ত্রুটিপূর্ণ স্লুইসগেট ও দুর্বল বাঁধে ডুবেছে কিশোরগঞ্জের হাওর

আমিনুল হক সাদী, কিশোরগঞ্জ থেকে
 | প্রকাশিত : ০৮ মে ২০১৭, ১৮:৩১

আগাম বন্যায় এবার কিশোরগঞ্জের হাওরের বিস্তীর্ণ বোরো জমির ফসল তলিয়ে গেছে। নষ্ট হয়েছে কৃষকের কষ্টে ফলানো আধা পাকা ধান। বছরের একটিমাত্র ফসল হারিয়ে অনেক কৃষক এখন দিশেহারা। আগামী দিনগুলো কিভাবে কাটবে সে চিন্তায় তাদের ঘুম নেই। এভাবে ফসল তলিয়ে যাওয়ায় বিশেষজ্ঞরা ত্রুটিপূর্ণ স্লুইসগেট ও অপরিকল্পিত দুর্বল বাঁধকেই দায়ী করছেন।

আগাম বন্যার পানিতে বোরো জমি ক্ষতির পাশাপাশি মানুষের স্বাস্থ্যের ক্ষতি হচ্ছে বলেও অভিযোগ ওঠেছে। তবে জেলা প্রশাসন সংবাদ সম্মেলন করে সাম্প্রতিক বন্যায় জেলার কোথাও স্বাস্থ্যের অবনতি হয়নি বলে দাবি করেছে।

কিশোরগঞ্জ জেলার হাওরবেষ্টিত ইটনা, মিঠামইন ও অষ্টগ্রাম উপজেলায় নয়টি ত্রুটিপূর্ণ স্লুইসগেট রয়েছে। এগুলোর দুই পাশে কোনো বাঁধ নেই। শুধু স্লুইসগেট দাঁড়িয়ে রয়েছে। ফলে পানি স্লুইসগেট ভেদ করে সহজেই জমিতে ঢুকে পড়ে। তাছাড়া ছোট বড় অনেকগুলো বাঁধ রয়েছে-যেগুলো খুবই দুর্বল। ফলে পানির তোড়ে ভেঙে গেছে এসব বাঁধ।

পানি আসার সাথে সাথে কৃষক নিজেরাই বাঁশ ও বালির বস্তা দিয়ে বাঁধ রক্ষার চেষ্টা করে। কিন্তু এক্ষেত্রে সরকারি কেউ এগিয়ে আসেননি বলে অভিযোগ কৃষকদের।

সরকারি হিসাবে কিশোরগঞ্জে বন্যায় ক্ষতি হয়েছে ৬০ হাজার হেক্টর জমি। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে লক্ষাধিক কৃষক।

এবার কিশোরগঞ্জের ১৩ উপজেলায় এক লাখ ৬৫ হাজার ৫১৫ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ করা হয়েছিল। উৎপাদনের টার্গেট ধরা হয়েছিল পাঁচ লাখ ৮৪ হাজার ২৬৮ মেট্রিকটন চাল। এর মধ্যে তিনটি হাওর উপজেলা ইটনায় ২৭ হাজার ৬৬৫ হেক্টর, অষ্টগ্রামে ২৪ হাজার ২১২ হেক্টর এবং মিঠামইনে ১৬ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে এবার বোরো আবাদ হয়েছিল। কৃষি বিভাগের হিসাব অনুযায়ী ৪৫ হাজার ১০০ হেক্টর জমির ধান তলিয়ে গেছে।

বিলপাড়া বেড়িবাঁধ এলাকার কৃষক সবুজ মিয়া হেলিম মিয়া, আজমল, জমির আলী, নুরুল্লাহ, সবুজ মিয়া, শাহ আলম, সিদ্দিক মিয়া, জিয়া উদ্দিন, রসুল মিয়ার সঙ্গে কথা হয়। তারা ঢাকাটাইমসকে বলেন, ত্রুটিপূর্ণ স্লুইসগেট ও দুর্বল বাঁধের কারণে এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হতাশাজনক ভূমিকার কারণেই বোরো ফসলের ক্ষতি হয়েছে। তাদের এই মতের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন কিশোরগঞ্জের বিশিষ্টজনেরাও।

তবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সফিকুল ইসলাম দাবি করেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্মিত কোনো বাঁধ ভাঙেনি। হাওরে অনেকগুলো বাঁধের কাজ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলেও তিনি ঢাকাটাইমসকে জানিয়েছেন।

এদিকে কিশোরগঞ্জ জেলার সাম্প্রতিক বন্যা পরিস্থিতি সম্পর্কে সংবাদ সম্মেলন করে জেলা প্রশাসক মো. আজিমুদ্দিন বিশ্বাস জানিয়েছেন, জেলার বন্যাকবলিত এলাকায় ৪৭টি কেন্দ্রে ওএমএস চাল বিতরণ কেন্দ্র চালু করা হয়েছে। সেই সাথে ৪৭টি মেডিকেল টিম গঠন করে স্বাস্থ্য পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। সাম্প্রতিক বন্যায় জেলার কোথাও স্বাস্থ্যের অবনতির হয়নি। বন্যায় যাতে কোথাও কোনো প্রভাব না পড়ে সেদিকে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন মেডিক্যাল টিম গঠন করে বন্যার্তদের খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে বলে জানানো হয়।

(ঢাকাটাইমস/০৮মে/প্রতিনিধি/জেবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :