মেয়র খোকনের সাফল্যের খতিয়ান-০৬
পাবলিক টয়লেটে সন্তুষ্টি নগরবাসীর
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন ইতোমধ্যে দায়িত্ব গ্রহণের দুই বছর পূর্ণ করেছেন। এই সময়ে তার উল্লেখযোগ্য সাফল্যগুলোর মধ্যে পাবলিক টয়লেট নির্মাণ ও ব্যবস্থাপনা অন্যতম। দুই বছর পূর্তিতে তিনি সাফল্যের যে খাতগুলো উল্লেখ করেছেন এর কোনো কোনোটি নিয়ে আছে বিতর্ক। তবে পাবলিক টয়লেট প্রসঙ্গে সবাই সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের অধীনে ৪৭টি টয়লেট নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এর মধ্যে এখন পর্যন্ত ১১টি টয়লেটের নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়েছে। ১৭টির সংস্কার কার্যক্রম চলমান রয়েছে। বাকিগুলোও পর্যায়ক্রমে হবে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
গত এক বছরে সিটি করপোরেশন, ওয়াসা এবং ওয়াটার এইডের সহযোগিতায় ঢাকায় গড়ে উঠেছে বেশ কিছু অত্যাধুনিক পাবলিক টয়লেট। এগুলোর তুলনা চলে অত্যাধুনিক বাসা কিংবা পাঁচতারকা হোটেলের টয়লেটের সঙ্গে। শুধু উন্নতমানের পাবলিক টয়লেট করেই ক্ষান্ত হয়নি কর্তৃপক্ষ, এগুলোর রক্ষণাবেক্ষণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাও করেছে। নির্মাণের বেশ কয়েক মাস চলে গেলেও পাবলিক টয়লেটগুলোর পরিবেশ এখনো সন্তোষজনক আছে।
রাজধানীর দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের কয়েকটি এলাকায় নতুন গড়ে ওঠা পাবলিক টয়লেটগুলো ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিটি পাবলিক টয়লেটই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন। সেখানে আছে পুরুষ-নারী ও প্রতিবন্ধীদের জন্য আলাদা ব্যবস্থা। টয়লেটের ভেতরে হাত ধোয়া, নিরাপদ পানি সংগ্রহ, ওজু করার ব্যবস্থাও আছে। ব্যবহার করে বের হওয়ার সঙ্গে পরিষ্কার করা হচ্ছে পাবলিক টয়লেট। এর জন্য নির্দিষ্ট আছে পরিচ্ছন্নতা কর্মী।
পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা খুবই সচেতনতার প্রমাণ দিচ্ছেন। পাবলিক টয়লেটগুলো ব্যবহারকারীদের ব্যবস্থাপনা নিয়ে নেই কোনো অভিযোগ। টয়লেটগুলোতে সার্বক্ষণিক বিদ্যুতের ব্যবস্থা রয়েছে। বিদ্যুৎ চলে গেলে আছে বিকল্প সোলার ব্যবস্থা। প্রতিটি টয়লেটে আছে গোসলের সুব্যবস্থাও। এমনকি ব্যবহারকারীদের মালামাল রাখার জন্য রয়েছে লকারের ব্যবস্থা। প্রতিটি টয়লেটের নিরাপত্তার জন্য সামনে বসানো হয়েছে সিসি ক্যামেরা।
পুরান পল্টন পাবলিক টয়লেট ব্যবহার করতে এসেছেন রিকশাচালক আবদুল মতিন। ব্যবস্থাপনা দেখে তিনি দারুণ খুশি। ঢাকাটাইমসকে বললেন, ‘খুবই সুবিধা, উন্নতমানের জায়গা। আমি রিকশা চালাই, সকালে বাইর হই। গোসল করার সময় পাই না। এই ব্যবস্থা হওয়ায় আমি বেশ খুশি। মালামাল রাখতেও কোনো রিস্ক নেই।’ তিনি একটু রসিকতা করে হেসে বলেন, ‘যদি টাকাটা না নিত ভালোই হইত।’
পুরান পল্টন ও পান্থকুঞ্জ পাবলিক টয়লেটের তদারককারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রতিদিন গড়ে তিনশ বা এরচেয়ে বেশি লোক তাদের পাবলিক টয়লেট ব্যবহার করেন। ব্যবহারকারীদের মধ্যে বেশিরভাগই পুরুষ বলে জানান তদারককারীরা।
পাবলিক টয়লেটে আসা নারীর সংখ্যা কম। এ সম্পর্কে পান্থকুঞ্জ পাবলিক টয়লেট সুপারভাইজার সুমি ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘কোনোদিন দশজন, কোনোদিন সাতজন, তবে পাঁচের নিচে কখনো হয়নি।’
নারীদের সংখ্যা কম কেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এখানে যে নারীরা টয়লেট ব্যবহার করেন তাদের বেশিরভাগই গার্মেন্টসে কাজ করেন। পাঁচ টাকা তাদের জন্য বেশি হয়ে যায়। তাই হয়তো নারীরা কম আসে। আবার অনেকে লজ্জা পায় পাবলিক টয়লেটে যেতে।’ তবে অনেক নারী জানেই না এত সুন্দর ব্যবস্থাপনা আছে, এজন্যও নারীদের সংখ্যা কম বলে জানা গেছে।
রাজধানীর পাবলিক টয়লেটগুলো ইজারা দিয়েছে সিটি করপোরেশন। এসব পাবলিক টয়লেট পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বেসরকারি সংস্থা ওয়াটার এইড নিয়োগ করেছে পেশাদার ক্লিনিং প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের। চুক্তি অনুযায়ী সামগ্রিক ব্যবস্থাপনার জন্য ঢাকা সিটি করপোরেশন, ঢাকা ওয়াসা, ওয়াটার এইডের প্রতিনিধিসহ এলাকার নির্বাচিত প্রতিনিধি ও গ্রহণযোগ্য সমাজসেবক ব্যক্তিদের মাধ্যমে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি নিয়মিত টয়লেটের ব্যবস্থাপনা তদারকি করে।
টয়েলেটের নামে খোলা ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা হয় ব্যবহারকারীদের কাছ থেকে প্রাপ্ত অর্থ। সেই অর্থ কমিটির মাধ্যমে টয়লেট পরিচালনা, কর্মীদের বেতন, ইউটিলিটির ভাড়া পরিশোধ ও মেরামতকাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। পাবলিকের কাছ থেকে পাওয়া অর্থেই ব্যবস্থাপনা করা হচ্ছে টয়লেটগুলো। এর জন্য সরকারকে কোনো ভর্তুকি দিতে হয় না।
পাবলিক টয়লেটে প্রস্রাব ও পায়খানার জন্য জনপ্রতি পাঁচ টাকা দিতে হয়। আর গোসলের জন্য রাখা হয় দশ টাকা। টাকা নেয়া হয় রশিদের মাধ্যমে। তবে প্রতিবন্ধীরা বিনামূল্যে টয়লেট ব্যবহার করতে পারেন।
দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের জনপ্রশাসন কর্মকর্তা উত্তম কুমার ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘পাবলিক টয়লেটগুলোর অবস্থা একটু ভালো বলা ঠিক হবে না, বেশ ভালো বলতে হবে। আমরা সবসময় তদারকি করি এগুলোর, আপনাকে অবশ্যই ভালো কি খারাপ সেটা দেখার জন্য যেতে হবে মাঠে। অনেক সাংবাদিক আছেন যারা মনগড়া কথা চালিয়ে দেন সরেজমিনে না গিয়ে।’
২০১৬ সালে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন অত্যাধুনিক পাবলিক টয়লেট করার উদ্যোগ নেয়। পর্যায়ক্রমে নগরীর বিভিন্ন স্থানে এই পাবলিক টয়লেটগুলোর উদ্বোধন করেন ঢাকার দুই মেয়র সাঈদ খোকন ও আনিসুল হক।
ঢাকাটাইমস/১৩মে/এনআই/জেবি
মন্তব্য করুন