ইমামের ওপর হামলা: আহাদের পরিবারের সাতজন কওমি মাদ্রার শিক্ষক
ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলায় কানপুর গাংপাড়া গ্রামের আহমদিয়া মসজিদের ইমাম মোস্তাফিজুর রহমানের ওপর সন্দেহভাহ হামলাকারী আব্দুল আহাদ ওরফে মোহাম্মদ উল্লাহর পরিবারের সাতজন সদস্যই একটি কওমি মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করেন।
নেত্রকোণার কলমfকান্দা উপজেলার কৈলাটি ইউনিয়নে সরজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, গারো পাহাড়ি অঞ্চলের এই দুর্গম এলাকাটিতে অনেক বড় জায়গা নিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে একটি কওমি মাদ্রাসা। দুইটি পুকুর, আধাপাকা ও টিনশেড ছয়টি আলাদা ঘর রয়েছে সেখানে। কোনটির মেঝেতে বিছানা পেতে শিক্ষকেরা থাকেন, কোনটিতে শ্রেণি পাঠ দেয়া হয়, আবার কোনটিতে আবাসিক ছাত্রীরা থাকে। অনেকটা রহস্য ঘেরা এই মাদ্রাসায় ঢুকতে ঢুকতে আশ-পাশের সাধারণ মানুষের মাঝে উৎসুক লক্ষ্য করা গেছে। তবে মাদ্রাসাটির বা আহাদ এবং তাদের পরিবারের বিষয়ে সাধারণ মানুষ কথা বকৈলাটি ইউনিয়নে বলতে যেন এক অজানা আতঙ্কে ভুগছেন।
মাদ্রাসাটির পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান কবীর ঢাকাটাইমসকে বলেন, আহাদের গ্রামের বাড়ি উপজেলার কৈলাটি ইউনিয়নের চাড়িয়া গ্রামে। গ্রামটির লাগোয়া কনুড়া গ্রামে ২০০০ সালে প্রায় ৩০০ শতক জমিতে তার বাবা মোসলেম উদ্দিন স্থাপন করেন, কনুড়া-চাড়িয়া আল-জামিয়াতুশ শারইয়া ফাতিমাতুষ যাহরা (রঃ) মহিলা মাদ্রাসা।
শাহজাহান কবীর জানান, চার ভাই দুই বোনের মধ্যে তৃতীয় হচ্ছে আহাদ। এই মাদ্রাসায় আহাদের বাবা মোসলেম উদ্দিন হচ্ছেন অধ্যক্ষ। আহাদের বড় ভাই নিজাম উদ্দিন, মইন উদ্দিন, আহাদের ভাবী আলেমা কামরুন্নাহার, আলেমা মদিনা, আহাদের বোন আলেমা সোমাইয়া ও আহাদের স্ত্রী আলেমা লুৎফা এই মাদ্রায় শিক্ষকতা করেন। আহাদের এক ছোট ভাই একই উপজেলার লেংগুরা মাদ্রাসায় লেখাপড়া করেন।
শাহজাহান কবীর জানান, মাদ্রাসাটিতে ৭১৫ জন ছাত্রী আছে। এর মধ্যে ১০০ জনের মত শিক্ষার্থী আবাসিকে থেকে লেখাপড়া করে। মাসে প্রায় এক লাখ ২০ হাজার টাকা থেকে এক লাখ ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা খরচ হয়।
এই টাকার উৎস জানতে চাইলে শাহজাহান কবীর জানান, ছাত্রীদের বেতন, বিভিন্ন শিল্পপতিদের অনুদান ও এলাকার মানুষের আর্থিক সাহয়্যে চলে প্রতিষ্ঠানটি।
এদিকে ইমামের ওপর হামলার ঘটনায় নেত্রকোণায় তার নিজ এলাকায় মানুষের মাঝে আতঙ্কের পাশাপাশি ক্ষোভও বিরাজ করছে জানালেন উপজেলার কৈলাটি ইউনিয়নের স্থানীয় সাত নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল জলিল। তিনি বলেন, ‘সোমবার রাতে পুলিশ আহাদের স্ত্রী ও তার দুই ভাইকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্যে নিয়ে যাওয়া এবং মঙ্গলবার রাতে ছেড়ে দেয়া, এলাকায় আইন-শৃংখলা বাহিনীর সদস্যদের উপস্থিতি সব কিছু মিলিয়ে এই অজানা এক আতঙ্ক চলছে।’ তিনি বলেন, ‘আমরা এলাকার মানুষ আহাদের দৃষ্টান্তমুলক শাস্থি হোক তা চাই।’
মাদ্রাসাটিতে মৌলানা আফতাব উদ্দিনের স্ত্রীও শিক্ষকতা করেন। তিনি বলেন, ‘ইসলামে অন্য কাউকে হত্যার অনুমোদন দেয়নি। সে যে কোন মতবাদেরই হোক না কেন, যে কোন ধর্মেরই হোক না কেন। আমরা আহাদের এই জঘন্য কাজকে সমর্থন করি না।’ একই কথা বললেন মাদ্রাসাটির অপর শিক্ষক নজরুল ইসলামও।
চাড়িয়া গ্রামের আব্দুর রশিদ বলেন, ‘মোসলেম উদ্দিনের ছেলে আহাদ যে অপকর্ম করেছে তা ক্ষমার যোগ্য নয়। তার শাস্তি হোক আমরা চাই। আহাদসহ ঘটনায় সংশ্লিষ্ট সবার শাস্তি চেয়েছেন এলাকার বাসিন্দা মাহমুদ হাসানও।
নেত্রকোণা ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার খান আবু নাসের জানান, ঘটনার পর পরই মাদ্রাসা শিক্ষক আহাদের দুই ভাই ও তার স্ত্রীকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। মাদ্রাসাটিতে জঙ্গি তৎপরতা চলে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বিষয়টি ময়মনসিংহ পুলিশ দেখছে। আমরা তাদের তথ্যসহ প্রয়োজনীয় সহায়তা দিচ্ছি।তা ছাড়া এই মাদ্রাসাটিকে আমাদের নজরদারিতে রাখা হয়েছে।’
ঢাকাটাইমস/১০মে/প্রতিনিধি/ডব্লিউবি
মন্তব্য করুন