নামে নামে যমে টানল বিল্লালকে

প্রকাশ | ১২ মে ২০১৭, ১৮:১৬

শওকত আলী, চাঁদপুর

‘নামে নামে যমে টানে’। বহুল প্রচলিত প্রবাদটি সত্য হলো চাঁদপুরের কচুয়া উপজেলার শিংআড্ডা গ্রামের যুবক বিল্লাল পাঠানের জীবনে। নিজে কোনো মামলার আসামি না হয়েও এক সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামির নামের সঙ্গে মিল থাকায় তাকে এখন জেল খাটতে হচ্ছে।

এ ঘটনার প্রতিবাদে এবং বিল্লালের মুক্তির দাবিতে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত তার পরিবারের সদস্যরা জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সামনে প্রতীকী অনশন করেন। পরে জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মুজিবুর রহমান ভুঁইয়াসহ অন্য নেতারা ন্যায়বিচার পাওয়ার আশ্বাস দিলে  অনশন ভাঙেন তারা।

জানা যায়, প্রায় ১২ বছর আগে জেলার ফরিদগঞ্জে ডাকাতির প্রস্তুতিকালে অস্ত্রসহ পুলিশের হাতে ধরা পড়া ডাকাত দলের এক সদস্য নিজের নাম বিল্লাল হোসেন মোল্লা, গ্রাম কচুয়ার শিংআড্ডা উল্লেখ করেন। পরে সে পালিয়ে গেলে পুলিশ বিল্লাল হোসেন পাঠানকে  আটক করে। ফরিদগঞ্জ থানার একটি ডাকাতির মামলায় ১০ বছরের সাজাপ্রাপ্ত আসামি হিসেবে তাকে চাঁদপুর কোর্টে চালান দেয় পুলিশ। গত ৮ দিন ধরে চাঁদপুর জেলা কারাগারে আছেন বিল্লাল পাঠান।

আইনজীবীরা জানান, ২০০৪ সালের ৮ ডিসেম্বর ফরিদগঞ্জ উপজেলার বর্ডার বাজারে ডাকাতির প্রস্তুতিকালে পুলিশের হাতে অস্ত্রসহ আটক হয় ছয় ডাকাত। পরে পুলিশ তাদের কারাগারে পাঠায়। তাদের মধ্যে এক ডাকাত পুলিশের কাছে নিজের প্রকৃত নাম-ঠিকানা গোপন করে নিজের পরিচয়- বিল্লাল হোসেন মোল্লা, কচুয়া উপজেলার শিংআড্ডা তার গ্রামের বাড়ি উল্লেখ করে। পুলিশ পরে মামলার চার্জশিট তৈরি করতে গিয়ে দেখে বিল্লাল হোসেন মোল্লা, পিতা আ. জব্বার মোল্লা সাং-শিংআড্ডা, উপজেলা কচুয়া, জেলা চাঁদপুর এমন নাম-ঠিকানা ভুয়া। তখন তাকে ভাসমান অপরাধী হিসেবে চিহ্নিত করে জেল হাজতে রেখে বিচারকার্য পরিচালনার জন্য আদালতের কাছে আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই নূর নবী ভূঁইয়া।

এরই মধ্যে ওই ভুয়া নাম ও ঠিকানা ব্যবহারকারী বিল্লাল হোসেন মোল্লা সাড়ে তিন বছর জেলে থাকার পর উচ্চ আদালত থেকে জামিনে বেরিয়ে যান। এরপর থেকে তিনি লাপাত্তা। তাকে আর খুঁজে পায়নি পুলিশ।

কিন্তু বর্তমানে যে বিল্লাল পাঠান জেল হাজতে রয়েছেন তিনি এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। তাকে তার নামের কারণে গত ৪ মে থেকে জেল হাজতে রয়েছেন। ওই ঘটনার সময় প্রবাসে ছিলেন তিনি। বর্তমানে তিনি কচুয়ায় ব্যবসা করেন। তাকে পুলিশ বিনা অপরাধে জেলে পাঠিয়েছে বলে তার পরিবারের দাবি।

পরিবারের সদস্যদের চাঁদপুর জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মজিবুর রহমান ভুঁইয়া আশ্বাস দিয়েছেন, বিল্লাল পাঠান যাতে ন্যায়বিচার পান সে বিষয়ে তারা উদ্যোগ নেবেন এবং আগামী সপ্তাহে এর সমাধান হবে।

নিরপরাধ বিল্লাল পাঠান দ্রুত কারাগার থেকে মুক্তি পাক এবং প্রকৃত আসামিকে ধরে জেল হাজতে পাঠানো হোক- এমনটাই প্রত্যাশা ভুক্তিভোগীসহ আইনজীবীদের।

(ঢাকাটাইমস/১২মে/মোআ)