্যুরো প্রধান, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ০৭ মে ২০১৭, ১৮:৫৫
প্রতীকী ছবি

ময়মনসিংহে সেই শিশু ধর্ষণের ঘটনাটি চাপা দিতে না পেরে এখন সেটি ভিন্ন পথে ঘুরিয়ে দেয়া হলো। ধর্ষণের বদলে ধর্ষণ চেষ্টার মামলা হয়েছে আবুল কাশেমের বিরুদ্ধে।

কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. কামরুল ইসলাম জানান, ধর্ষণের ঘটনা প্রমাণিত না হওয়ায় ধর্ষণ চেষ্টার মামলা হয়েছে। এই মামলার বাদী শিশুটির মা ।

শিশু ধর্ষণ ঘটনাটি চাপা দিতে শুরু থেকেই চলছে একের পর এক নাটক। ধর্ষক আবুল কাশেমকে ধরে নিয়ে গোপন সালিসে তিন লাখ টাকা জরিমানা, শিশুটিকে হাসপাতালে ভর্তির পর গোপনীয়তা, হাসপাতাল থেকে লাপাত্তা, কাশেমকে গ্রেপ্তারের পর ধর্ষণ চেষ্টার মামলা- এ সবকিছুতে সালিসদার ও তিন লাখ লাখ টাকার ভূমিকা রয়েছে বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর।

ধর্ষণের শিকার শিশুটির প্রচুর রক্তক্ষরণের কারণে তাকে ভর্তি করা হয়েছিল ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। গতকাল থেকে লাপাত্তা শিশুটি। এখন আবার হাসপাতালে ভর্তির আলমত বা চিকিৎসার তথ্য গোপন করা হচ্ছে।

তবে হাসপাতাল থেকে লাপাত্তা শিশুটিকে আজ রবিবার কোতোয়ালি মডেল থানায় নিয়ে যান রুবেল নামের এক ব্যক্তি। এ সময় শিশুটির মা আকলিমা আক্তারের চোখেমুখে ভীতির ছাপ দেখা যায় । তিনি এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

গত ৫ মে ‘ময়মনসিংহে ধর্ষণের শাস্তি সাবালিকা হওয়ার পর বিয়ে!’ শিরোনামে ঢাকাটাইমসে সংবাদ প্রকাশের পর কোতোয়ালি মডেল থানার পুলিশ ঘটনার সত্যতা পেয়ে শিশু ধর্ষণকারী আবুল কাশেমকে গতকাল শনিবার গ্রেপ্তার করে। শনিবার বিকেল চারটার দিকে সদর উপজেলার শম্ভুগঞ্জের কসাইপাড়ায় অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করা হয় তাকে।

কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি (তদন্ত) মনছুর আহমেদ গ্রেপ্তারের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ‘ঢাকাটাইমসের সংবাদটি আমাদের নজরে আসার পর এ ব্যাপারে খোঁজ নেয়া হয়। এরপর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) জাহাঙ্গীর ও এসআই মিনহাজের নেতৃত্বে অভিযান চালিয়ে মৃত মফিজউদ্দিন বেপারীর ছেলে আবুল কাশেমকে গ্রেপ্তার করে থানায় আনা হয়।’

অভিযানের নেতৃত্বদানকারী এসআই জাহাঙ্গীর ঢাকাটাইমসকে জানান, পুলিশ স্বপ্রণোদিত হয়ে আবুল কাশেম, ভিকটিমের আত্মীয়স্বজন ও সালিসদারদের বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে। তাদেরও গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

কিন্তু ধর্ষণের অভিযোগে শনিবার আবুল কাশেমকে গ্রেপ্তারের পর আজ মামলা করা হয়েছে ধর্ষণচেষ্টার। আর ধর্ষণের ঘটনায় শাস্তি ধার‌্যকারী তথাকথিত সেই বিচারকরা এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে।

অভিযোগ রয়েছে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে। তার নেতৃত্বে চলে ধর্ষণের ঘটনায় বিচারের নামে প্রহসন। গত ২ মে চেয়ারম্যানের সহযোগী স্থানীয় এরশাদ, আলামীন, নূরুল হকসহ চার-পাঁচজন ব্যক্তি মিলে আবুল কাশেমকে চোখ বেঁধে শম্ভুগঞ্জের বকুলতলা তুতনের বাড়িতে নিয়ে মারধর করে। একপর্যায়ে এই বিচারকরা কাশেমকে তিন লাখ টাকা জরিমানা ধার্য করে এবং শিশুটিকে বিয়ের শর্ত জুড়ে দেয়। ধর্ষক কাশেম তাদের তাৎক্ষণিক ৯০ হাজার টাকা পরিশোধ করেন। বাকি ২ লাখ ১০ হাজার টাকা না দেয়ায় আবার তাকে নির্যাতন করা হয়।

জানা যায়, কাশেম গ্রেপ্তার হওয়ার পর তার পরিবার অবশিষ্ট ২ লাখ ১০ হাজার টাকা সালিসকারীদের পরিশোধ করে। তা ব্যবহার করে এখন বিষয়টি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠছে।

গতকাল পুলিশ স্বপ্রণোদিত হয়ে গ্রেপ্তার, মামলা প্রক্রিয়া নেয়া এবং সালিসকারীদের গ্রেপ্তারের চেষ্টার কথা জানালেও এক দিনের ব্যবধানে তা পাল্টে যাওয়ার ঘটনাকে ‘অন্যায়’ কাজ বলছেন ময়মনসিংহ নাগরিক আন্দোলনের নেতা আ্যাডভোকেট আনিছুর রহমান। তিনি বলেন, ‘এটা অন্যায়। এই ঘটনায় জড়িত সবার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া উচিত।’

শিশু ধর্ষণ ও এর সালিস নিয়ে গত শুক্রবার ‘ময়মনসিংহে ধর্ষণের শাস্তি সাবালিকা হওয়ার পর বিয়ে!’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয় ঢাকাটাইমসে। নয় বছরের এতিম শিশুকে ধর্ষণের দায়ে দুই সন্তানের আবুল কাশেমের শাস্তি সাব্যস্ত হয়- শিশুটি বিবাহযোগ্য অর্থাৎ সাবালিকা হওয়ার পর তাকে বিয়ে করবেন তিনি। একই সঙ্গে তিন লাখ টাকা জরিমানা করা হয় তাকে।

এর মাধ্যমে ধর্ষণ ঘটনা ধামাচাপা দেয়া এবং জরিমানার টাকা আত্মসাতের অভিযোগ করেন এলাকাবাসী। তারা বলেন, নানাজনকে টাকা দিয়ে ঘটনা চেপে যাওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। বর্তমান অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে, তাদের অভিযোগই সত্য হতে চলেছে।

পারিবারিক ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, গত ২ মে মাঠে খেলাধুলা শেষে বাড়ি ফেরার পথে ধর্ষণের শিকার হয় শিশুটি। অভিযুক্ত কাশেম একজন ছাগল বিক্রেতা। হাসপাতাল সূত্রে তখন জানা যায়, প্রচুর রক্তক্ষরণের কারণে ঘটনার দিনই শিশুটিকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

ধর্ষিতা শিশুটির বাবা ছিলেন একজন গাড়িচালক। কোনো অভিভাবক না থাকায় তার আত্মীয়স্বজন ও কিছু নামধারী সালিসদার গোপনে সালিস করেন। সালিসকারীরা প্রভাবশালী বলে তাদের নাম বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন স্থানীয় ব্যক্তিরা। কিন্তু এখন অভিযুক্ত কাশেম গ্রেপ্তার হওয়ায় সালিসদারদের নাম অজানা থাকার কথা নয় পুলিশের।

(ঢাকাটাইমস/৭মে/মোআ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :