পাঁচ সদস্যের পরিবারের চারজনই প্রতিবন্ধী
টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার পৌরসভাধীন পশ্চিমপাড়া এক দরিদ্র পরিবারে পাঁচ সদস্যের মধ্যে চারজনই প্রতিবন্ধী। চরম তাচ্ছিল্য আর দারিদ্রের নির্মম কষাঘাতে জর্জরিত হয়ে জীবন সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে পরিবারটি। জীবনযুদ্ধে টিকিয়ে রাখার অদম্য চেষ্টারত পরিবারটির খোঁজ আজও কেউ নেয়নি। পরিবারটির ভাগ্যে জুটেনি কোনো সরকারি সাহায্য।
সরকারিভাবে প্রতিবন্ধী ভাতার প্রচলন থাকলেও সংশ্লিষ্ট সমাজসেবা অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে এই পরিবারে ভাতা পায় মাত্র একজন। পরিবারের একজন ছাড়া আর কোনো সদস্যের নাম নেই ভাতার তালিকায়। খেয়ে না খেয়ে মানবেতর জীবন যাপনে বাধ্য হচ্ছে প্রতিবন্ধী এ পরিবারটি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার পৌরশহরের দেড় কিলোমিটার উত্তরে পশ্চিমপাড়া গ্রামের দিনমজুর জাহাঙ্গীর ও স্ত্রী বিনা বেগম দম্পতির তিন সন্তান মিলে পাঁচ সদস্যের পরিবারের চার সদস্যই প্রতিবন্ধী। বিনা বেগমের বয়স যখন ১০ বছর তখন প্রতিবন্ধী জাহাঙ্গীরের সাথে বিয়ে হয়। ২০ বছর ধরে তিনি সংসার করছেন। বিয়ের ১০ বছর পর তাদের প্রথম কন্যা সন্তান হয়। তাদের সংসারে জন্ম নেয়া তিন সন্তানের প্রত্যেকেই প্রতিবন্ধী। বড় সন্তান জাহানারা (১৪), মেজো সন্তান বিজয় (১০) ও ছোট সন্তান তানিয়া (০৭) জন্ম থেকেই কথা বলতে পারে না। তারা তিনজনই বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী।
তিন ভাই বোনের মধ্যে জাহানারা স্থানীয় ঘাটাইল এসই বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী, ছোট ভাই বিজয় উপজেলার চাঁন্দশী প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র এবং ছোট বোন তানিয়া একই বিদ্যালয়ে দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ে। প্রতিবন্ধী হওয়া সত্ত্বেও থেমে নেই পরিবারের প্রধান জাহাঙ্গীর, দিনমঞ্জুরের কাজ করেন তিনি। যা পান তা দিয়ে কোনো রকম চলে সংসার।
পরিবারের একমাত্র স্বাভাবিক সদস্য মা বিনা বেগম (৩০) বলেন, ছেলেমেয়েদের বাবা নিজে একজন বাকপ্রতিবন্ধী হওয়ায় স্বাভাবিক কাজকর্ম পেতে অনেক বিড়ম্বনা পোহাতে হয়। আমার তিন সন্তানের সবাই ওর বাবার মতো বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী। পুরো সংসারটাই চলে টেনেটুনে। মাঝে মধ্যে ওই পরিবারের এক মুটো ভাতও জুটে না। আমার স্বামী একটি প্রতিবন্ধী কার্ড পেয়েছে। তার মধ্যে বছরে মাত্র তিন হাজার টাকা পায়। কিন্তু এই তিন হাজার টাকা দিয়ে কি এক বছর চলে? তাই ঋণের টাকায় চলছে আমাদের সংসার। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে অনেক কষ্টে খেয়ে, না খেয়ে কোনো মতে সংসার চলছে।
এ বিষয়ে উপজেলা সমাজসেবা অফিসার সানজিদা সুলতানার সাথে কথা হলে তিনি ঢাকাটাইমসকে বলেন, ইতিমধ্যেই আমরা বিষয়টি জেনেছি। আমরা ওই পরিবারের সাথে কথা বলেছি। আশা করছি এই অর্থবছরের মধ্যেই তাদের জন্য কোনো একটি ব্যবস্থা করতে পারবো। তিন শিক্ষার্থী প্রতিবন্ধীর মধ্যে একজনকে ভাতা অথবা একজনকে প্রতিবন্ধী উপবৃত্তি দেয়া হবে বলে জানান তিনি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবুল কাশেম মুহাম্মদ শাহীনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি ঢাকাটাইমসকে জানান, সরকারের পক্ষ থেকে ওই পরিবারকে যতধরনের সেবা দেয়া যায় তা দেয়া হবে। ভবিষ্যতে তারা আর অসহায় থাকবে না। এ ব্যাপারে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও তিনি জানান।
(ঢাকাটাইমস/১০মে/প্রতিনিধি/জেবি)
মন্তব্য করুন